আজকের শিরোনাম :

ভারী বৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের জীবন হুমকির মুখে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৮, ০৮:৫০ | আপডেট : ১৪ জুন ২০১৮, ০৯:২৪

ঢাকা, ১৪ জুন, এবিনিউজ : টানা বৃষ্টি এবং ছোটখাটো ভূমিধসের কারণে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এখন বেহালদশা। পানি এবং কাদামাটিতে একাকার হয়ে গেছে ক্যাম্পের কোনো কোনো জায়গা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ কর্মীরা হাঁটু পর্যন্ত পানির ভেতর দিয়ে হেঁটে ক্যাম্পে ঢুকছেন এবং তাদের ত্রাণ কাজ পরিচালনা করছেন। অনেক জায়গায় রোহিঙ্গারা হাঁটু সমান উচ্চতার পানিতে দাঁড়িয়ে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন।

বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই স্থানীয় প্রশাসন প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করেছিল যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছেন।

সে তালিকার ওপর ভিত্তি করে গত ১০ জুন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন শরণার্থী ত্রাণ এবং প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম। তিনি জানান বাকিদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।

প্রশাসনের হিসাবে ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেক তীব্র ভূমিধসের ঝুঁকিতে এবং বাকি অর্ধেক বন্যার ঝুঁকিতে ছিল বলে উল্লেখ করেন শরণার্থীবিষয়ক কমিশনার। ভূমিধস এবং অতিবৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো প্রাণহানি হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বর্ষা মৌসুম শুরুর তিন মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সারা বছর কক্সবাজার অঞ্চলে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, গত তিন দিনে সেটির এক তৃতীয়াংশ হয়ে গেছে। এ থেকে বোঝা যায় বৃষ্টিপাতের মাত্রা কতটা প্রবল ছিল।

গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গার বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের জান্নাতুল ফেরদৌস মঙ্গলবার উখিয়া ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখেছেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী ক্যাম্পে ঢুকতে মূল সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তার দুই পাশে শরণার্থীদের অধিকাংশ ঘরে পানি ঢুকেছে।

যাদের ঘর পাহাড়ের পাদদেশে, ঢালে কিংবা উপরে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে ক্যাম্প এলাকার মধ্যে অবস্থিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান জান্নাতুল ফেরদৌস।

যাদের ঘরে পানি উঠেছে তারা উঁচু জায়গায় অবস্থিত অন্য শরণার্থীদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। শিশু এবং বয়স্করা সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে।
গত দুই দিন যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে সেটি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে প্রচুর ভূমিধসের আশঙ্কা আছে বলে জান্নাতুল ফেরদৌস মনে করেন।

২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের পরে এবং ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন এবং পুরনো - সব মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বসবাস করছে কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে।

পুরো জেলায় ৫ হাজার ৮শ একর ভূমি এখন রোহিঙ্গাদের দখলে। কৃষিজমি, পাহাড় বন উজাড় করে নির্মিত এই বসতি বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্যই এখন বিরাট ঝুঁকি তৈরি করেছে।

বর্ষা শুরুর বেশ আগে থেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে লাখ-লাখ রোহিঙ্গা ভূমিধস, ঝড় এবং বন্যার ঝুঁকিতে আছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেন,পূর্ব প্রস্তুতি থাকার কারণে বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি।

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত একজন বাসিন্দা দিল মোহাম্মদ জানান, তিনি যেখানে বসবাস করছেন সেখানে ৫ শতাংশ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা অন্য রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বলে তিনি জানান।

দিল মোহাম্মদের ভাষ্য অনুযায়ী, ভূমিধস নিয়ে নানা আশংকা এবং প্রচারণা থাকার কারণে রোহিঙ্গাদের অনেকেই বৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে সতর্ক হয়ে গেছে। তবে এখনো অনেকে ঝুঁকি-পূর্ণভাবে বসবাস করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ