আজকের শিরোনাম :

মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন : ১৪ ​সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:০৪

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ‌‘মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন’ নামের এই আয়োজন।

এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে (১৪ ​সেপ্টেম্বর) ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হল-

  • সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগোর্নি ১৪ সেপ্টেম্বর মস্কোতে আফগানিস্তানের রাজা জহির শাহের সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তির স্বার্থেই বাংলাদেশ সংকটের আশু সমাধান দরকার। সম্প্রতি স্বাক্ষরিত সোভিয়েত-ভারত মৈত্রী চুক্তিকে তিনি এশিয়া ও বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেন।
  • রয়টার্স জানায়, অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য বিরোধী দল লেবার পার্টি যুক্তরাজ্য সরকারকে চাপ দেবে। ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতি যে শান্তির জন্য বিপজ্জনক, জাতিসংঘে এ যুক্তি তোলার জন্য তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক হোমকেও অনুরোধ জানাবে।
  • ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি সফররত যুক্তরাজ্য ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের দূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এদিন দেশটির কয়েকজন সাংসদের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে আলোচনা করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিনল্যান্ডের এক প্রতিনিধি বাংলাদেশের সংগ্রামের পক্ষে তাঁর সরকারের সমর্থন আদায়ের আশ্বাস দেন। এরপর তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ আন্দোলনের ব্যাপকতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে ফিনল্যান্ড সরকার সজাগ রয়েছে। সন্ধ্যায় বিচারপতি চৌধুরী ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত সংবাদপত্র সুয়োম্যান সোসিয়লি ডেমোক্রাতের সম্পাদকসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ভ্যাটিওসারিয়োর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা বাংলাদেশ আন্দোলনকে যথাসম্ভব সাহায্য করার আশ্বাস দেন।
  • বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার্থে কয়েকটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল্লাহ চৌধুরী এদিন মুজিবনগরে আসেন। তিনি জানান, মুক্তিবাহিনীর চিকিৎসায় তাঁরা মুক্তাঞ্চলে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবেন।
  • দিল্লি সফররত বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রতিনিধি মঈদুল হাসান এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সচিব পি এন ধর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বিষয়ে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ডি পি ধরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
  • ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গসহ সীমান্ত রাজ্যগুলোকে সম্ভাব্য পাকিস্তানি আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। রাজ্যের মুখ্য সচিব এদিন সাংবাদিকদের বলেন, পশ্চিমবঙ্গসহ সারা দেশে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ভারত সরকারের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে ভারত আক্রমণের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে। বর্ষণ থেমেছে। যেকোনো সময় তারা ভারতের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। সম্ভাব্য এই আক্রমণ মোকাবিলায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশের গোয়েন্দা ও বিশেষ বিভাগ ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
  •  পাকিস্তান সংকট নিয়ে ইরানের শাহের সঙ্গে আলোচনা করতে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৪ সেপ্টেম্বর ইরান সফরে যান। পাকিস্তানের বর্তমান ঘটনাবলি সম্পর্কেও ইয়াহিয়া ইরানের শাহকে অবহিত করবেন।
  • ১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা এদিন ফেনীতে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর মর্টার আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি বাহিনী কামান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে পাল্টা আক্রমণ করে। দুই পক্ষে দুই ঘণ্টা গোলা বিনিময় হয়। এই সেক্টরের আরেক দল মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটের কাছে পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশ করেন। এতে একটি জিপ ক্ষতিগ্রস্ত এবং কয়েকজন সেনা হতাহত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধাও আহত হন।
  • ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েসপুরে পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর রকেট লাঞ্চারের সাহায্যে আক্রমণ চালান। এতে পাকিস্তানি সেনাদের দুটি বাংকার ধ্বংস এবং কয়েকজন সেনা হতাহত হয়। এই সেক্টরের আরেক দল মুক্তিযোদ্ধা কসবা এলাকায় অতর্কিতে আক্রমণ করলে দুজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।
  • ৮ নম্বর সেক্টরে একদল মুক্তিযোদ্ধা আলফাপুর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকজন নিহত হয়।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক, দুই ও আট; মূলধারা ’৭১, মঈদুল হাসান, ইউপিএল, ঢাকা; স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি, আবদুল মতিন, র‍্যাডিকেল এশিয়া পাবলিকেশন্স, লন্ডন, যুক্তরাজ্য; আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর, কলকাতা, ভারত, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ