এফআর টাওয়ারের স্ল্যাব ও বিমে ফাটল ধরেছে
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০১৯, ১৪:১০
রাজধানীর বনানীতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এফআর টাওয়ারের স্ল্যাব ও বিমে ফাটল ধরেছে জানিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তদন্ত দল। ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনটি আবার ব্যবহার করা যাবে কিনা, তা জানতে তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আজ রবিবার (৩১ মার্চ) সকালে এফআর টাওয়ার পরিদর্শন শেষে বুয়েট ও রাজউকের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত টিমের সদস্য, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ভবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ। পরিপূর্ণ তদন্ত করতে ১৫০ দিন সময় লাগবে। ভবনটি ব্যবহার করা যাবে কিনা- এর আগে আমরা বলতে পারব না।’
মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘কমপ্ল্যায়েন্সের জন্য বিল্ডিং কোড ফলো করে যা যা করণীয় তা করার জন্য আমরা ১৫০ দিনের একটা টাইম ফ্রেম দিয়ে দেব। এর মধ্যে বিল্ডিংটি সংস্কার করে দেন, এটা কন্টিনিউ করার একটা প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছি।’
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের তদন্তের মূল ইস্যু নয়। আমাদের যেটা মনে হচ্ছে ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট হতে পারে। এজন্য বিল্ডিং কোড মেনে এটা করা হয়েছে কি-না, ইলেকট্রিক সেফটিটা ঠিক ছিল কি-না, সেই ডিটেইল অ্যাসেসমেন্টে যাচ্ছি। ওটা করলে বিল্ডিংয়ের তারে যদি কোনো সমস্যা থাকে, ফায়ারের প্রিভেনটিভ মেজার্সে কোনো সমস্যা থাকে, স্ট্র্যাকচারাল কোনো সমস্যা থাকে- সেগুলো চিহ্নিত করে ১৫০ দিনের মধ্যে একটা রিপোর্ট দেবে। এরপর সংস্কারমূলক কাজগুলো করে এটাকে চালিয়ে নেয়া হবে।’
১৫০ দিন পর্যন্ত এই ভবন কি ব্যবহার করা যাবে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না। ইনিশিয়াল ১৫০ দিন, এই সময় বেশিও লাগতে পারে।’
মেহেদী আহমদ আরও বলেন, ‘১৫০ দিন পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব এই ভবনটি থাকবে কি থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ভবনটি ১৪ তলা পর্যন্ত অনুমোদন ছিল, এরপর আরও ৪ তলা পরে আরও ২ তলা করা হয়।
রাজউকের তদন্ত দলের সদস্য প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তা শামসুদ্দীন আহমেসদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যেসব ফ্লোরে গিয়েছি সব জায়গায় ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছিল, কিন্তু তা ব্যবহার করা হয়নি। এ কারণে আমরা বলছি দামি দামি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখলেই হবে না, ব্যবহারের জন্য কর্মী দরকার।’
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। এখন পর্যন্ত বনানীর আগুনের ঘটনায় নিহত হন ২৬ জন। এ ছাড়া বহু লোক আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ দুর্ঘটনায় স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বিশেষজ্ঞ কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপক, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও সচিব (উন্নয়ন) এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রয়েছেন। কমিটি তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবে।
অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনায় বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভবনের দুই মালিক বিএনপি নেতা তাসভীর উল ইসলাম ও প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুককে ইতোমধ্যে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়নকে সেখানে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানসহ ঘটনার নানা দিক জানতে প্রত্যক্ষদর্শীদের অংশগ্রহণে বনানী থানা পুলিশের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমে গণশুনানি শুরু হয়েছে সকাল সোয়া ১০টার দিকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কমিটি, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এই গণশুনানির আয়োজন করেছে।
এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ