সাংবাদিককে কেন 'আত্মহত্যার পরামর্শ' দিলেন রেল সচিব?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:০৩

ঢাকার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে 'খামোশ' বলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন। এর জের ধরে তাকে দু:খ প্রকাশ করতে হয়েছিলো বিবৃতি দিয়ে এবং ওই প্রতিবেদক সশরীরে দেখা করার পর তাকে সমবেদনা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীও।

সে ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার আরেকজন সাংবাদিকের সাথে সরকারের একজন সচিবের কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ওই সচিব সাংবাদিককে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দিচ্ছেন।

এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করেছে বেসরকারি সময় টেলিভিশন। প্রতিবেদনে দেখা যায় রিপোর্টার নাজমুস সালেহী গিয়েছিলেন ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে।

সেখানে তিনি দেখতে পান ঢাকা কোলকাতা ট্রেনের টিকেটের দাম হলো ২,৪৩২ টাকা কিন্তু টিকেটে মোট মূল্য লেখা ২,৫০০ টাকা।

প্রতি টিকেটে এভাবে ৬৮ টাকা করে বেশি নেয়া হলে বছরে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে মোট বেশি নেয়া হচ্ছে বছরে ৪০ লাখেরও বেশি বলে ওই প্রতিবেদন বলা হচ্ছে।

এ টাকা কোথায় যাচ্ছে - তা নিয়ে কর্মকর্তারা কিছু বলতে রাজী হওয়ায় মিস্টার সালেহী যান রেল সচিব মোফাজ্জল হোসেনের কাছে।

তিনি সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেন, "এটা নিয়ে আপনার এতো উৎসাহ কেনো। যে নিয়মিত কোলকাতায় যায় সে জিজ্ঞেস করুক। তাকে বলবোনে। আমাদের কাছে তো এটার ব্যাখ্যা আছে"।

এ পর্যায়ে রিপোর্টার সে ব্যাখ্যা তাকে (সচিবকে) অন রেকর্ড দিতে বললে সচিব বলেন, "এ ব্যাখ্যা আপনার দরকার কেন?"

এরপর আরেকজন কর্মকর্তা মিয়া জাহানকে ডেকে পাঠান সচিব। সেখানে মিয়া জাহান পরদিন বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান।

কিন্তু একদিন সময় দিয়েও ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজী না হওয়ায় সাংবাদিক নাজমুস সালেহী আবারো সচিবের কাছে যান।

সেখানেই কথোপকথনের এক পর্যায়ে রিপোর্টারকে উদ্দেশ্য করে সচিবের কণ্ঠে শোনা যায়, "আপনি এখন আত্মহত্যা করেন। একটি স্টেটমেন্ট লিখে যান যে রেলের লোকেরা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেনা। এই মর্মে ঘোষণা দিলাম যে তারা কথা না বলার কারণে আমি আত্মহত্যা করলাম"।

সচিবের এমন বক্তব্য তার কণ্ঠেই সময় টেলিভিশন তার প্রচার করেছে রেল টিকেটের বিষয়ে তাদের প্রতিবেদনে।

রিপোর্টার নাজমুস সালেহী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, "প্রতিবেদনে আমরা পুরো ঘটনা তুলে ধরেছি। ঘটনাটা সম্পূর্ণ সত্যি। রেল সচিব আমাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন। এখন আমার অফিস বিষয়টি দেখছে"।

সচিব বলছেন - তিনি রসিকতা করেছিলেন

রেল সচিব মোফাজ্জল হোসেন স্বীকার করেছেন তিনি কথাগুলো (আত্মহত্যা করতে বলা) বলেছিলেন কিন্তু সেটি তিনি বলেছিলেন 'রসিকতা' করে।

"আমি রসিকতা করে বলেছিলাম। আমি বুঝিনি যে সে ওভাবে নেবে। একেবারেই ফান করার জন্য বলেছিলাম, মিন করে বলিনি"।

"তারপরেও কোনো ভুল হলে আমি স্যরি বলছি। তাকে আপন ভেবেই রসিকতা করে বলেছি। তাকে আমি স্নেহের দৃষ্টিতে দেখি। ব্যাপারটা সে এভাবে নেবে তা ভাবিনি"।

মিস্টার হোসেন বলেন, ঘটনার দিন তিনি খুবই ব্যস্ত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা ছিলো। তারপরেও তিনি ওই সাংবাদিককে সহযোগিতা করেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

একজন কর্মকর্তাকে ডেকে ওই সাংবাদিকের সাথে কথা বলারও নির্দেশ দিয়েছিলাম, সচিব বলেন।

সচিবের বক্তব্য সম্পর্কে আইনজীবীর অভিমত

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে বলেছেন সচিব রসিকতা বা তামাশা যাই বলুননা কেন সচিবের পদে থেকে এটা তিনি ঠিক করেননি।

"এটি আত্মহত্যার প্ররোচনা হবে কিনা সেটার সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। তবে রেল সচিব সরকারি একজন কর্মকর্তা। কর্মকর্তা না হলে হয়তো কেউ তার কাছে এ বিষয় মন্তব্য নিতে যেতোনা।"

"দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে এ ধরনের মন্তব্য পেশাদারী অসদাচরণ। তাই সেটি মুখ ফসকে হলেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন"।

মিস্টার বড়ুয়া বলেন, এখন সচিব বলছেন তিনি মজা করে বলেছেন কিন্তু যাকে বলেছেন তার সাথে সম্পর্কটি মজার হলে তো বিষয়টি বাইরে এভাবে আসতোনা। এ বিষয়টিও ভেবে দেখার সুযোগ আছে।

তবে এ বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক নেবেন কি-না তা নিশ্চিত নয়। বিবিসি বাংলাকে তিনি শুধু বলেছেন, "বিষয়টি তার অফিস দেখছে"।

তদন্ত হবে ভাড়া নিয়ে

ওই প্রতিবেদনে ঢাকা কোলকাতা রেলের বেশি ভাড়া নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন রেল সচিব।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "বিষয়টা হলো দুদেশের রেলের জয়েন্ট কমিটি ভাড়া নির্ধারণ করে। ভাড়া ডলারে নির্ধারিত হয় কিন্তু পেমেন্ট হয় টাকা।" "সে কারণে টাকার পরিমাণ কম বেশি হয়। যে কারণে রাউন্ড আপ করে এভাবে ভাড়া নির্ধারণ করি"।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ