আজকের শিরোনাম :

মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩৭ | আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৫৫

অনন্ত আকাশে মস্তক তোলার বাসনায় হলো ১৪২৬ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগান ছিল ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে।’ আজ রবিবার সকাল ৯টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয়। এর পর শাহবাগের ঢাকা ক্লাবের সামনে দিয়ে ঘুরে টিএসটি মোড় হয়ে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে শেষ হয়।

ঐতিহ্য মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামান এবারের শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। এতে শামিল হন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ। ঢাকা-ঢোল বাজিয়ে নানা মুখোশ হাতে নিয়ে নেচে-গেয়ে এই শোভাযাত্রায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। নানা প্রতীক, চিত্র আর মুখোশের মাধ্যমে সেখানে অশুভ শক্তির বিনাশ কামনা করা হয়; প্রার্থনা করা হয় সত্য, সুন্দর এবং মঙ্গলের জন্য।

ছায়ানট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে ভোর থেকেই রমনার বটমূলে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ। সবার পরনে ছিল নতুন রঙিন পোশাক।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে চারুকলা অনুষদের ২১তম ব্যাচ। ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘টানা মাসব্যাপী আমাদের প্রস্তুতি চালিয়েছেন তারা। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপনে পূর্ণতা আনবে প্রতিকৃতিগুলো। 

শোভাযাত্রায় অংশ নিতে চারুকলার সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন শত শত মানুষ। চারুকলা থেকে সারি বেঁধে শুরু হয় এই শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার দুই পাশ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাতে হাত দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করেন। বেষ্টনীর ভেতর দিয়ে নাচ-গান করতে করতে আর বাদ্য বাজাতে বাজাতে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন মঙ্গলকামী মানুষ।

মূলত এই আয়োজনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় রাজধানীর বৈশাখ বরণের কার্যক্রম। আর তাই এ উৎসবকে সফল করতে গত এক মাস নিরলস পরিশ্রম করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী। শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে পাখি, বাঘ, বক, ঘোড়া, উল্টা কলসি, পেঁচা, কাঠঠোকরাসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতির শিল্পকর্ম।

জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করেছে বাঙালি জাতি। পয়লা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতেছে দেশ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৫ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪২৬।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ