আজকের শিরোনাম :

দেশের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:৩৪

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনার পর পরই ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

যাত্রীদের কয়েক ধাপে তল্লাশি করা হচ্ছে। যাত্রী ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য। বিজিবির ডগ স্কোয়াড টিমসহ র‌্যাব, পুলিশ ও এপিবিএনের অতিরিক্ত বিশেষ নিরাপত্তা টিম নিয়োগ করা হয়েছে।

এ দিকে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ত্রুটি পায়নি: বিমান প্রতিমন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আয়োজনে কোনো ত্রুটি পাননি বলে দাবি করেছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, এখানে এমন কোনো লিকেজ ছিল না বা এখনও নেই যে, একজন যাত্রী এভাবে বিমানে যেতে পারে। তাহলে কী করে পিস্তল নিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা অতিক্রম করে বিমানে চড়ল একজন অপরাধী- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। আসল ঘটনা জানতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থাকার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।

সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের কথা বলি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলে দেখলাম তিনি ঘটনাটি জানেন। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক পুরো বিষয়টি মনিটর করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিমান সচিব মহীবুল হক বলেন, আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখেছি, অন্য ১০টা যাত্রীর মতো তাকেও (বিমান ছিনতাইকারী) তল্লাশি করা হয়েছিল। তার কাঁধে একটা ব্যাগ ছিল। সেটা স্ক্যান করা হয়েছিল, কিন্তু সেখানে কিছু দেখা যায়নি। তাহলে অস্ত্রটা ভেতরে গেল কীভাবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা অস্ত্র কিনা আমরা ওয়াকিবহাল নই। তদন্ত প্রতিবেদনের পর এটি নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।

সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান বলেন, বিমান থেকে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর ছিনতাইকারী বিমানে একাই ছিল। আমরা সেদিন অনেক কিছুই শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে পুরো বিষয়টি বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, এয়ারক্র্যাফটে গুলিবিনিময় হলে তার চিহ্ন থাকত। আমরা কোনো চিহ্ন কোথাও পাইনি। খেলনা পিস্তলেও শব্দ হয়। যাত্রীরা শব্দ শোনার কথা বলেছেন। ওই পিস্তল আসল নাকি নকল- তদন্ত না করে তা বলা যাবে না।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি: ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত সচিব মোকাব্বির হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার, সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক ফ্লাইট সেফটি উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবির, অবসরপ্রাপ্ত সিকিউরিটি কনসালট্যান্ট গ্রুপ ক্যাপ্টেন আলমগীর এবং বিমানের অবসরপাপ্ত পরিচালক প্ল্যানিং এয়ার কমোডর মাহবুব জাহান খান। বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছেন বিমান সচিব।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত অন্যান্য সংস্থার সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।বিমানবন্দরে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি ডগ স্কোয়াড দিয়েও তল্লাশি করা হচ্ছে। যাত্রী ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দফায় দফায় তল্লাশি করা হচ্ছে যাত্রী ও তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ। এ ছাড়া বিমানবন্দরের আগমন ও বহির্গমন সেলে টিকিটের বিনিময়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

রাজশাহী: হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই বিমানবন্দরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা। ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান জানান, রবিবার ঢাকা থেকে দুবাইগামী বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার পর রাজশাহী বিমানবন্দরেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন। তাই সোমবার সকাল থেকেই নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোসহ যাত্রীদেরও ভালোভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে।

সিলেট: ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি জানিয়েছেন, অন্যদিনের চেয়ে কয়েক দফা নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনার পর ওসমানী বিমানবন্দরের কেপিআই এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের বাইরের এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিজিবির ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে।

বরিশাল: বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক রথীন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় একটি করে স্ক্যানিং মেশিন, আর্চওয়ে ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর আছে। উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টার পর বরিশাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সোমবার সকালে তিনি বরিশাল নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বৈঠক করেছেন।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ