আজকের শিরোনাম :

কক্সবাজারে কর্মরত এনজিওতে স্থানীয়দের চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০১৯, ২১:১৩

বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিভিন্ন এনজিওতে চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে হবে - এমন দাবিতে আজ উখিয়াতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি ও একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেছে।

সেখানে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ ও লাঠিচার্জ হয়েছে। এতে পুলিশসহ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কোটবাজারে এই বিক্ষোভ হয়েছে। সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা অবরোধ করে রেখেছিলো বিক্ষোভকারীরা।

সেখানে বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন এনজিওতে চাকরির ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের বদলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেবার দাবিতে একটি আন্দোলন গড়ে উঠেছে।

আন্দোলনকারী অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উখিয়ার কোটবাজারের বাসিন্দা শরীফ আজাদ বলছেন, "যতদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে না যাচ্ছে, ততদিন স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে।"

"শরণার্থী আইনে আছে যে রোহিঙ্গারা কোনভাবে বাংলাদেশে চাকরি করতে পারবে না। কিন্তু সেখানে সাত থেকে আট হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে কাজ করে।"

কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গাদের সহায়তায় শতাধিক দেশি বিদেশী উন্নয়ন ও সাহায্য সংস্থা কাজ করছে।

সেসব প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী হিসেবে নিয়োগ নয়, তবে অল্প অর্থের বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজের অনুমোদন রয়েছে।

কক্সবাজারে বিভিন্ন এনজিওতে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও যারা এনজিও কর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তাদের বদলেও স্থানীয়দের প্রাধান্য দেবার দাবি তোলা হচ্ছে।

এমন দাবি তারা কেন তুলছেন?

শরীফ আজাদ বলছেন, "রোহিঙ্গারা যে ভাষা বলে সেটা আমরাই সবচাইতে ভাল বুঝি অন্য এলাকার লোকেদের চাইতে। আর তাছাড়া আমরাই সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।"

"রোহিঙ্গারা আসার কারণে আমাদের বনভূমি, পাহাড় ধ্বংস হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য তিন থেকে চারগুণ বেড়ে গেছে। গাড়িভাড়া আগে যেখানে ৫ টাকা ছিল সেখানে সেই ভাড়া ২০ টাকা হয়ে গেছে।"

"আমরা সব দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা চাচ্ছি আমাদের বেকার যুবকদের অন্তত চাকরী হোক।"

বিক্ষোভকারীদের আরো অভিযোগ তাদেরকে নানা এনজিও থেকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।

যে জায়গায় আজ বিক্ষোভ হয়েছে, কক্সবাজার থেকে গাড়িতে উখিয়ার সেই কোটবাজার যেতে ৪০ মিনিটের মতো লাগে।

এই পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখছেন এনজিও কর্মীরা?

উখিয়াতেই বিশ্বের সবচাইতে বড় রোহিঙ্গা শিবিরের অবস্থান। সেখানে যেতে হলে এনজিও কর্মীদের এই যায়গাটি পার হতে হয়।

আজ এনজিও কর্মীদের অনেকেই রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে যেতে পারেননি বা যাননি বলে জানা যাচ্ছে।

উপকূলীয় অঞ্চল ভিত্তিক এনজিও কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, "স্থানীয়দের যে দাবি তার প্রতি লোকাল এনজিও, আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর খুবই সহানুভূতি রয়েছে।"

"কক্সবাজারের সিভিল সোসাইটি এনজিও ফোরামের তরফ থেকে আমরাও বলেছি যে মাঠ পর্যায়ের যে চাকরিগুলো আছে তার ৭০ শতাংশ লোকালদের দেয়ার জন্য।"

"কিন্তু সেটা হতে হবে যোগ্যতা ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। কিন্তু এই দাবির জন্য যদি রাস্তা বন্ধ করা হয়, ঘেরাও করা হয়, গাড়ি ভাঙচুর করা হয় তাহলে একজন মানবিক কর্মকাণ্ডের ব্যক্তি হিসেবে কোনভাবেই সেটা সাপোর্ট করা যায়না।"

মি. করিম বলছেন, ছাটাই নিয়ে একটি ভুল ধারণার মধ্যে রয়েছে স্থানীয় কর্মীরা।

তিনি বলছেন, "জরুরী সহায়তার এমন পরিস্থিতিতে অল্প সময়ের জন্য অনেক প্রকল্প থাকে। সেগুলো কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। নতুন প্রকল্প আসে। সেসময় খুব স্বাভাবিকভাবে তার কর্মীদেরও কাজ থাকে ঐ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই।"

রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি যেন কক্সবাজারে ধীরে ধীরে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করছে।

২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে সেখানে আগমনের শুরুতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে রোহিঙ্গারা যেই সহানুভূতি পেয়েছিলো ধীরে ধীরে সেই সহানুভূতি যেন হারিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় জনগোষ্ঠী নানাভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছেন বলে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের উপর তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।

এই প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন বা সাহায্য সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য যে অর্থ খরচ করবে তার অন্তত ২৫ শতাংশ দিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় প্রকল্প নিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বলছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

তিনি বলছেন, "আমরা এনজিওদের নিয়ে বসেছিলাম। হোস্ট কমিউনিটির যে ডিমান্ড আছে যে তাদের লোকজনকে চাকরি দিতে হবে, এনজিওরাও সেটা স্বীকার করেছে।"

"এছাড়া ইউএন অর্গানাইনেজশন বা এনজিওগুলো তাদের বাজেটের ২৫ শতাংশ স্থানীয়দের উন্নয়নে ব্যয় করার যে ঘোষণা দিয়েছে সেই অনুযায়ী কাজও হচ্ছে।"

তবে বিক্ষোভকারীদের আরও দাবি হল: রোহিঙ্গাদের যতদ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে।

কিন্তু যতদিন তারা বাংলাদেশে থাকবে ততদিন তাদের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নির্দিষ্ট এলাকাতে রাখাতে হবে। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ