আজকের শিরোনাম :

যে নির্বাচন সুষ্ঠু নয় সেটা গ্রহণযোগ্য হবে কিভাবে : সুলতানা কামাল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ২০:২১ | আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ২০:২৩

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, নির্বাচন কমিশন একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে’ একজন নির্বাচন কমিশনারের এমন মন্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে সামাজিক রাজনৈতিক কোন সমস্যার সমাধান সুষ্ঠুভাবে হবে না।

সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় নির্বাচনঃ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
 
অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ব্লাসফেমি আইন এদেশে না থাকলেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অজুহাতসহ বিভিন্ন অজুহাতে রাষ্ট্র ব্লাসফেমি আইনের চর্চা করছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যেখানে শূন্য সহনশীল হওয়ার কথা সাম্প্রদায়িক হামলাকারী, নারী নির্যাতনকারী ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের প্রতি আজ তার বিপরীতে রাষ্ট্রের শূন্য সহনশীল অবস্থান হয়ে গেছে মুক্তিবুদ্ধির প্রতি। এ অবস্থান দেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা যে করুণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শনিবার আলোচনার শুরুতে আয়োজকদের পক্ষে  দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তা সংখ্যালঘুদের জন্য দুর্ভাগ্য ও হাহাকার নিয়ে এসেছে। এ অবস্থার অবসানে তিনি সবাইকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ভূমি ও মানবাধিকার কর্মী শামসুল হুদা।

মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক স্বার্থন্বেষী মহল বারবার তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন অজুহাতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম নির্যাতন, অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ অনেক ধরনের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা বাহিনীর ব্যর্থতা বা উদাসীনতাও এই সহিংসতা বিস্তার লাভে বড় ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচন কমিশনও তার সঠিক ভূমিকা পালন করেনি। নির্বাচনকেন্দ্রিক নির্যাতন ও হয়রানী থেকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য দশটি দাবি জানানো হয়। এসব দাবি ও সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশ ও প্রশাসনকে প্রয়োজনে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এদিকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নির্যাতনের ক্ষেত্রে রক্ষক ও ত্রাতার ভূমিকার বদলে রাষ্ট্র নিজেই নিপীড়ক কিংবা পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টচার্য বলেন, যেভাবে বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে দায়মুক্তির উদাহরণ তৈরি করা হচ্ছে তাতে অভয়নগর, নাসিরনগর, ঠাকুরপাড়া, কর্ণাইয়ের মত হামলা নির্যাতনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

বাসদ সভাপতি খালেকুজ্জামান ভূইয়া শিক্ষা ব্যবস্থা সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ধর্মশিক্ষার নামে এদেশে প্রকৃত ধর্ম শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীদের বিচ্যুত করা হয়েছে।

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন, প্রয়োজনে সংখ্যালঘুদের আলাদা দল করতে হবে ।

নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা দাখিলের সময় যাতে ‘আমি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করবো না’’ এমন অঙ্গীকারনামা সবাই পুরণ করেন তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নেতা কাজল দেবনাথ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন, মানবাধিকার কর্মী ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ড. মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট বিনয় কুমার ঘোষ, মানবাধিকার সংগঠক আসিফ ইকবাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সদস্য সচিব দীপক কুমার রায়, গ্রীন বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, উন্নয়ন সংগঠক রেজ্জাকুল হায়দার প্রমুখ।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ