আজকের শিরোনাম :

গ্রেফতার-উদ্ধারে মাদক দমন সম্ভব নয় : র‌্যাব ডিজি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৮

মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধার করেই মাদককে দমন সম্ভব নয়। যতদিন ডিমান্ড থাকবে ততদিন কোনো না কোনোভাবে সাপ্লাই আসবেই বলে মন্তব্য করেছেন র‌্যাবের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। 

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে মাদকবিরোধী সচেতনতার লক্ষ্যে আয়োজিত ‘বিচ ম্যারাথন’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।‘মাদকের বিরুদ্ধে দৌড়াও বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০ কিলোমিটার ব্যাপী এ বিচ ম্যারাথনে অংশ নিচ্ছেন পটুয়াখালী ও বরগুনার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার শিক্ষার্থী।

এসময় র‌্যাব ডিজি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধার করেই মাদককে দমন করা যাবে না। যতদিন সমাজে ডিমান্ড থাকবে ততদিন পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে সাপ্লাই আসবেই। সাপ্লাই বন্ধ করতে হলে ডিমান্ড বন্ধ করতে হবে। ডিমান্ড বন্ধ হলে অটোমেটিক্যালি সাপ্লাই কমে আসবে। সেইসঙ্গে যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকে, তাহলে আমি মনে করি, মাদক নির্মূল হতে বাধ্য।

তিনি বলেন, দুই বছর আগে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, অনেকে ভাবতো মাদক থেকে আমাদের পরিত্রাণ নেই। তখন এমন প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হতো ৫০ টাকা দিয়েও ইয়াবা কিনতে পাওয়া যেত। যত্রতত্র মাদক বিক্রি হতো। আর মাদক তখন দ্রুত বড়লোক হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল।

গত বছর র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যখন নির্দেশ দিলেন, ওইদিন রাত থেকেই আমরা অভিযান শুরু করি। আজকে দেশবাসীর সহযোগিতায় মাদককে দুষ্প্রাপ্য করেছি আমরা।

কক্সবাজার ইয়াবা প্রবেশের সিংহদ্বার মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আমরা গতবছর সেখানে একটি অ্যাডহক ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১৫ প্রতিষ্ঠা করি। এ বছর এ ব্যাটালিয়নের সরকারি অনুমোদন পাওয়া গেছে। এ এক বছরে কক্সবাজার র‌্যাব ব্যাটালিয়ন প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এসময় গুলি বিনিময়ে নিহত হয়েছেন ৫ থেকে ৬ জন।

রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে বহুমুখী নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের একটা ছোট অংশ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। একশ্রেণির রোহিঙ্গা রয়েছে তারা এত ডেসপারেট যে জিরো লাইন অতিক্রম করে মাইন উপেক্ষা করে মাদক নিয়ে আসে।

আমরা শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের ধরেই ক্ষান্ত নই, যারা অর্থায়ন করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা এপার-ওপার করে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিছু হুন্ডি ব্যবসায়ী বিদেশে বসে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি, ওইসব দেশ থেকে তাদের ধরার চেষ্টা করছি। তারা বাংলাদেশে কোনসময় পা দিলে তাদের নিষ্কৃতি নেই।

বাংলদেশে সঠিক মাদকাসক্তের সংখ্যা নেই। তবে এনজিওর হিসেব মতে ৬০ থেকে ৮০ লাখ লোক মাদকাসক্ত। প্রতিদিনই এ মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সে কারণে প্রচুর মাদকাসক্তের পুনর্বাসন কেন্দ্র দরকার।

র‌্যাব প্রধান বলেন, আমি মনে করি এ দেশকে মাদক নিশ্চিহ্ন করা না গেলেও, মাদককে পুরোপুরি দুষ্প্রাপ্য করা সম্ভব। কোন সীমান্তকেই পরিপূর্ণ সিল করা যায় না, নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরাও সাফল্যজনকভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবো বলে মনে করি।

সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাহিনীর মধ্যে কেউ যেন কোনো ধরনের মাদক সেবন না করে এবং কোনো ধরনের মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না হয়। মাদককে আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। তবে এতে কোনক্রমেই সন্তুষ্ট নই, আত্মতুষ্ট নই। আমরা অনেক দূর এসেছি, যেতে হবে বহুদূর।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, যখনই আমরা কক্সবাজারে একটা শক্ত অবস্থান নিয়েছি, তখনই কুয়াকাটা-বরিশাল-খুলনা অঞ্চল দিয়ে ইয়াবা প্রবেশের চেষ্টা চলছে। এমনকি মিয়ানমার থেকে ভারতের মিজোরাম দিয়ে প্রবেশ করিয়ে আসাম-মেঘালয় হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা প্রবেশের চেষ্টা করা হয়েছে। ওখানেও ব্যবসায়ীদের আমরা গ্রেফতার করেছি। মাদক ব্যবসায়ীরা যতই অপচেষ্টা করুক আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের সক্ষমতা দিয়ে আমরা তাদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ