আজকের শিরোনাম :

শেষ হলো প্রচার-প্রচারণা: ভোটের অপেক্ষায় সারাদেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:১৭ | আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার সকাল ৮টায়। টানা ১৯ দিন বিরামহীনভাবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে চষে বেরিয়েছেন প্রার্থীরা। এখন অপেক্ষা ভোটের। প্রার্থী ও ভোটারদের এই অপেক্ষা করতে হবে টানা দুই দিন (৪৮ ঘণ্টা)।

রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। কোনও বিরতি ছাড়া চলবে ওইদিন ৪টা পর্যন্ত। ওইদিন জনরায়ের ফলে গঠিত হবে আগামী ৫ বছরের জন্য নতুন সরকার। যদিও শুরু থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। মহা ধুম-ধামে ঢাক, ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন মহাজোটের প্রার্থীরা।

এদিকে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে গচ্ছিত আছে যাবতীয় নির্বাচনী সামগ্রী। শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) তা চলে যাবে নির্বাচনী সব কেন্দ্রে।

কমিশন থেকে জানিয়েছে, আদালতের রায়ের কারণে শেষ সময়ে কোনও আসনের জন্য ব্যালট ছাপানোর প্রয়োজন হলে ঢাকা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তা পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে হেলিকপ্টার। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায়ও হেলিকক্টারের মাধ্যমে নির্বাচন সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।।

নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রচারণা শেষ হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এই মুহূর্ত পর্যন্ত যতটা প্রস্তুতি দরকার, সেটা আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। নির্বাচনী সামগ্রীসহ ব্যালট পেপার অনেক আসনে পৌঁছে গেছে। বাকি এলাকাগুলোতে ব্যালট পেপার যেতে শুরু করেছে।

দেশের সব দলের অংশগ্রহণে এবারের ভোটে উৎসব প্রত্যাশা করলেও এটি উৎসবের হবে, না শঙ্কার— তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের হামলা-ভাঙচুরে ভোটের দিনের শান্তির পরিবেশ বিনষ্টের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় প্রচারণা উৎসব। এবারের নির্বাচনে মূলত দুটো জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দুই জোটের প্রার্থীর বাইরে আরো কিছু দল নিজ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন।

এবারের নির্বাচন বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা। যেমন এবারই প্রথম সরকার ক্ষমতা থাকা অবস্থায় সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রথম বারের মতো বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পরিবারের কেউ নির্বাচনে মাঠে নেই। তাছাড়া প্রথম বারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহৃত হচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ছিলো নতুন মাত্রা। এবার সব দলের প্রার্থীরাই ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বড় হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। সব দলের প্রার্থীই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজ দল ও প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।

প্রচার-প্রচারণার বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের এক নির্দেশনার আলোকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ‘১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টা ও ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অর্থাৎ, ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল, শোভাযাত্রা করা যাবে না।’

অর্থাৎ, সংসদ নির্বাচনের সব প্রচার কাজ বন্ধ করতে হবে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টার আগেই। আর ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো প্রচারণা চালানো যাবে না।

এছাড়া যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের আগের দিন রাত ১২টা থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, লঞ্চ, ইজিবাইক, ইঞ্জিনবোট ও স্পিডবোটগুলোর চলাচলের ওপর উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

তবে সারাদেশে ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ক্ষেত্র বিশেষ আরো অধিককাল মোটরসাইকেল বা অনুরূপ যান চলাচল নিষেধ থাকবে। এবার নিবন্ধিত ৩৯টি দলই প্রার্থী দিয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী যোগ হয়ে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১ হাজার ৮৪৭ জন।ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার ৩০০ আসনে ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার। নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র ও ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা- ৩ আসনে ভোট স্থগিত করে পুনঃতফসিল দেওয়া হয়েছে। ওই আসনে ভোটারের সংখ্যা চার লাখের বেশি।

ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় ৭ লাখ কর্মকর্তা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৫ লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবেন। এরই মধ্যে সেনা ও নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন।

২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সারা দেশে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ এবং ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সড়ক ও নৌপথে বন্ধ থাকবে যানচলাচল।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ