৯৯৯-এ ৬৫ শতাংশ ফোন কলই ‘অপ্রয়োজনীয় ও ভুয়া’
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৮, ১৫:৩১ | আপডেট : ১৭ জুলাই ২০১৮, ১৭:৪৯
ঢাকা, ১৭ জুলাই, এবিনিউজ : ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আইনজীবী সুরাইয়া জান্নাত সুমি। বাড়ির সামনে রাত দেড়টা পর্যন্ত ভয়ানক জোরে হৈ হুল্লোড় আর গান বাজছিল। সে সময় তার বোন ও নিজের দুজনেরই পরীক্ষা চলছে। কান ফাটা হিন্দি গানে পড়াশোনা চুলোয় উঠেছে। সুরাইয়া জান্নাত সমস্যা সমাধানে জরুরি সেবা নম্বরের সহায়তা নিয়েছিলেন।
তিনি বলছেন, বাসার ঠিক উল্টো পাশে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। রাত দেড়টা পর্যন্ত অনেক জোরে হিন্দি গান বাজছে। আমার বোনের পরীক্ষা চলে। আমারও তখন হাইকোর্টের পরীক্ষা চলে। তার পর আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর ওরা আমাকে মোহাম্মদপুর থানার সঙ্গে কানেক্ট করে দেয়। সব মিলিয়ে ১০ মিনিট লেগেছিল। ওরা এসে কথাবার্তা বলে গান বন্ধ করে দিয়ে যায়।
এ সমস্যাটি অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে।
ঈদের সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৌহিদুজ্জামান তন্ময় বলেন, তিনিও মোটামুটি ৩০ মিনিটের মাথায় সহযোগিতা পেয়েছেন।
জরুরি সেবা নম্বরের কাজ এমনই হওয়ার কথা।
কিন্তু এ নম্বরের দায়িত্বে থাকা পুলিশের টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়ার পর থেকে তাদের কাছে এ পর্যন্ত মোট ৩৭ লাখের মতো কল এসেছে। যার মধ্যে ২৪ লাখই অপ্রয়োজনীয় কল, ভুয়া কল বা অনেক ক্ষেত্রে কৌতূহলী হয়ে ফোন করেছেন অনেকে।
১৮ লাখ ফোন কলই ছিল যেখানে কলার কোনো কথাই বলেননি। শুধু পুলিশের কণ্ঠ শুনে ফোন কেটে দিয়েছেন। ৬ লাখ ছিল আজেআজে কথাবার্তা।
অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘অনেকেই কল করছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে তখন কিছু বলছে না। আর ক্র্যাংক কলকে আমি বলছি অবাঞ্ছিত কল। এ কলটি করে তারা আসলে কোনো সাহায্যের বিষয়ে বা প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে কথা বলে না। এমন কলার নাম্বারটি ব্যস্ত রাখে এবং তাতে প্রকৃত অর্থে যার সাহায্য দরকার সে বঞ্চিত হয়।
বর্তমানে এই কল সেন্টারে ৭০ জন কাজ করেন। তবে এটি বাড়িয়ে ১০০ জন করার চিন্তা চলছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী এমন কলের মোটে ৩৭ হাজারের ক্ষেত্রে তারা সেবা দিয়েছেন। অর্থাৎ ১৩ লাখের মতো বিশালসংখ্যক কলার কোনো সাহায্য পাননি।
আর বিপদগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছে ৩০ মিনিট।
সময়টি জরুরি বিভাগের রেসপন্স টাইম হিসেবে অনেক বেশি। আর ততক্ষণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।
ঘটনাস্থলের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম এবং গাড়ি ও জনবল সংকটই এর মূল কারণ বলছেন অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইকবাল হাবিব।
তিনি বলেন, এ সময় ১০ মিনিটে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা পুলিশের গাড়িগুলোয় জিপিআরএস বসানো হবে। কোনো গাড়িটি ঘটনাস্থলের সবচাইতে কাছে আছে সেটিকে খুঁজে তাকে সরাসরি ঘটনাস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাই। তবে সে জন্যে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে জনগণকে।
ডিসেম্বরে তা চালু করার চেষ্টা চলছে। আর যারা ঘন ঘন ক্র্যাংক কল বা ব্ল্যাংক কল করছেন তাদের শাস্তি ও জরিমানার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
কিন্তু যে ১৩ লাখ কলার সাহায্য পাননি তার কারণ কী? এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাত লাখ কল এসেছে নানা ধরনের প্রশ্ন নিয়ে যারা মূলত মোবাইল অপারেটরদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন, যা আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে সবাই সেবা পেয়েছে। সবার কল আমরা ধরেছি।’
খবর বিবিসি বাংলা
এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ