আজকের শিরোনাম :

জামিন অর্ণবের, সুবিচার চাইছেন কাপ্পানের স্ত্রী

  আনন্দবাজার

১২ নভেম্বর ২০২০, ১০:২৭ | অনলাইন সংস্করণ

ভারতের মহারাষ্ট্র সরকারের উদ্দেশে একগুচ্ছ কড়া প্রশ্ন তুলে রিপাবলিক টিভির প্রধান সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার (১১ নভেম্বর) রাতেই তালোজা জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। 

ইন্টিরিয়র ডিজাইনার অন্বয় নাইক ও তাঁর মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে অর্ণব ও আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল মুম্বাই পুলিশ। সুইসাইড নোটে অন্বয় লিখেছিলেন, তাঁকে দিয়ে কাজ করিয়েও টাকা মেটানো হয়নি। সেই প্রসঙ্গে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছে, টাকা না-দেওয়াটা কি আত্মহত্যায় প্ররোচনার পর্যায়ে পড়ে? আদালতের বক্তব্য, ‘‘আগামিকাল যদি মহারাষ্ট্রে কোনও ব্যক্তি সরকারকে অভিযুক্ত করে আত্মঘাতী হন, তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হবে?’’  

জেল থেকে বেরিয়ে অর্ণবও বলেন, ‘‘উদ্ধব ঠাকরে শুনে রাখুন আপনি হেরে গিয়েছেন।’’

মুম্বাই হাইকোর্টে অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জি খারিজের পরে আজ সুপ্রিম কোর্টে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে অর্ণবের ওই আবেদনের শুনানি হয়। ৫০ হাজার টাকার বন্ডে অর্ণব এবং এই মামলায় ধৃত অন্য দু’জনকে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। তবে অর্ণবকে তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও সর্বোচ্চ আদালতে এত দ্রুত অর্ণবের আর্জির শুনানি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে। গত মাসে হাথরস ধর্ষণ কাণ্ডের খবর করতে গিয়ে যোগী সরকারের পুলিশের হাতে ইউএপিএ-তে গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের স্ত্রী রাহাইয়ানাথ বলেছেন, ‘‘অর্ণবের গ্রেফতারিকে ‘জরুরি অবস্থার মতো ঘটনা’ বলেছিলেন কোনও কোনও মন্ত্রী। অথচ আমার স্বামীর গ্রেফতারি নিয়ে তাঁরা চুপ। এই দ্বিচারিতা কেন?’’ 

সরকারের হাতে কী ভাবে সাধারণ মানুষকে ‘নিশানা’ হতে হয়, তা নিয়েও আজ মহারাষ্ট্র সরকারের উদ্দেশে বেশ কিছু চাঁছাছোলা মন্তব্য করেছেন আদালত। 

বিচারপতিরা বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকারগুলি যদি কোনও ব্যক্তিকে নিশানা করে, তা হলে তাদের বোঝা উচিত, নাগরিকদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য একটি সর্বোচ্চ আদালত রয়েছে। হাইকোর্টগুলিকেও একটি বার্তা দেওয়া দরকার। ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে তুলে ধরার কাজে আপনাদের আইনি ক্ষমতাকে ব্যবহার করুন।’’ 

সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, ব্যক্তি-স্বাধীনতার বিষয়গুলিতে দায়রা আদালত ও হাইকোর্ট জামিন দেয় না। বিষয়টি তখন সুপ্রিম কোর্টে আসে, যার উপরে ইতিমধ্যেই বহু মামলার চাপ। 

অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের আত্মহত্যা-পরবর্তী ঘটনাক্রম ঘিরে রিপাবলিক টিভির প্রতিবেদনে মহারাষ্ট্র সরকারের কড়া সমালোচনা করা হচ্ছিল। অর্ণব-ঘনিষ্ঠদের দাবি, তাই সরকারের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি। আজ বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘সরকারের উচিত টিভির খোঁচা উপেক্ষা করা। আমাদের গণতন্ত্রে অনেক সহনশীলতা আছে। কোনও চ্যানেল ভাল না-লাগলে দেখবেন না। আমি ওঁর চ্যানেল দেখি না। মতাদর্শ আলাদা হতেই পারে। কিন্তু আজ আদালত হস্তক্ষেপ না-করলে বলতে হয়, নিঃসন্দেহে আমরা ধ্বংসের পথে চলেছি।’’

যদিও আদালতের এই ‘তৎপরতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলকে চিঠি লিখেছেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুষ্মন্ত দাভে। একই ধরনের অন্য মামলাকারীদের অপেক্ষায় রেখে প্রত্যেক বার অর্ণবের আবেদনগুলিকে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির তালিকায় রাখা হয় বলে অভিযোগ তুলে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে দেশের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের কোনও ‘বিশেষ নির্দেশ’ আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন। দাভের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সুবিচার চেয়ে সেক্রেটারি জেনারেলকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন অর্ণবের স্ত্রী সাম্যব্রতা রায় গোস্বামী। 

সুবিচার চাইছেন সিদ্দিক কাপ্পানের স্ত্রীও। রাহাইনাথের অভিযোগ, তাঁর স্বামীর জামিনের প্রক্রিয়া পিছিয়েই চলেছে। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অথচ জেলে গিয়ে কাপ্পানের সঙ্গে দেখা করা তো দূর, ভিডিও কলেও কাপ্পানকে দেখতে পারছেন না তাঁরা। 

অর্ণবের আইনজীবী হরিশ সালভে আদালতে আজ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘উনি কি জঙ্গি?’’ আশা-ভরসা হারানো কাপ্পানের স্ত্রীরও প্রশ্ন, ‘‘ওর অপরাধটা কি? অর্ণবকে নিয়ে এত হইচই। বুঝতে পারছি না, আমার স্বামীর ক্ষেত্রে সবাই চুপ কেন?’’ 

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ