আজকের শিরোনাম :

লবণের গুজবে লঙ্কাকাণ্ড : সারাদেশে ব্যাপক ধর-পাকড় জরিমানা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৫

পেঁয়াজের পর এবার শুরু হয়েছে লবণ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড। লবণ সংকটের কারণে শিগগিরই মূল্যবৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে পড়ায় রীতিমতো ভিড় লেগে গেছে দোকানগুলোতে। সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। কেউ কেউ মজুদ করছেন, কেউবা নিচ্ছেন বাড়তি দাম। এসব অনিয়ম ঠেকাতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। চলছে ব্যাপক ধর-পাকড় ও জরিমানা।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরের সমন্বয়ে থাকছে একটি প্রতিবেদন।

সাতক্ষীরা
সরকারের আদেশ অমান্য করে লবণের কৃত্রিম সংকট ও গুজব সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধির দায়ে সাতক্ষীরায় পাঁচ ব্যবসায়ীকে এক মাস করে জেল এবং সাত জনকে মোট ২৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে শহরের পুরনো সাতক্ষীরা, সুলতানপুর বড়বাজার, মিল বাজার ও সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর বাজার থেকে তাদের আটক করে এ দণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী।

সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর উমরা পাড়া এলাকার ইমাম হোসেন, মেহেদি হাসান, ইয়াছিন মোড়ল, পুরনো সাতক্ষীরা এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান ও মিজানুর রহমানকে এক মাস করে বিনাশ্রম করাদণ্ড ও অন্য সাতজনকে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

যশোর
গুজবের জেরে যশোরে বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে শহরের দুটি প্রতিষ্ঠানকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের পেশকার শেখ জালাল উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রাতে শহরের জেল রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান। বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় ভাই ভাই স্টোরের মালিককে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া শহরের পুরাতন কসবা চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজারের সোহরাবের দোকানে অভিযান চালানো হয়। সেখানে লবণের অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মেহেরপুর
অধিক লাভে লবণ বিক্রির অভিযোগে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আমতৈল বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মজিবুর রহমানকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান। হেমায়েতপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এএসআই রবিউল ইসলাম তাকে আটক করে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করলে তাকে এ অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়া গাংনী থানা পুলিশ জালশুকা গ্রামে অভিযান চালিয়ে পাচারের সময় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমানের ছেলে রাশেদুজ্জামানকে ১৩শ’ কেজি লবণসহ আটক করেছে। কসবা ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই শাকিল আহমেদ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে থানায় নেন।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেহেরপুরে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। জেলা প্রশাসন ও মেহেরপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য জনসাধারণকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এছাড়া, কোনো ব্যবসায়ী কারসাজি করে লবণের দাম বেশি নেওয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি।

গুজব রোধে বুধবার থেকে শহর-গ্রামের হাট-বাজরসহ বিভিন্ন স্থানে মোবাইল টিম থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

পিরোজপুর
পিরোজপুরে লবণের দাম বেশি নেওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১০ ব্যবসায়ীকে আটক করেছে থানা পুলিশ। এছাড়া ১২ ব্যবসায়ীকে অন্তত ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর লবণ কিনতে গিয়ে জেলার নাজিরপুরে  মারামারিতে আহত হয়েছেন অন্তত দুইজন।

জানা যায়, জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলায় তিন ব্যবসায়ীকে ৩৫ হাজার টাকা, পিরোজপুর সদর উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার টাকা ও কাউখালী উপজেলায় আট ব্যবসায়ীকে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়া, বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে জেলার কাউখালী উপজেলায় মুজিবুর রহমান, কামরুল ইসলাম, অসিম কুমার, সাইদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, সানোয়ার, রিয়াজুল ইসলাম ও মিজানুর রহমানকে আটক করে পযুলিশ। এর আগে একই দিন সন্ধ্যায় জেলার নাজিরপুর থানা পুলিশ দেবাশিষ মণ্ডল (৩০) ও সদর উপজেলায় হেমায়েত উদ্দিনকে (৭০) আটক করা হয়। 

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বাদল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লালমনিরহাট
গুজব ছড়িয়ে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে লালমনিরহাটে লবণের ডিলারসহ সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে এ আদেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়শ্রী রাণী রায়।

জানা যায়, লবণের ডিলার গোশালা বাজারের সোনারগাঁ স্টোরের মালিক গোফরান আলী (৬০), তার দুই ম্যানেজার লুৎফর রহমান (৪২) ও ইয়াকুব আলী (৩০) প্রত্যেককে এক বছর, সদর উপজেলার কুলাঘাট বাজারের বিনয় কৃষ্ণকে (৩২) ছয় মাস এবং একই এলাকার আজাহারুল ইসলাম (৬৫), ওবায়দুল ইসলাম (৪০) ও খায়রুল ইসলামকে (৩৩) সাত দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা, সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তাসহ সবস্তরের সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিরা বিকেল থেকে লবণ সংকটের গুজবরোধে মাঠে নামেন। তাদের তৎপরতায় রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে অনেকটাই স্বস্তি ফিরে আসে লবণ বাজারে। 

নওগাঁ
নওগাঁয় চড়া মূল্যে লবণ বিক্রি ও অবৈধ মজুদের দায়ে নয় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসন।

জানা যায়, দিনভর জেলাজুড়ে ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোট ২১টি মামলা দায়ের হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ২৭ বস্তা লবণ। আর জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
এসময় এক ব্যবসায়ীকে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।

বগুড়া
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল থেকে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে সদর থানায় ১৭ জনসহ জেলায় মোট ৪৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর থেকেই লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজবে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারের দোকানগুলোতে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে লবণ বিক্রি করেছেন।
এরপর, গুজব মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে জেলাজুড়ে মাইকিং করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিকাল থেকেই বিভিন্ন হাট-বাজারে অভিযানে নামে পুলিশের একাধিক টিম। এসময় বাজার মূল্য থেকে বেশি দামে লবণ বিক্রির সময় ৪৪ জন বিক্রেতাকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

ঝালকাঠি
ঝালকাঠির রাজাপুরে অতিরিক্ত দামে লবল বিক্রির দায়ে চারটি দোকানে মোট ২৬ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার সদরের বাইপাসমোড়, বাগড়ি বাজার, পাকাপুল, গালুয়া বাজার ও মীরের হাট বাজারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহাগ হাওলাদার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ দণ্ড দেন।

জানা যায়, দাম বাড়বে এমন গুজবে গোটা উপজেলায় দোকানে দোকানে লবণ ক্রেতাদের ভিড় জমে যায়। এসময় অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম লবণের সংকট তৈরি করে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন জনসচেতনতামূলক প্রচারসহ বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চারটি দোকানে ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করে।

এসময় উপজেলার গালুয়া বাজারের মো. লাল মিয়াকে ১০ হাজার, মো. হারিচ মিয়াকে ১০ হাজার, পাকাপুলের মো. আলম ফরাজীকে পাঁচ হাজার ও সদরের বাইপাস মোড়ের মো. নুরনবীকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ফেনী
ফেনীর সোনাগাজীতে গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মঙ্গলবার (১৯নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অজিত দেব বখতারমুন্সী বাজারে অভিযান চালিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

জানা যায়, ‘লবণের কেজি ২০০ টাকা হবে’ হঠাৎ করেই এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে লবণ কিনতে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। মুহূর্তের মধ্যে ২০ টাকার লবণ ৪০ থেকে ৮০ টাকা, কোথাও কোথাও ১০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। খবর পয়ে ইউএনও অজিত দেব বখতারমুন্সী বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের নিতাই চন্দ্র সেন নামে এক খুচরা ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে একটি দোকানে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জানা যায়, লবণ সংকট গুজব ছড়িয়ে পড়লে ক্রেতাদের ভিড় জমে যায় দোকানগুলোতে। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরাও অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা শুরু করেন। ক্রেতাদের দাবি, বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে লবণ।

খবর পেয়ে মাঠে নামেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উজ্জল হোসেন। তারা পুলিশ নিয়ে উপজেলার প্রতিটি বাজারে টহল দেন। একপর্যায়ে উপজেলার কামরানীরচর বাজারে জাকির স্টোরে বেশি দামে লবণ বিক্রির প্রমাণ পেয়ে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রাজশাহী
রাজশাহীতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়তি দামে লবণ বিক্রির অপরাধে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড ও মোট ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

এদিন বিকেল থেকেই লবণ নিয়ে গুজব রোধে মাঠে নামে জেলা প্রশাসন।

রাজশাহী শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু আসলাম। অপরদিকে রাজশাহী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) লবণ সংকটের গুজব প্রতিরোধে মাঠে নামেন।

এসময় অবৈধভাবে লবণ গুদামজাত ও অতিরিক্ত লবণ কিনে কৃত্রিম সংকট তৈরির দায়ে আটজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং মোট ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া, নগরীর সাহেব বাজার এলাকা থেকে দুইজনকে আটক করা হয়। পরে জরিমানা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অভিযান পরিচালনাকালে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু আসলাম জানান, বাজারে লবণের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই। বরং চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত রয়েছে। এসময় তিনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লবণ না কেনার পরামর্শ দেন ও কোথাও দাম বেশি চাইলে সরাসরি জেলা প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ করেন। প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দেওয়ার পরামর্শ দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

দিনাজপুর
বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরে নতুন বাজার ও পুরনো বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আট ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. শাহনাজ মিথুন মুন্নী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান পৃথক দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণের পাইকারি বিক্রেতা দু’টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ দোকান বন্ধ করে মালিক ও ম্যানেজাররা পালিয়ে যান বলে জানা গেছে।

গুজব রোধে পার্বতীপুর পৌর কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে দেশে পর্যাপ্ত লবণের মজুদ রয়েছে বলে জনসাধারণকে জানাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লবণ কেনা ও বেশি দামে বিক্রির দায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ মোট ১২ জনকে ৪৪ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পৌর এলাকার তহাবাজার, পুরাতন বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অভিযান পরিচালনা করে। 

অভিযানে ক্রেতা মো. ফারুক আহমেদকে তিন হাজার টাকা, মতিউর রহমান বাবুকে তিন হাজার টাকা, শ্যামল কুমার দাসকে এক হাজার টাকা, শফিকুল ইসলামকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সাত বিক্রেতার মধ্যে মো. নজরুল ইসলাম ১০ হাজার, আনারুল হক তিন হাজার, শাহ আলম এক হাজার, আব্দুল কাদের দুই হাজার, আব্দুল হাকিম তিন হাজার, কলি ১০ হাজার ও আবদুর রহমানকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

এছাড়া, লবণের গুজব ছড়ানোর অপরাধে শিবগঞ্জে জিয়াউর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম।

জয়পুরহাট
জয়পুরহাটে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে ১৪ ব্যবসায়ীকে ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জয়পুরহাট, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলা শহরের বিভিন্ন দোকানে পৃথক অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করা হয়। 

এর মধ্যে জয়পুরহাট সদরে চারটি দোকানে ১২ হাজার টাকা, কালাই উপজেলার নয়টি দোকানে ৭৬ হাজার টাকা, ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা বাজারে মণ্ডল ট্রেডার্সে ৩০ হাজার টাকা ও আক্কেলপুর উপজেলায় ১২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আদায় করা হয়। 

এ বিষয়ে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, জয়পুরহাটসহ সারা দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ মজুদ রয়েছে। একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে গুজব ছড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকার পাশাপাশি গুজবে কান না দেওয়া এবং কোথাও কোনো দোকানদার বেশি দামে লবণ বিক্রি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার অনুরোধ জানান তিনি। 

কেরানীগঞ্জ
কেরানীগঞ্জে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে ১৮ দোকানিকে জেল-জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল থেকে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ দোকানিদের আটক করে পুলিশ। পরে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হয়। 

এদের মধ্যে ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও পাঁচজনকে জরিমানা করা হয়েছে। 

কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ইসমাইল, ইমরান, মুরাদ, জামাল, সালাম, নাদিম, কুতুবুদ্দিন, বাচ্চু, কামাল, জাহঙ্গীর, লালচান, সম্রাট ও আসলাম। অর্থদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন হাসিব, রাকিব, কাউসার, মামুন ও গোলজার।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ। তাকে সহযোগিতা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মজিরুল হক।

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় বাড়তি দামে লবণ বিক্রির দায়ে তিন প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে কটিয়াদী বাজার ও বানিয়াগ্রাম বাজারে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আকতারুন নেছা। এসময় উপস্থিত ছিলেন-কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল, কটিয়াদী পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর দিদারুল আলমসহ পুলিশ সদস্যরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আকতারুন নেছা জানান, অভিযোগ পেয়ে রাতে কটিয়াদী বাজার ও বানিয়াগ্রাম বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় বেশি দামে লবণ বিক্রি করার দায়ে লোকনাথ স্টোরকে ২০ হাজার টাকা, কাঞ্চন স্টোরকে ১০ হাজার টাকা ও মহিবুর স্টোরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

অভিযানে ১৪ বস্তা বা ৯৮০ কেজি লবণ জব্দ করা হয়।

নাটোর
নাটোরের বড়াইগ্রামে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে দুই মুদি ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার কৈডিমা বাজারে ও থানার মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই অর্থদণ্ড দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার পারভেজ। 

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন কৈডিমা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী ও থানার মোড় এলাকার রেজাউল করিম। তাদের দুই হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। 

ইউএনও আনোয়ার পারভেজ এতথ্য নিশ্চিত করে বলেন, লবণের দাম বাড়তে পারে এমন শঙ্কায় সাধারণ ক্রেতারা সকাল থেকেই দোকানগুলোতে ভিড় করেন। উপজেলা সদরের বাজার বনপাড়ায় দাম আগেরটাই থাকলেও বিক্রি হয়েছে অস্বাভাবিক পরিমাণে। অধিকাংশ দোকানের মজুদ একদিনেই শেষ হয়ে গেছে। তবে, বিকেল থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ মাইকিং এবং পথসভা করে গুজবে কান না দেওয়ার প্রচারণায় নামে। একই সঙ্গে, সব মসজিদের মাইক থেকে প্রচারণা চালানো হয়। 

তিনি বলেন, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নাই। তাই লবণ নিয়ে যেকোনো চক্রান্ত কঠোর হাতে দমন করা হবে। 

নরসিংদী
নরসিংদীতে গুজব ছড়িয়ে অধিক দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে চার ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে মাধবদী ও বেলাব বাজারে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। 

আটক ব্যবসায়ীরা হলেন মাধবদী বাজারের সানাউল্লাহ স্টোরের মালিক সোহেল (৩০) ও শফিউল্লাহ (৪০) এবং বেলাব বাজারের ব্যবসায়ী জন্টু দে (৪৫) ও বাকিবিল্লাহ (৩৫)।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেউ যদি বেশি দামে লবণ বিক্রি করেন ও কেউ কেনেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের চাহিদার তুলনায় বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে লবণ কেনাবেচা না করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান পুলিশ সুপার।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ