ময়না তদন্তে ঝুলছে চুড়িহাট্টার তদন্ত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:২৩

বছর পেরিয়ে গেছে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার। কিন্তু ভয়াবহ এ ঘটনায় নিহতদের ময়না তদন্ত শেষ করতে পারেনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। সব লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দফায় দফায় তারিখ দিলেও তা দাখিল হচ্ছে না। তাই এগোচ্ছে না তদন্তের কাজ।

ময়না তদন্ত শেষ না হওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক কবীর হোসেনও হতাশ। তিনি ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। এছাড়া আজ পর্যন্ত মামলার বাদী ও সাক্ষীদের জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কবীর হোসেন বলেন, লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন এখনও শেষ হয়নি। নিয়মিত মামলা দায়েরের পর আগের করা অপমৃত্যু মামলা শেষ হয়ে গেছে। আমি এখনও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি বলে তদন্ত কাজও শেষ করতে পারছি না। হয়তো খুব তাড়াতাড়িই ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেয়ে যাব।

আদালত, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা গেছে, আলোচিত এ অগ্নিকাণ্ডের নিয়মিত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছানো হয়েছে নয় বার। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি।

তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে অনেকটাই হতাশ মামলার বাদী মো. আসিফ। চুড়িহাট্টার আগুনে নিহত মো. জুম্মন (৫২) তার বাবা। তিনি বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ‘ক্যাটসআই’ এর শোরুমের বিক্রয়কর্মী।

মামলার ব্যাপারে আসিফের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মামলার তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে আমার কাছে কোনোই তথ্য নেই। আমার সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তারাও যোগাযোগ করছেন না।

মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কবীর হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে অবহেলার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার তালিকায় আরও ৫/৬ জনের নাম এসেছে। কিন্তু তাদের ঠিকানা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছি। অনুসন্ধানে পাওয়া ঠিকানায় কাউকে পাইনি। আশপাশের কেউ ঠিকানা বলতেও পারছে না।

তিনি বলেন, আমরা খুব তাড়াতাড়িই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করছি। অবশ্য আদালতও আমার কাছে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাননি, কোনো তাগিদও দেননি।

ময়না তদন্তের ধীরগতির ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, আগুনে পোড়া লাশের ডিএনএ রিপোর্ট গত সপ্তাহে আমরা হাতে পেয়েছি। তাছাড়া আমাদের এক চিকিৎসক বদলি হওয়ার কারণে একটু দেরি হয়েছে।

তিনি বলেন, আশা করছি আজ ৬৭টি লাশের মধ্যে অধিকাংশ ময়না তদন্ত রিপোর্ট পুলিশের কাছে দিতে পারব। এ ছাড়া যে চিকিৎসক বদলি হয়েছেন তিনি এলেই বাকি রিপোর্টগুলো তার সই নিয়ে দেওয়া হবে।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের পাশের একটি চারতলা ভবনে লাগা আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভবনটিতে রাসায়নিক আর প্লাস্টিক-পারফিউমের গুদাম থাকায় মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান আরও বেড়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট। ১৪ ঘণ্টা চেষ্টায় অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে রাতেই ৬৭ জনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে আরও চারজনের মৃত্যু হয়। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ জনে। আবার এদের মধ্যে চার জনের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই নিয়ে যান তাদের স্বজনরা। অগ্নিকাণ্ডের পর দিন অবহেলার কারণে সৃষ্ট আগুনে মৃত্যু ও ক্ষতির অভিযোগ এনে চকবাজার মডেল থানায় মামলা করেন বাবা হারানো মো. আসিফ। মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী এ মামলার আসামি বাড়ির মালিকের দুই ছেলে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাত পরিচয় ১০-১২ জন।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল এজাহারভুক্ত আসামি দুই ভাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা ওই বছরের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান। এর পর রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এ জামিনের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ান বিচারপতি আবদুল হাফিজ এবং মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

চুড়িহাট্টার বর্তমান অবস্থা

চুড়িহাট্টায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনটির দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে৷ পুরো ভবনটি অনেকটাই বিধ্বস্ত। জানালার রড বেঁকে গেছে। ভবনটি এখনও পরিত্যক্ত৷ ভবনটি পরিত্যক্ত হলেও নিচে বসেছে কয়েকটি অস্থায়ী দোকান৷ ভবন মালিক নিচের কয়েকটি দোকান ঠিক করে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বাধায় মালিকের সেই বাসনা পূরণ হয়নি৷

কেমিকেল আতঙ্কে স্থানীয়রা

আগুনের ভয়াবহতার কারণ হিসেবে কেমিকেল ও রাসায়নিক পদার্থকেই দায়ী করেছেন স্থানীয়রা এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। সেই ঘটনার স্মৃতি রোমন্থন করতে এখনও আঁতকে উঠেন স্থানীয়রা।

মামলার অভিযোগপত্রেও রাসায়নিক দ্রব্যকে দায়ী করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে তাদের চারতলা বাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ রাখতেন। মানুষের জীবনের ঝুঁকি জেনেও অবৈধভাবে রাসায়নিকের গুদাম করার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে তারা অতিরিক্ত অর্থের লোভে বাসা ভাড়া দেন তারা।

স্থানীয় পান বিক্রেতা রিয়াজুদ্দিন বলেন, এখানে অধিকাংশ গুদামেই রাসায়নিক দ্রব্য থাকে। আগুনের ঘটনার পরে প্রশাসন বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও এখন আর কেউ আসে না।

ষাটোর্ধ্ব আফসার আলী বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার আর কেমিকেল আতঙ্কে আমাদের দিন কাটে। এগুলো যেন মৃত্যুপুরী। আমরা দ্রুত এসব অপসারণে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ