আজকের শিরোনাম :

দৃশ্যমান দুই কিলোমিটারের বেশি অংশ

পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ

  মাহমুদ আকাশ

৩০ জুন ২০১৯, ১১:১৯ | আপডেট : ৩০ জুন ২০১৯, ১১:৩০ | অনলাইন সংস্করণ

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ। এ পর্যন্ত সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ। এছাড়া মূল সেতুর কাজ ৮১ শতাংশ ও নদী শাসনের ৫৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি সার্ভিস এরিয়া, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ২৯ জুন শনিবার সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারে (খুঁটি) বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দৈর্ঘের ১৪তম স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো)। এর আগে মাওয়ায় ৩টি, জাজিরা প্রান্তে ৯টি ও মাঝ নদীতে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। মোট ১৪টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার বা দুই কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান হলো। কংক্রিট ও স্টিলের কাঠামো দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে- আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, শনিবার পদ্মা নদীর মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিতে ১৪তম স্প্যানটি বিকেল ৪টার দিকে বসানো হয়। ১৪তম স্প্যানটি বসানোর নির্ধারিত দিন ছিল ২৭ জুন বৃহস্পতিবার। এ জন্য ওই দিন সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেন দিয়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের কাছে নেয়ার কাজ শুরু হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেদিন বসানো যায়নি। পরদিন খুঁটির কাছে ডুবোচরে আটকে যায় ক্রেনটি। এরপর নদী খননের মাধ্যমে ভাসমান ক্রেন সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের কাছে নিয়ে স্প্যানটি বসানো হয়। এর আগে গত ২৫ মে সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১৪ ও ১৫ নাম্বার পিয়ারে ১৩তম স্প্যানটি বসানো হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এর পর্যন্ত মূল সেতুতে মোট ১৪টি স্প্যান বসানো মাধ্যমে ২১০০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। এছাড়া নতুন নকশায় সেতুর ১৪ পিয়ারের পাইলিং কাজ চলছে। এ পর্যন্ত সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৮৮টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। বাকি ছয়টি পাইল বসানোর কাজ এ মাসেই সম্পন্ন হবে। নদীতে সেতুর ৪১ পিয়ারের মধ্যে ২৯টি পিয়ার নির্মাণ হয়ে গেছে। বাকি ১২টি পিয়ার নির্মাণ এ বছরই হয়ে যাবে। মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আরও ১০টি স্প্যান প্রস্তুত হয়ে আছে। ৯টি স্প্যানের অংশ চীনে তৈরি হয়ে গেছে। দুটি স্প্যানের অংশ আগামী মাসের মধ্যে চলে আসবে। মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আসার পর প্রতি মাসে একটি করে স্প্যান জোড়া দেয়া হয়। মূল সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৮৮টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ২৯৪টি পাইলের উপর ৪২টি পিয়ার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৪১ টি স্প্যান বসানো হবে পিয়ারের উপর। একটি থেকে আরেকটি পিয়ারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এর মাঝে বসানো ১৫০ মিটার দীর্ঘ প্রতি স্প্যান। এর স্প্যানের ভিতর দিয়ে চলবে ট্রেন ও উপর দিয়ে চলবে গাড়ি। স্প্যানের ভিতরে বসানো হচ্ছে রেলওয়ে স্লাব এবং উপরে বসানো হচ্ছে রোড স্লাব। এ পর্যন্ত রোড স্লাব ২৮টি ও ৩২০টি রেলওয়ে স্লাব বসানো হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে সেতু বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবির বলেন, পদ্মার মূল সেতুর অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এ পর্যন্ত ১৪টি স্প্যান বসানো হয়েছে। আগামী মাসে আরও একটি স্প্যান বসানো হবে। একই সঙ্গে রোড ও রেলওয়ে স্লাব বসানোর কাজ চলছে। এ পর্যন্ত সেতুর ২৯টি পিয়ার নির্মাণ শেষ হয়েছে। বাকি পিয়ার এ বছরের মধ্যে শেষ হবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান, এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। এ বছরের জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। আর গত বছরের শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর একমাত্র স্প্যানটি বসানো হয়। এটি সপ্তম স্প্যান। এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর গত ২২ মার্চ বসে নবম স্প্যানটি। ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর দশম স্প্যান, ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১১তম স্প্যান বসে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের ওপর ১২তম স্প্যান বসানো হয়েছিল। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। তবে কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ১৪টি পিয়ারের মধ্যে ১টি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেতুর ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারে ৭টি করে পাইলিং করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৪টি পিয়ারের পাইলিং কাজ চলছে। স্প্যানের মতো পিয়ার নির্মাণের কাজও বেশ দ্রুত চলছে। পিয়ার ও স্প্যানের পাশাপাশি সেতুতে রেলপথের জন্য স্লাব বসানোর কাজ চলছে। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্লাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্লাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আশা করছে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া শতভাগ শেষ হয়েছে। তবে জাজিরা অংশে সংযোগ সড়কের কিছুটা কাজ বাকি আছে। সেই হিসেবে ৯৯ শতাংশ ধরা হয়। এছাড়া মূলসেতু ৮১ শতাংশ ও নদী শাসন ৫৯ শতাংশসহ প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ।

এবিএন/মাহমুদ আকাশ/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ