প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর : যেসব চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:২২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩ অক্টোবর সরকারি সফরে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যাবেন। শুরুতে তিন দিনের এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে’ যোগদান। পরে ভারতের অনুরোধে এতে ‘দ্বিপাক্ষিক মাত্রা’ও যোগ করা হয়েছে। ফলে এই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও শেখ হাসিনার একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
৫ অক্টোবর দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে একগুচ্ছ চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বাংলা ট্রিবিউন শেখ হাসিনার এই সফরের সম্ভাব্য একটি রূপরেখা পেয়েছে।
অর্থনৈতিক এজেন্ডা : ৩ অক্টোবর দুপুরে দিল্লিতে নেমে শেখ হাসিনা সরাসরি যাবেন তাজ প্যালেস হোটেলে ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত এ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধির কাহিনি শুনতেই শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গেই এই অনুষ্ঠানে কো-চেয়ার হিসেবে থাকবেন সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী হেং সুইই কিট, টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা, অ্যাপোলো হাসপাতাল শিল্পগোষ্ঠীর অন্যতম কর্ণধার শোভনা কামিনেনি প্রমুখ।
ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও এখন ১০-১১ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে। আর বাংলাদেশের নতুন এই ‘গ্রোথ স্টোরি’ কাজে লাগিয়ে সেখানে আরো বেশি করে ভারতীয় লগ্নি আকৃষ্ট করারও চেষ্টা চালাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্যে তিনি ৪ অক্টোবর ভারতে কনফেডারেশনস অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজসহ (সিআইআই) ভারতের শীর্ষ বণিকসভাগুলোর সঙ্গেও মতবিনিময়ে বসছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের মাটিতে ভারতকে যে তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (এসইজেড) দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারতীয় শিল্পপতিদের প্রতি সরাসরি আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে পণ্য তৈরি করে ‘বাইব্যাক’ পদ্ধতিতে সেটা যে আবার তারা লাভজনকভাবে ভারতেও রপ্তানি করতে পারবেন, মনে করিয়ে দেবেন সেটাও।
দ্বিপক্ষীয় এজেন্ডা : ৫ অক্টোবর মোদি ও হাসিনার একান্ত বৈঠকের মধ্য দিয়ে এর সূচনা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার দিগন্তকে প্রসারিত করতে এ মুহূর্তে ৫০টির বেশি ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে। সেগুলোর কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। সব শেষে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতাপত্র সই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে—
এক. বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বা এয়ার কানেক্টিভিটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুই দেশের রাজধানীর মধ্যে এখন প্রতিদিন তিনটি ফ্লাইট (ইন্ডিগো, স্পাইসজেট ও বাংলাদেশ বিমান) চলাচল করছে। সেটার সংখ্যা আরো বাড়ানো ছাড়াও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোর সঙ্গেও (গৌহাটি, শিলচর, আগরতলা, তেজপুর, ডিমাপুর, আইজল) বাংলাদেশের সরাসরি বিমান সংযোগ চালু করার কথা বলা হতে পারে সমঝোতাপত্রে।
দুই. সাগরপথেও কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ সম্ভবত চোখে পড়বে। দুই দেশের মধ্যে কোস্টাল শিপিং (উপকূলীয় নৌযাত্রা) শুরু হয়েছে সম্প্রতি। সেটাকে আরো বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। তিন. বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন শুরু হতে আর ছয় মাসও বাকি নেই। সেই উৎসবে ভারতের যোগদানও প্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় পরিচালক শ্যাম বেনেগাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। এ ধরনের আরো নানা সহযোগিতাও আগামী দিনে দেখতে পাওয়া যাবে।
চার. বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরের মাটিতে আরো বেশি সংখ্যায় দূতাবাস চালু করা ও পরস্পরের নাগরিকদের ভিসা পদ্ধতি সহজ করার ওপরেও জোর দেওয়া হবে। চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের একটি মিশন স্থাপনের জন্য তৎপরতা চলছে কিছুদিন ধরে। সেই উদ্যোগেও হয়তো আলো পড়বে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরেই।
পাঁচ. ভারত-বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর ব্যবস্থাপনা নিয়েও উভয় দেশের সম্মতিতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো এই সফরে চূড়ান্ত হতে পারে।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ