ফেসবুক-ইউটিউবে নজর রাখতে প্রযুক্তি আনছে সরকার
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১১:১৯
নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউব বা গুগলের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর নজর রাখতে সরকার নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের নিরাপদ থাকার জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সেসব ব্যবস্থা আমরা নেব।’
তবে এ বিষয়টিকে তিনি সামাজিক মাধ্যমের ওপর ‘নজরদারি’ বলতে অস্বীকৃতি জানান।
ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা আপনারা ভাবছেন- এ প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘যেসব ক্ষতিকর বিষয় আছে, সেসব যেন আমরা শনাক্ত করতে পারি। আমি তো আর ফেসবুক বন্ধ করে দিতে পারব না। তবে যেখানে যেখানে প্রয়োজন, নিজের ভূখণ্ডকে নিরাপদ রাখতে প্রযুক্তি ব্যবহার করার যতটুকু সুযোগ আছে, ততটুকু প্রযুক্তি ব্যবহার করব।’
এ ধরনের ‘মনিটরিং প্রযুক্তি’ ব্যবহারের কথা মোস্তাফা জব্বার প্রথম উল্লেখ করেন গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে। ‘নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ে ওই আলোচনার আয়োজন করেছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
সরকার কি ফেসবুক, গুগল বা ইউটিউবের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের লক্ষ্যেই এ প্রযুক্তি আনার কথা বলছে? এ প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ শব্দটি নিয়েই আমার আপত্তি আছে। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, এগুলো আমেরিকান প্রতিষ্ঠান। সেদেশের আইনে প্রতিষ্ঠিত। সে দেশের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড দ্বারা পরিচালিত। অন্যান্য দেশে তারা যে রকম সংকট তৈরি করে, আমাদের দেশে সংকটটা একটু বেশি তৈরি হয়। কারণ আমাদের জীবনযাপনের মান আমেরিকানদের মতো নয়। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড ভিন্ন। আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সবই ভিন্ন মাত্রার।’
তিনি বলেন, ‘কাজেই আমাদের এখানে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহৃত হয়, তখন অপব্যবহারের মাত্রাটাও থাকে। আমাদের এখানে এমন কিছু রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে, যে চ্যালেঞ্জ হয়তো বিশ্বের অনেক দেশ মোকাবেলাই করে না। আমাদের এখানে জঙ্গিবাদ আছে, সন্ত্রাস আছে। গুজব প্রচার করা হয়। এ বিষয়গুলোও আছে।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি। বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের কথা বলছি। এ ডিজিটাল বাংলাদেশকে নিরাপদ করার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তাই করব। কাজেই সেখানে আমার জন্য, আমার দেশের নাগরিকদের জন্য ক্ষতিকর যা থাকে, সেই ক্ষতিকর ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেয়ার দায়িত্ব তো নিশ্চয়ই আমাকেই করতে হবে।’
এ কাজের জন্য সরকার যে প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলছে, সেটি তা হলে কী ধরনের হবে? মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এটি মনিটরিং করা থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে ক্ষতিকর উপাদান থাকবে, সেটা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা। ডিজিটাল প্রযুক্তি কেবল মাত্র কোনো একটা শব্দ, বা ছবি বা কোনো একটা সুনির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখনকার প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সক্ষমতা অনেক বেশি। সুতরাং সেই সক্ষমতা অনুযায়ী আমার দেশকে নিরাপদ রাখা, দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখা, ডিজিটাল অপরাধ থেকে নিরাপদ রাখা। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, এ জন্যে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দুটিই লাগবে। এ ক্ষেত্রে যা দরকার হবে, সরকার তাই ব্যবহার করবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার এ উদ্যোগের কথা জানাচ্ছে এমন এক সময়, যখন সরকারের নতুন একটি আইন ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নিয়ে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সরকার এধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন সরকারের সমালোচকরা।
সরকারের এ পদক্ষেপ কি অনেকটা নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ বা বিধিনিষেধ আরোপের মতো ব্যাপার তা হলে- এ প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘কোনো রাষ্ট্র কি এমন একটা ব্যবস্থা নেবে না যে তার নাগরিকদের নিরাপদ রাখা দরকার? এখানে নজরদারির কি আছে! যখন একটি জনসভা হয়, তখন সেখানে যদি আমি সিসিটিভি টাওয়ার বসিয়ে সেই জনসভার দিকে লক্ষ্য রাখি, সেখানে কোনো অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে কিনা, এই নজরদারি তো থাকেই। আমার দেশের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করছে কিনা, সেই নজরদারি তো আমি করবোই। আমার নাগরিকের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অপরাধ করছে কিনা, সেই নজরদারি তো আমাকে করতেই হবে।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে কোনো আশঙ্কার যৌক্তিক কারণ নেই।
তিনি বলেন, ‘অপরাধ না করলে তো আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ দেখি না।’
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ