আজকের শিরোনাম :

ঢাকায় রিকশার ভবিষ্যৎ কী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০১৯, ১১:২৯

বাংলাদেশে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, রাজধানীর মূল সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল বন্ধ করার কোনও বিকল্প নেই। তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে মঙ্গলবারও (০৯ জুলাই) ঢাকার কিছু এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন রিকশা চালকেরা।

গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকা শহরে রিকশা চলাচল করা উচিৎ কিনা সে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে পুরনো একটি বিতর্ক আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে শাহবাগ, খিলক্ষেত থেকে রামপুরা হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে এবং মিরপুর রোডে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর থেকে এই বিতর্ক। রোববার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা শুরু হয়েছে।

যানজট নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির প্রধান ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন।

তিনি বলছেন, অলিগলি বাদ দিয়ে মূল সড়কগুলো থেকে ধীরে ধীরে রিকশা তুলে দেয়া হবে। ঢাকার শহরের বর্তমান যা অবস্থা আমরা যদি ধীরে এই অবস্থার পরিবর্তন না করি, একটা শহর তো থমকে থাকতে পারে না। আমরা জানি যে এই ধরণের উদ্যোগে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসবে কিন্তু আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে আমরা আমাদের কাজগুলো আমরা করবো।

কিন্তু ঢাকা শহর থমকে থাকার জন্য রিকশাই কি শুধুমাত্র দায়ী?

যানবাহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলছেন, রিকশা একা দায়ী না হলেও সড়কে ধীর গতির যানবাহন চলাচল করলে শহরের গতি বাধাগ্রস্ত হয়। রিকশার জন্য কোনও গাড়ি নির্দিষ্ট গতিতে চলতে পারে না। সে একটা লেনে চলে না।

তিনি বলছেন, দু’টো সিটি কর্পোরেশনকে ঠিক করতে হবে ঢাকাতে কত রিকশা প্রয়োজন। কোলকাতার উদাহরণকে ঢাকায় ব্যবহার করতে হবে।

অন্যদিকে মেয়র সাঈদ খোকন বলছেন, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমাদের রাজধানী শহরে মানবচালিত রিকশা, যেটা পৃথিবীর কোনও রাজধানী শহরে নেই, সেটা থেকে একটা না একটা সময়ে আমাদের বের হয়ে আসতেই হবে।

তিনি বলছেন, সেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন তিনটি সড়কে রিকশার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ঢাকায় ৯০’র দশক পর্যন্ত সকল সড়কে রিকশা চলতো। শুরুতে ভিআইপি রোড তারপর মিরপুর রোড থেকেও রিকশা তুলে দেয়া হয়।

নতুন করে এই তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের কাজের কারণে দক্ষিণ ও উত্তরে মূল যে ভিআইপি সড়ক রয়েছে, যেটি দক্ষিণ ও উত্তর সিটিকে যুক্ত করেছে, সেখানে রাস্তা মারাত্মক সরু হয়ে গেছে। যার কারণে প্রচণ্ড যানজট হচ্ছে।

কিন্তু রিকশা না থাকায় কিছু এলাকার বাসিন্দারা ব্যাপক ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন। ঠিক যে সময়টাতে অফিস বা স্কুলের উদ্দেশ্যে তারা রওনা দেন তখন বেশ লম্বা সময় ঢাকার প্রগতি সরণিসহ আশপাশের কিছু সড়ক অবরোধ করেছিলেন রিকশা চালকেরা।

রামপুরা, বাড্ডা, নতুন-বাজার, খিলগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকায় বহু মানুষকে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। বাসাবোর কদমতলা এলাকার জলি আক্তার তার ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন, আজকে ছেলে স্কুলে যেতেই পারেনি। আর মেয়ে কলেজে গেছে। কিন্তু সে এখনও আসেনি। একটু আগে জানালো হেঁটে হেঁটে আসছে।

তিনি বলছেন, কোনও বিকল্প ছাড়া হঠাৎ রিকশা তুলে দিলে খুব বিপদে পড়ে যাবেন তিনি ও তার পরিবার।

‘রিকশা ছাড়া আমরা চলতে পারবো না। আমাদের এদিকে কোনও বাস নেই। বিকল্প ব্যবস্থা একটা করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রিকশা উঠিয়ে দিলেই তো চলবে না।’

মেয়র সাঈদ খোকন বলছেন, বিকল্প হিসেবে আমরা বাস সার্ভিসকেই উৎসাহিত করছি। আমরা চক্রাকারে বাস সার্ভিস চালু করেছি। মেট্রোরেল যখন চালু হয়ে যাবে তখন আমাদের অনেক সুবিধা হবে। ধীরে ধীরে কম পয়সায় ভালো সার্ভিস দিয়ে, রিকশা নিরুৎসাহিত করতে চাই।

বিপুল সংখ্যক রিকশা চালকের জন্য কী বিকল্প ভাবা হচ্ছে?

ড. সালেহউদ্দিন বলছেন, রিকশাওয়ালাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলে তো হবে না। ধরুন ঢাকায় যদি প্রচুর পাবলিক বাস চালু হয় সেখানেও বহু লোক লাগবে, কর্মসংস্থান হবে। এসব বাসে তাদেরই তো প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো যায়।

অন্যদিকে কোহিনুর মাহমুদ বলছেন, আমাদের আবার গ্রামীণ অর্থনীতিতে ফিরে যেতে হবে। এরা মূলত খন্ডকালীন রিকশাচালক। তারা যেন গ্রামেই কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলছেন, যেকোনও শ্রমজীবী মানুষ হোক না কেন, তার পেশা থেকে তাকে যদি সরিয়ে নিতে হয় তাহলে তাকে সময় দিতে হবে। আমরা স্লোগান দিচ্ছি কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না কিন্তু আবার আমরা একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে পেছনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছি। খবর: বিবিসি বাংলা।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ