আজ চৈত্র সংক্রান্তি, বিদায় বসন্ত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ১১:১৯

বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বাংলা বছর। আজ ১৪২৫ বঙ্গাব্দের শেষ দিন ৩০ চৈত্র। আজ চৈত্রসংক্রান্তি। আজ শেষ দিন ঋতুরাজ বসন্তেরও।

বাংলা সন ১৪২৫ তার শেষ গান গেয়ে বিদায় নেবে আজ। বসন্তকে বিদায় জানিয়ে আসবে নতুন বছর। নতুন দিনের বারতা নিয়ে আসবে বৈশাখ।

নানা লোকাচার উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসবটি পালন করে আসছে বাংলাদেশের মানুষ সেই আবহমানকাল থেকেই। মূল আয়োজন গ্রামে হলেও নগর সংস্কৃতিতে এর কদর এখন যথেষ্ট। বর্ণাঢ্য আয়োজনে আজ চৈত্রসংক্রান্তির পার্বণ উদযাপন করবে শেকড় সন্ধানী মানুষ। চলবে একইসঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি।

চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে লোকমেলার আয়োজন গ্রামগঞ্জেই হয় বেশি। মেলা, গান-বাজনা, যাত্রাপালাসহ নানা আয়োজনে উঠে আসে লোকজ সংস্কৃতির নানা সম্ভার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মেতে ওঠে পূজা-অর্চনায়।

চৈত্রসংক্রান্তির দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাস্ত্র মেনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস করে কাটান। নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী অন্য ধর্মাবলম্বীরাও নানা আচার অনুষ্ঠান পালন করেন।

জানা যায়, চৈত্র মাসে স্বামী, সংসার, কৃষি, ব্যবসার মঙ্গল কামনায় লোকাচারে বিশ্বাসী নারীরা ব্রত পালন করতেন। এ সময় আমিষ নিষিদ্ধ থাকত। জিয়ল মাছ (পানিতে জিইয়ে রাখা যায় এমন মাছ) যেমন কৈ শিং মাগুরের ঝোল করে খেতেন তারা। থাকত নিরামিষ, শাকসবজি আর সাত রকমের তিতো খাবারের ব্যবস্থা। বাড়ির আশপাশ বিল খাল থেকে শাক তুলে রান্না করতেন গৃহিণীরা। এই চাষ না করা, কুড়িয়ে পাওয়া শাক খেতে বাগানে বেশি বেশি পাওয়া গেলে বিশ্বাস করা হতো- সারা বছরের কৃষি কর্ম ঠিক ছিল। ফলে নতুন বছর নিয়ে দারুণ আশাবাদী হয়ে উঠতেন তারা।

গ্রামের নারীরা এ সময় সাজগোছ করেন ঘরদোর। মাটির ঘর লেপন করে ঝকঝকে করেন। গোয়ালঘর পরিষ্কার করে রাখাল। সকালে গরুর গা ধুয়ে দেওয়া হয়। ঘরে ঘরে চলে বিশেষ রান্না। উন্নতমানের খাবার ছাড়াও তৈরি করা হয় নকশি পিঠা, পায়েস, নারকেলের নাড়ু। দিনভর চলে আপ্যায়ন। গ্রামের গৃহস্থরা এ দিন নতুন জামা কাপড় পরে একে অন্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

চৈত্রসংক্রান্তির আরেকটি বড় উৎসব ‘চড়ক’। চৈত্র মাসজুড়ে সন্নাসীরা উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করেন। সংক্রান্তির দিন তারা শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঝোলেন। আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটেন। ভয়ঙ্কর ও কষ্টসাধ্য শারীরিক কসরত দেখতে সকল ধর্মবর্ণের মানুষ এসে জড়ো হন। আনন্দে মাতেন। এ আয়োজনের সঙ্গে আরও চলে গাজনের মেলা। এসব মেলার সঙ্গে বিভিন্ন পৌরাণিক ও লৌকিক দেবতার নাম সম্পৃক্ত। যেমন- শিবের গাজন, ধর্মের গাজন, নীলের গাজন ইত্যাদি।

নানা পদের খাবার
বছরের শেষ দিনটি উদযাপনে শহরের তুলনায় গ্রামের আয়োজন বেশি থাকে। নানা পদের খাবার তৈরি করে বছরকে বিদায় দেন গ্রাম-বাংলার নারীরা। যেহেতু চৈত্রমাসে আবহাওয়াতে তাপের আধিক্য বেশি তাই সংক্রান্তি পাতে গুরুপাক কোনো খাবার থাকে না। তিতা, শাক পাতা, ঝাল এগুলোই মূল খাবার। বসন্তের শেষ দিনের খাবার তালিকা আকর্ষণীয় করে তুলেছে- তিতকুটে পাট শাকের ঝুড়ি, সঙ্গে কাঁচা সরিষার ভর্তা, ধোয়া ওঠা লালচে আউশ চালের ভাত আর ডালায় রাখা শুকনো মরিচ। চৈত্রের শেষদিন নাকি তিতকুটে আর ভর্তা খেতে হয়। এতে সমস্ত রোগ বালাই বৈশাখের প্রথম ঝড়ের সঙ্গে নাকি চলে যায়। তবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার কালবৈশাখী হয়ে যাওয়ায় প্রকৃতিতে এখন শীতলতা।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ