রাজউকের তদন্ত প্রতিবেদন

২৩ তলার এফ আর টাওয়ারের অনুমোদন ছিল ১৮ তলা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩০

বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, ভবনটি ২৩ তলা পর্যন্ত উঠলেও রাজউক অনুমোদন ১৮ তলার। বহুতল এই বাণিজ্যিক ভবনের উপরের পাঁচটি তলা অবৈধভাবে তোলা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এই ভবনের জমির মূল মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান (ডেভলপার) হিসেবে ভবনের অর্ধেকের মালিকানা পায় রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। তাদের দাবি ছিল, অনুমতি নিয়েই ভবনটি ২৩ তলা নির্মাণ করা হয়েছে।

রূপায়নের এই দাবি নাকচ করে দিয়ে রাজউকের তদন্ত কমিটির সদস্য, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে রাজউকের যেসব কাগজপত্র তারা দেখেছেন তাতে ১৮ তলা পর্যন্ত অনুমতি থাকার প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, এই ভবন নিয়ে রাজউকের কাছে যেসব ডকুমেন্ট আছে, সব আমাদের কাছে নিয়ে এসেছি। তাতে দেখা গেছে বেইজমেন্টে দুই তলা এবং উপরে ১৮ তলার অনুমোদন আছে।

এদিকে রাজউকের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান দাবি করেছেন, রাজউকের পক্ষ থেকে ভবন সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

২০০৫ সালে নির্মিত এই ভবনে গত ২৮ মার্চ অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর নানা অনিয়ম বেরিয়ে আসছে, যা তদন্তকারীদের চোখেও ধরা পড়ছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, এফ আর টাওয়ারের তদন্তের কাজে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ভবন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র চাওয়া হয়। ভবনটির কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটির কাছে একটি নকশা জমা দিয়েছে। তাতে ভবনের উচ্চতা ২৩ তলা দেখানো হয়েছে। কিন্তু রাজউক তদন্ত কমিটিকে যে নকশা দিয়েছে, তাতে উচ্চতা ১৮ তলা বলা আছে।

তদন্ত কমিটির সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ১৮ তলার নকশাটি তাদের কাছে আসল বলে মনে হয়েছে। ২৩ তলার নকশাটি সঠিক কি না, সে–সংক্রান্ত কাগজপত্রও রাজউক থেকে চাওয়া হয়েছে। রাজউক এ–সংক্রান্ত কিছু নথি সরবরাহ করেছে। তবে আরও যাচাই–বাছাই ছাড়া বলা যাচ্ছে না কোন নকশাটি ঠিক।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি বৈঠক করেছে। প্রথম বৈঠকে ভবনটি সম্পর্কে কী কী তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তা ঠিক করা হয়। যার মধ্যে ছিল নকশা অনুমোদনের সঙ্গে রাজউকের কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। ভবনটি নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থপতি ও প্রকৌশলী কে যুক্ত ছিলেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ওই ভবনটির উচ্চতা কত রাখতে বলেছিল। ভবনটির নির্মাণের সময় ওই এলাকায় রাজউকের কারা দায়িত্বে ছিলেন। এসব বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কিছু নথি তদন্ত কমিটিকে দিয়েছে রাজউক।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কমিটি ছাড়াও এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) পৃথক কমিটি করেছে।

এসব কমিটির মধ্যে বৃহস্পতিবার রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত রাজউকের কমিটি প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এফ আর টাওয়ারের জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি সরু ছিল। এছাড়া সিঁড়িটি সবার ব্যবহারের উপযোগীও ছিল না। যে কোনো কক্ষ থেকে জরুরি বহির্গমন সিড়িতে যাওয়ার সুযোগ থাকার কথা। কিন্তু ওই ভবনের এই সিঁড়িটি এমন ছিল না। তাছাড়া ভবনটির জরুরি নির্গমনের সিঁড়িটি অনেক জায়গায় কোনো একটা অফিসের ভেতর ঢুকে গেছে বলে দেখতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ফলে চাইলেও তা অন্য কক্ষের কেউ তা ব্যবহার করতে পারত না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই ভবনের ‘ফায়ার রেটেড ডোর’ও ছিল না। এ ধরনের দরজা দিয়ে লোকজন সিঁড়িতে যেতে পারবে। কিন্তু সিড়ি থেকে আসতে পারবে না। একইসঙ্গে এটা সিঁড়িতে ধোঁয়া যাওয়া আটকাবে। ফায়ার ডোর না থাকায়ও জরুরি বহির্গমন সিঁড়িটা নিরাপদ ছিল না।

রাজউকের এই তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ হেলালী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী, অধ্যাপক ইশতিয়াক আহমেদ এবং অধ্যাপক ড. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ।

গত ২৮ মার্চ দুপুরে বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ২৬ জন।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ