আজকের শিরোনাম :

মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন : ১৬ জুন, ১৯৭১

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২১, ১১:৪০

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ‌'মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন' নামের এই আয়োজন।

এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে (১৬ জুন) ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হল-

  • ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং বাংলাদেশের ঘটনাবলি ও শরণার্থীসংকট নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হোয়াইট হাউসে নিক্সনের সঙ্গে দেখা করে তিনি তাঁকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এ ব্যাপারে ভারতের মনোভাব সবিস্তার জানান।
  • শরণ সিং নিক্সনকে জানান, পাকিস্তানের কার্যকলাপে ভারত মারাত্মক সংকটের সম্মুখীন। বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে বাধ্য করার জন্য সম্মিলিত আন্তর্জাতিক প্রয়াস প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য ভারত উদ্ভূত সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চায়। বিশ্ববাসী অবিলম্বে কিছু না করলে নিজ স্বার্থ রক্ষায় ভারত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
  • জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট ১৬ জুন বিবৃতি দিয়ে জানান, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা শরণার্থীদের সংকট এতটাই গুরুতর যে তিনি আফ্রিকান সংহতি সংস্থার সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আদ্দিস আবাবা সফর বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি মনে করছেন, এই বিরাট সংকট মোকাবিলায় তাঁর এখন 
  • জাতিসংঘের সদর দপ্তরে থাকাই বাঞ্ছনীয়। উ থান্ট বিশ্বের সরকারগুলোর কাছে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য আবারও আহ্বান জানান।
  • ব্রিটেনের কমন্স সভার ১২০ জনের বেশি সদস্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে এক আবেদনে বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিপদের কারণ বলে বিবেচনা করা হোক। এই আবেদনে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার নিন্দা করে বলা হয়, তারা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সব অধিকার পদদলিত করেছে।
  • বাংলাদেশের শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশায় বিশ্ব শান্তি পরিষদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। এক বিবৃতিতে পরিষদ বিশ্বের সব দেশের শান্তি পরিষদের শাখা কমিটিগুলোকে শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য আহ্বান জানায়। শান্তি পরিষদ বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠারও দাবি জানায়।
  • ব্রিটেনপ্রবাসী বাঙালি নারীদের সংগঠন মহিলা সমিতির নেতা-কর্মীরা লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ সভা করেন। পাকিস্তানে আমেরিকার সমরাস্ত্র সরবরাহের প্রতিবাদে এই সভা আয়োজিত হয়। এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটির আবদুল হাই খান ও রাজিয়া চৌধুরী দূতাবাসের সামনে অনশন পালন করেন।
  • ব্রিটেনের ডেইলি মিরর পত্রিকা খ্যাতনামা সাংবাদিক জন পিলজারের ‘একটি জাতির মৃত্যু’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জন পিলজার পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে বাংলাদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদন লেখেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে নির্বিচার বাঙালিদের হত্যা ও নির্যাতনের ভীতিজনক এক বিবরণ দেওয়া হয়।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র প্রাভদায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে সীমান্ত এলাকায় অগণিত শরণার্থী এসে ভিড় করায় অবস্থা সঙিন হয়ে উঠেছে। ভারত সীমান্ত এলাকা থেকে কিছু শরণার্থী দেশের ভেতরে নিতে চাইছে। সেখানে সাহায্য সরবরাহ করা সহজ হবে।
  • ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুরেন্দ্রনাথ সিং সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় জানান, বাংলাদেশের ঘটনাবলি ও শরণার্থী পরিস্থিতি এবং এ বিষয়ে ভারতের মনোভাব বিভিন্ন দেশকে জানাতে আরও ছয়জন মন্ত্রী বিদেশ সফরে যাবেন। তিনি বলেন, বৃহৎ রাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের সরকার ভারতকে আশ্বাস দিয়ে বলেছে যে বলপ্রয়োগ বন্ধ করে যাতে পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক সমাধানের পথ নেওয়া হয়, সে জন্য তাঁরা পাকিস্তান সরকারের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের বক্তব্য এখন ইতিবাচকভাবে গৃহীত হচ্ছে। তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভারতের কথা জানাতে বিদেশে গেছেন। আরও ছয়জন যাবেন।
  • ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম রাজ্যসভায় বলেন, যেকোনো সীমান্ত আক্রান্ত হলেই তার মোকাবিলায় ভারত প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তুত।
  • ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরশাদ জাহেদি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নীতিকে সমর্থনসংক্রান্ত ইরানের শাহের একটি বার্তা নিয়ে এদিন করাচি আসেন।
  • পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী রাওয়ালপিন্ডিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা স্বাভাবিক এবং পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি এবং পিডিপি নেতা মাহমুদ আলী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করার জন্য পূর্ব পাকিস্তান থেকে রাওয়ালপিন্ডি যান।
  • ঝালকাঠির বৈশাইল থানা এলাকায় পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় সহযোগীদের সহায়তায় হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হন।
  • চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর চাঁদগাজী ঘাঁটিতে পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
  • গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের কোদালধোয়া ঘাঁটির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল চারটি স্পিডবোটে করে আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী তাদের প্রতিরোধ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
  • বৃহত্তর কুমিল্লার রাজাপুর রেলস্টেশন ঘাঁটি থেকে টহল দিতে আসা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনীর একটি দল অ্যামবুশ করে। দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের পর প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, ওয়াকিটকি সেট ও অন্য জিনিস মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
  • মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল কসবা এলাকার বগাবাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি টহল দলকে অ্যামবুশ করে। পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকজন হতাহত হয়।
  • যশোরের বেনাপোলে পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় পাকিস্তানি সেনারা ক্ষতির শিকার হয়।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক, দুই ও আট; মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি: যুক্তরাজ্য, আবদুল মতিন, সাহিত্য প্রকাশ; ইত্তেফাক ও আজাদ, ১৭ ও ১৮ জুন ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর, ভারত, ১৭ ও ১৮ জুন ১৯৭১।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ