নির্বাচন সন্তোষজনক হয়েছে কি না জনগণ জানে: মাহাবুব তালুকদার
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:২৪
৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন সন্তোষজনক হয়েছে কি না এ নিয়ে নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনে ‘সন্তোষজনক’ এবং ‘স্বাভাবিক’ শব্দ দুটি অতি মাত্রায় ব্যবহার হয়েছে জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘তার মানে কি আমাদের নির্বাচন খুবই সন্তোষজনক হয়েছে?’
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে এক আয়োজনে বক্তব্য রাখছিলেন আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার। ঢাকা উত্তরে মেয়র এবং দুই সিটিতে যুক্ত নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে।
এ সময় মাহবুব তালুকদার তোলেন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ। এবারের ভোট নানা দিক থেকে ছিল ব্যাপক আলোচিত। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবার ভোটে এসে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করেছে। তাদের জোট সাড়ে ১৩ শতাংশ ভোট আর আটটি আসন নিয়ে আছে তলানিতে।
তবে বিএনপি এবং তার জোটের শরিকরা নির্বাচনকে সুষ্ঠু মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ভোট হয়ে গেছে বিভিন্ন আসনে। আর ভোটের দিন তাদের সমর্থকদের ব্যাপকভাবে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
তালুকদার বলেন, ‘বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্য উপাত্ত নিয়ে আমি কিছুটা পড়াশুনা করার চেষ্টা করেছি। এর অভিজ্ঞতা কিঞ্চিত আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি, যা আপনাদের সহায়ক হতে পারে।’
‘আমি এখন পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র দেখেছি তাতে রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষক পর্যন্ত সকলের প্রতিবেদনে দুটি শব্দ অতিমাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। একটি শব্দ হচ্ছে সন্তোষজনক এবং অন্য শব্দটি হচ্ছে স্বাভাবিক। তার মানে কি আমাদের নির্বাচন খুবই সন্তোষজনক হয়েছে?’
‘এই ক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন কি তা নিজেদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে হবে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ করার বিষয়ে আমি সবসময় গুরুত্বারোপ করেছি। এই গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে।’
নির্বাচন কমিশন ‘সুষ্ঠু’ দাবি করলেই ভোট সুষ্ঠু হয়ে যাবে এমন কোনো কথা নেই বলেও মন্তব্য করেন মাহবুব। বলেন, ‘জনতার চোখ বলে একটা কথা আছে। আমাদের ও আপনাদের সকলের কর্মকা- জনতার চোখে পরীক্ষিত হবে। সুতরাং যথার্থ একটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আমাদের সবাইকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনে আমার দুই বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনে সাধারণত কোনো নেতিবাচক বিষয় লিপিবদ্ধ করার বিষয়ে আমরা দ্বিধান্বিত। সবাই যেন কাগজেপত্রে গা বাঁচিয়ে চলতে চান।’
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে দুই বার ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে আলোচনায় আসা মাহবুব বলেন, ‘যদি কেউ তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমার কথার বিরোধিতা করতে পারেন তাহলে আমি খুশি হবো। আমি মনে করি, নির্বাচনে প্রকৃত চিত্রটি সকল প্রতিবেদনে উঠে আসা উচিত।’
নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের পরিচয় স্মরণ করিয়ে কমিশনার বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও মর্যাদা এর কার্যক্রমের উপরে নির্ভর করে। এর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ মাঠপর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
‘সকল প্রার্থীর প্রতি সমআচরণের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠানের সম্মান, মর্যাদা ও পবিত্রতা অক্ষুন্ন রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
এবিএন/মমিন/জসিম