আজকের শিরোনাম :

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে জাপানি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০১৯, ১৩:৫৭ | আপডেট : ২৯ মে ২০১৯, ১৬:০৪

বাংলাদেশকে আগামী দিনের উদীয়মান অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাপান সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে বাংলাদেশ ও জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

একই সঙ্গে জাপানের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। জাপানের ব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনার নেতত্বে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির উচ্চ প্রশংসা করেন এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণে নেওয়া বিভিন্ন নীতির প্রশংসা করেন।

তিন বছর আগে ২০১৬ সালে জাপান সফরের সময় জাপানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এর পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়েছে এবং জাপানের অনেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশে ব্যবসায় আগ্রহী হয়েছে। এসব কোম্পানিগুলো বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নেও যুক্ত হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে জাপান এখন বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্যে স্থিতিশীলভাবেই আমরা এগিয়ে চলেছি আমরা। ২০১২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণে সঠিক পথেই রয়েছি আমরা।

শেখ হাসিনা জানান, তার সরকারের নেওয়া সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাপনা, বেসরকারি খাতের জন্য স্থিতিশীল নীতি সহায়তা এবং অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ বাংলাদেশের সফলতায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এসব কারণেই নমিনাল জিডিপির বিত্তিতে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় এবং বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর এভাবে যদি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শিগগিরই দুই অংকের ঘরে পৌঁছবে বলে আমাদের আত্মবিশ্বাসী।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাপক শিল্প বিস্তারের ফলে পাঁচ বছরের মধ্যে রপ্তানি দ্বিগুণ হয়ে ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। দ্য ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশকে দ্রুত বর্ধনশীল সোর্সিং কান্ট্রি, পণ্য উৎপাদন ও বিতরণ হাব এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি হওয়া অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

জাপান এক্সাটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, ভবিষ্যতে জাপানি কোম্পানিগুলো যেসব অঞ্চলে ব্যবসার সম্প্রসারণ করবে তার মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

গত বছর বাংলাদেশে জাপান টোবাকোর ১৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা জাপানের ব্যবসায়ীদের বলেন, আমরা এ ধরনের আরও বিনিয়োগ দেখতে আগ্রহী।

বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান শক্তি উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং দেশি, বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি বিনিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।

মহেশখালী-মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাব তৈরির লক্ষ্যে ‘ইনটিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ফর লজিস্টিক হাব’ এ জাপান হয়তো সহায়তা করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

দুটি সফটওয়্যার পার্কে কাজ শুরু হয়েছে এবং ২৬টি হাইটেক পার্ক তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার আমাদের রয়েছে অন্যতম উদার বিদেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা।

আইন করে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষার ব্যবস্থা, কর সুবিধা, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক সুবিধা, শতভাগ বিদেশি ইক্যুইটির সুবিধা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার মতো বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকারের সুবিধার কথা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, ব্যবসার খরচ, মানবসম্পদ, অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার, বিশ্ব বাজারে পণ্যের প্রবেশাধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিচারে বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগী বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ শতাধিক দেশে ওষুধ রফতানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণশিল্পও বিশ্বের নজর কেড়েছে। ইউরোপের দেশসহ বিশ্বের ১৪টি দেশে বাংলাদেশ থেকে পণ্য ও যাত্রীবাহী জাহাজ রপ্তানি হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল খাত হলো সফটওয়্যার। দেশের ৮০০ আইটি ও সফটওয়্যার কোম্পানির মধ্যে ১৫০টির বেশি কোম্পানি বিদেশি গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। ২০ হাজারে বেশি বাংলাদেশি আইটি পেশাদার বিশ্বের নামকরা কোম্পানি যেমন- মাইক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএমে কাজ করছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের তৈরি চামড়াজাত পণ্য, কৃষিভিত্তিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং ইলেকট্রনিক গ্যাজেটও বিশ্ব বাজারের নজরে রয়েছে। পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর জাপানের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন।

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ আজিজ খান বক্তব্য দেন।

অপরদিকে জাপানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জাপান বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্সিয়াল অ্যান্ড কোঅপারেশনের (জেবিসিসিইসি) চেয়ারপারসন তেরুও আসাদা, জাইকা এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজুহিকো কোশিকাওয়া, জেইটিআরও প্রেসিডেন্ট ইয়াসুশি আকাহোশি, সুমিতোমো করপোরেশনের সভাপতি ও সিইও মাসায়াউকি হায়োডো, মিটসুই ও কো লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাইনসুইক ফুজি, সজিটজ কর্পোরেশনের সিনিয়র ম্যানেজিং এক্সিকিউটিভ অফিসার রিওতারো হিরায়, মিটসুবিশি মোটরসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াউজিরো কোবাশি, হোন্ডা মোটর কো. লিমিটেডের ম্যানেজিং অফিসার নোরিয়াকি আবে ও মারুহিসা কোম্পাইন লিমিটেডের কিমিনোবু হিরায়শি বক্তব্য দেন।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ