আজকের শিরোনাম :

রাজাকারের তালিকা পাকিস্তানিরা করেছে: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:১৫

রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের পর থেকে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রাজাকারের তালিকায় গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধাদের নাম যুক্ত হওয়ায় গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, আমরা নিজেরা কোনো তালিকা প্রস্তুত করিনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা যে তালিকা করেছে, আমরা শুধু তা প্রকাশ করেছি। সেখানে কার নাম আছে, আর কার নাম নেই সেটা আমরা বলতে পারব না।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে গণমাধ্যমে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ দিকে, রাজাকারের তালিকায় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় তাদের স্বজন ও সহযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হওয়ার পরও রাজাকারের তালিকাভুক্ত হওয়া চরম অসম্মান বলে মনে করেন তারা। গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে এই তালিকাভুক্ত হলেন, সেই জবাবও সরকারের কাছে চেয়েছেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, একই নামে অনেক মানুষ থাকতে পারে। যারা চিহ্নিত মুক্তিযোদ্ধা তারা কেন তালিকাভুক্ত হবেন? সরকারি নথিতে যাদের তালিকা পাওয়া গেছে তাদের নামই বলা হয়েছে। নতুন করে কাউকে নথিভুক্ত করা হয়নি। একই নাম দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মোজাম্মেল হক বলেন, যদি মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় এসে থাকে, তবে আমরা সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখব।

উল্লেখ্য, রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনীর ১০ হাজার ৭৮৯ সদস্যের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই করে প্রথম ধাপে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী তার বাবা ‘তপন কুমার চক্রবর্তী’র নাম নিয়ে এমন অভিযোগ তুলেছেন।

সোমবার বাসদ নেতা ডা. মনীষা চক্রবর্তী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা (ক্রমিক নং ১১২, পৃষ্ঠা ৪১১৩)। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৫ নম্বরে আছেন।

আমার ঠাকুরদা অ্যাডভোকেট সুধির কুমার চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

এছাড়া রাজশাহী এলাকার রাজাকারের তালিকায় আছেন তিনজন আইনজীবী—অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ ও অ্যাডভোকেট মহসীন। এই নাম তিনটি দেখে ওই এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আওয়ামী লীগের নেতা, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কী করে তালিকায় এলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বরগুনার পাথরঘাটার হৃদি রুবি নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, তার পরিবারের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবল হকের নাম রাজাকারের তালিকায় এসেছে।

রাজাকারের তালিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, তালিকা দেখে আমি স্তম্ভিত, বিস্মিত। কীভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে? রাজশাহীতে গোলাম আরিফ নামে আর কোনো অ্যাডভোকেট আছে কি? অ্যাডভোকেট মহসীন, অ্যাডভোকেট সালামের নাম দেখেও আমি স্তম্ভিত, বিস্মিত। যদিও এই তিনটি নামের পাশে বাবার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

মনীষা চক্রবর্তী বলেন, তালিকায় আমার বাবার নামই এসেছে। কারণ, তার বাবার নাম উল্লেখ আছে এবং হুবহু বাবার নামও মিলে গেছে—এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে তিনি বলেন, আজ আমার পার্টি অফিসের পাশ দিয়ে মিছিল বের হয়েছে। ওই মিছিলে ‘একাত্তরের রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ স্লোগান দেওয়া হয়। যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই মন্ত্রণালয় রাজাকারের স্বীকৃতিও দিল তাকে। তিনি দাবি জানিয়েছেন, এই গেজেট বাতিলের জন্য।

মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, একই নামে তো অনেক মানুষ থাকতে পারে। আমরা নতুন কোনো তালিকা করিনি। সরকারি নথিতে যাদের নাম আছে তাদেরই নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। আর একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসবে কেন, এটা হতে পারে না। আর যদি আসেও সেটা পাক বাহিনীর ভুল।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. এম হাসান বলেন, কোনো হিন্দু পরিবার একাত্তরে রাজাকার ছিল—এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মনীষার পরিবার সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি তালিকা তৈরির ক্ষেত্র বিলম্বিত ও বিতর্কিত করবে। যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে স্বীকার করে তা ঠিক করে নিন।

প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এই তালিকা বাতিলের দাবি তুলেছেন।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ