আজকের শিরোনাম :

ভারতের এক নম্বর বন্ধু বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  পিটিআই

২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতের এক নম্বর বন্ধু বাংলাদেশ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে দেশটিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তাতে প্রতিবেশিদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

আজ রোববার ভারতের সরকারি বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তিনি।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে চলমান বিক্ষোভের মাঝে তিনি আশাপ্রকাশ করে বলেছিলেন, পরিস্থিতি শান্ত হবে এবং প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশ এটার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ক্যাব ( বর্তমানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) এবং এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত সরকার আমাদের বারবার আশ্বস্ত করেছে যে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। তারা আইনি এবং অন্যান্য কারণে এটির বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করে বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই এটি বাংলাদেশের ক্ষতি করবে না। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন আব্দুল মোমেন।

বাংলাদেশের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ভারতের ১ নম্বর বন্ধু। সুতরাং ভারতে যদি কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তাহলে প্রতিবেশিদের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন এটি অনেক দেশের ওপর প্রভাব ফেলেছে। কারণ আমরা গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডে বসবাস করছি। যে কারণে আমরা আশঙ্কা করছি যে, ভারতে যদি কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তাহলে এটি প্রতিবেশিদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

‘এটা উদ্বেগজনক। আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি শান্ত হবে এবং ভারত এটা থেকে মুক্ত হবে...এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা আমাদের কোনো বিষয় নয়। এটা তাদের ফয়সালা করা উচিত।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, সম্প্রতি আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের তালিকা দিতে নয়াদিল্লির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। যদি কোনো বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করে থাকেন, তাহলে তাদের প্রত্যাবাসন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গত ১২ ডিসেম্বর ভারত সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বিজয় দিবসের সঙ্গে ব্যস্ত সফর সূচি মিলে যাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। তবে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পার্লামেন্টে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল পাসের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি সফর বাতিল করেছেন।

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর করা মন্তব্যকে ‘মিথ্যা’ অভিহিত করার পরদিন নয়াদিল্লি সফর বাতিল করেন আব্দুল মোমেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সূচি ব্যস্ততার কারণে সফর বাতিলের কথা ভারতকে জানিয়েছেন আব্দুল মোমেন। নয়াদিল্লি আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সামরিক শাসনের সময় ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়েছে এবং ‘বর্তমান সরকারের সময়ে নয়’ বলে অমিত শাহ মন্তব্য করেছেন।

চার মাস আগে আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা চালু করে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। আসামে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের শনাক্ত করতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা বাস্তবায়ন করা হয়। গত ৩০ আগস্ট আসামের এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, দেশটিতে নাগরিকত্বের জন্য ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ আবেদন করলেও চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় প্রায় ১৯ লাখ; যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি।গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এনআরসি নিয়ে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার গত ১১ ডিসেম্বর দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাসের পর এই বিক্ষোভের শুরু হয়। ২০১৪ সালে দেশটিতে ক্ষমতায় আসার পর এমন তীব্র বিক্ষোভ এবং বিরোধিতার মুখে প্রথমবারের মতো পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পার্সি এবং জৈন সম্প্রদায়ের সদস্যরা সে দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। তবে এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি।

সমালোচকরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভারতে বিভাজন তৈরি করতে এ নতুন নাগরিকত্ব আইন তৈরি করেছে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

বিতর্কিত এই আইনে মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কিছু না বলায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তবে বিক্ষোভের দাবানল বেশি ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, নাগরিকত্বের সুযোগ থেকে মুসলিমদের বাদ দেয়ায় এই আইন অসাংবিধানিক এবং বিভাজনমূলক। শনিবার পর্যন্ত ভারতের চলমান এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশেই ১৬ জনের প্রাণ গেছে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ