মানসিক অস্থিরতা যেভাবে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশমের উপায়
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৪৬
আপনি কি স্থির থাকতে পারেন না? দারুণ! না, আসলেই, এটা ভালো খবর। ছোট বেলায় আপনার শিক্ষক আপনাকে যাই বলুক না কেন, এটা হয়তো আসলেই খুব খারাপ কোনো অভ্যাস ছিল না।
বলা হয় যে, আপনি যদি বাস্তব জীবনে ফিজেট বা অস্থির বা ছটফটে স্বভাবের হয়ে থাকেন এবং আপনার চারপাশের মানুষজনের কাছে যদি আপনি ভয়ংকর বিব্রতকর হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার এই বিভ্রান্তিকর অভ্যাস আপনার শরীর ও মনের জন্য ভালো।
বিবিসির উপস্থাপক, বিজ্ঞানী এবং বীণাবাদক ডা. ক্যাট আর্নি পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, মানুষ কেন ক্রমাগত কলম টকটক করে, অন্যমনস্কভাবে হিজিবিজি কাটে বা হাঁটু কাঁপায়।
ফিজেট বা অস্থিরভাবে নড়াচড়া করাটা আসলে কী?
নিউইয়র্কের স্নায়ুবিজ্ঞানী অ্যান চার্চল্যান্ড বলেছেন, ‘ল্যাবে আমরা ফিজেট বা অস্থিরভাবে নড়াচড়া করা বলতে এমন যে কোনো ধরনের নড়াচড়াকে বোঝাই যা সরাসরি কোনো ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়।’
অ্যান বলেন, বিভিন্ন ধরনের অস্থির নড়াচড়া বা কর্মকাণ্ড রয়েছে। এক ধরনের অস্থির নড়াচড়া হয় পুনরাবৃত্তিমূলক এবং ছন্দময়, যেমন কলম টকটক করা কিংবা এক পা নাড়ানো। দ্বিতীয় ধরনের অস্থির স্বভাব হতে পারে যেখানে ব্যক্তি অস্বস্তিবোধ করে এবং বসে থাকার সময় চেয়ারে দুলতে থাকে। তৃতীয় ধরনের অস্থির স্বভাব সাধারণত গায়ক কিংবা খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা যায়। তারা এমন বিশেষ একটি আচরণ করে যা তারা খুব ভালোভাবে করতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ক্রিকেটার হয়তো ব্যাট করার সময় এমন ধরণের কিছু আচরণ করে যা আসলে তার ব্যাটিংয়ের অংশ বলেই মনে হয়।
মানুষ কেন ফিজেট বা অস্থিরতার কারণে নড়াচড়া করে?
আপনার...আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা বুঝিই না যে এটা আমরা করছি। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে, ফিজেটিং বা স্নায়বিক অস্থিরতার তেমন কোন মানে হয় না: এতে শক্তি খরচ হয়, তাই এর একটি শারীরিক ব্যয় তো রয়েছেই। এর জন্য সামাজিকভাবেও মূল্য দিতে হয়- এটা প্রায়ই আমাদের আশেপাশের মানুষদের জন্য বিরক্তিকর হয়। তবে এর কিছু সুবিধাও রয়েছে। অ্যান চার্চল্যান্ড মনে করেন, এ ধরনের কাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো মষ্কিস্কের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। চিন্তা করতে সাহায্য করে
অ্যান বলেন, ‘আমরা যখন মস্তিষ্ক ব্যবহার করে কঠিন কোন কাজ করে থাকি, তখন এগুলো হয় শরীর নড়াচড়া করার জন্য যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে সেগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে। তাই এ ধরনের কঠিন কাজ করার সময় আমরা আমাদের স্নায়বিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল করি নড়াচড়া করার মাধ্যমে।’ অ্যান বলেন, সহজ করে বলতে গেলে, যদিও আমরা জানি যে, কোন কিছু চিন্তা করতে গেলে স্থির এবং শান্ত হতে হয়, তবুও অনেকেই সেটা পারেন না। অনেকের ক্ষেত্রে এটা হয়তো চিন্তা করা মানেই নড়াচড়া করা। তাাদের এমন ধরনের নড়াচড়া করতে হয় মস্তিষ্ককে সজাগ এবং সচল করার জন্য। মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রোনাল্ড রৎজ অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার-এডিএইচডি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তিনি ‘ফিজেট টু ফোকাস’ নামে একটি বইও লিখেছেন। তিনি বলেন, ফিজেটিং বা অস্থির স্বভাবের কারণে পুনরাবৃত্তিমূলক অর্থাৎ ঘুরে ঘুরে করতে থাকা একই কাজ আমাদের মনোযোগী হতে সাহায্য করার জন্য শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মাত্র। যখন আমরা মনোযোগী হতে পারি না, বা মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই তখন মনোযোগ ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের দেহ এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে। এ ধরনের আচরণ সাধারণত এডিএইচডি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, কিন্তু এমন আচরণ অবচেতন মনে সবাই করে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায়
অস্থিরতার কারণে যে অস্বাভাবিক নড়াচড়া করতে হয় এবং তার জন্য যে শক্তি খরচ হয় তা উপকারীও হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব লিডসের নিউট্রিশনাল এপিডেমিওলজির অধ্যাপক জ্যানেট কেইড নারীদের উপর ১২ বছর ধরে একটি গবেষণা চালিয়েছেন, যেখানে তিনি দেখার চেষ্টা করেছেন যে তারা কতটা সময় স্থিরভাবে বসে থেকে কাটায় এবং কতটা সময় অন্য কাজ করে কাটায়। তাদের অস্থিরতার কারণে নড়াচড়ার করার অভ্যাস সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওই ১২ বছরে, যেসব নারীরা স্থির ভাবে বসে সময় বেশি কাটিয়েছেন এবং যাদের অস্থিরতার কারণে নড়াচড়ার স্বভাব নেই তাদের মধ্যে ওই সময়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি ছিল। আর যেসব নারীর অস্থিরতার কারণে নড়াচড়ার স্বভাব ছিল তাদের মৃত্যু ঝুঁকি কম ছিল: গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা স্থিরভাবে এক সাথে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় বসে থাকতেন তাদের তুলনায় ফিজেটার বা যারা এ ধরণের নড়াচড়া করতেন তাদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কম ছিল। কেন?
কারণ অস্থিরতার কারণে নড়াচড়া করলে তা ক্যালরি খরচ করে দেহের ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করে, দেহকে কর্মক্ষম রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়, বলেন জ্যানেট। তা হলে অস্থিরতার কারণে নড়াচড়া করা কি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের অংশ? সংক্ষেপে বলতে গেলে, হ্যাঁ। আপনি যদি খুব বেশি সক্রিয় না হয়ে থাকেন তাহলে ফিজেটিং বা অস্থিরতার কারণে নড়াচড়ার অভ্যাস তৈরি করে দেখতে পারেন। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা দূর করতে এবং শান্ত হতে সাহায্য করে
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মধ্যে ফিজেটিংয়ের ছোঁয়া আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বুনন এর মতো কাজ, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চমৎকার হতে পারে। স্টিচলিংকস নামে একটি সংস্থার পরিচালক বেটসান কোরখিল কারুশিল্প বিশেষ করে বুননের চিকিৎসাগত উপাদান সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। তিনি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগছেন এমন মানুষদের সমন্বয়ে একটি বুনন গ্রুপ পরিচালনা করেন। এটি দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তি দূর করতে সহায়তা করে বলে জানা যায়। ২০১৩ সালে ৩১টি দেশের ৩ হাজার ৫০০ জন বুননকারীর ওপর একটি জরিপ চালানো হয় যারা এর যাদুকরী গুণাবলির পক্ষেই মত দিয়েছেন। বেটসান বলেন, ‘আমাদের তথ্য বলছে, তারা যত বেশি বুনন করে তত বেশি সুখী এবং শান্ত হয়।’ স্মৃতিভ্রম বা ডিমেন্সিয়া রোগীদের সহায়তা করে
যুক্তরাজ্যে ডিমেন্সিয়া নিয়ে কাজ করেন ডেভ বেল, যিনি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নার্স। তার অনেক রোগীর জন্য ফিজেটিং বা অস্থিরতার কারণে অস্বাভাবিক নড়াচড়া করাটা একটা সাধারণ কাজ, তা সেটি হাঁটা কিংবা পোশাকের মুড়ি সেলাই করে সময় কাটানোই হোক না কেন। কারণ স্মৃতিভ্রমের শিকার কোন ব্যক্তি শারীরিকভাবে অস্বস্তি কিংবা ব্যথায় ভোগেন। অনেকের ক্ষেত্রে পরিবেশগত উপাদান তাদেরকে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ফেলে, অন্যদিকে অনেকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধনের কারণে তারা পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে থাকে। যদিও এটা দেখতে পীড়াদায়ক মনে হয়, তার পরও ফিজেটিং হচ্ছে নিজে নিজে শান্ত হওয়ার একটা প্রক্রিয়া। ডেভ বলেন, ‘আমার মনে হয় যেসব ব্যক্তি এ ধরণের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, হাত দিয়ে কিছু করা বা হাঁটাহাঁটি করা নিশ্চিতভাবেই তাদের মানসিক চাপ কমায়।’ স্টিচলিংকস ফিজেটিংয়ের উপাদান হিসেবে পুঁতি, বোতাম, বেল এবং ফিতা দিয়ে হাতে বোনা মাফ বা বিশেষ ধরনের হাত গরম করার পোশাক তৈরি করছে। আর আলঝেইমার সোসাইটি স্মৃতিভ্রমের রোগীদের মধ্যে উদ্বেগ কমাতে ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের সাথে মিলে ফিজেটের অংশ হিসেবে কাঠের ছোট যন্ত্র তৈরি করছে। ডেভ বলেন, ‘এর খুব ভালো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসবের কারণে তাদের আচরণে যে পরিবর্তন এসেছে সেটি আমি দেখেছি। ফিজেট করা উচিত নাকি উচিত নয়?
তা হলে কি শ্রেণীকক্ষে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য আমাদের সবারই নড়াচড়া করা, এমনি এমনি ঘুরতে থাকা, ঝাঁকানো কিংবা দোল খাওয়া উচিত? হয়তো, কিন্তু সেটা সঠিক উপায়ে করতে হবে। ‘এটা ভারসাম্য বজায় রাখার একটি ভাল উপায়,’ বলেন রোনাল্ড রৎজ। কখনো কখনো ক্লাসের লেকচারের তুলনায় কাগজে হিজিবিজি কাটা-টাও বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে, বিষেশ করে তখন, যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে, ফিজেট বা অস্থির আচরণ আসলে আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে না। ‘ভালো ডুডল বা হিজিবিজি কাটা হচ্ছে শুধু এক ধরণের শেড তৈরি করা,’ বলেন সাইকোলজিস্ট। তাই আমরা কোন ধরনের ফিজেট বা অস্থির আচরণ করছি তা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া কারো জন্য উপকারী ফিজেট বা অস্থির নড়াচড়া হয়তো অন্যদের জন্য মনোযোগ নষ্টের কারণ হতে পারে। তাই এগিয়ে যান- হাতের আঙুল দিয়ে মৃদু আঘাত করুন, খট খট শব্দ করুন কিংবা খেয়াল খুশিমত মোচড়ান- কোন বাধা নেই, তবে যাই করুন না কেন, একটু দায়িত্ববোধ বজায় রাখুন।
তথ্যসূত্র : বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
আপনার...আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা বুঝিই না যে এটা আমরা করছি। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে, ফিজেটিং বা স্নায়বিক অস্থিরতার তেমন কোন মানে হয় না: এতে শক্তি খরচ হয়, তাই এর একটি শারীরিক ব্যয় তো রয়েছেই। এর জন্য সামাজিকভাবেও মূল্য দিতে হয়- এটা প্রায়ই আমাদের আশেপাশের মানুষদের জন্য বিরক্তিকর হয়। তবে এর কিছু সুবিধাও রয়েছে। অ্যান চার্চল্যান্ড মনে করেন, এ ধরনের কাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো মষ্কিস্কের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। চিন্তা করতে সাহায্য করে
অ্যান বলেন, ‘আমরা যখন মস্তিষ্ক ব্যবহার করে কঠিন কোন কাজ করে থাকি, তখন এগুলো হয় শরীর নড়াচড়া করার জন্য যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে সেগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে। তাই এ ধরনের কঠিন কাজ করার সময় আমরা আমাদের স্নায়বিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল করি নড়াচড়া করার মাধ্যমে।’ অ্যান বলেন, সহজ করে বলতে গেলে, যদিও আমরা জানি যে, কোন কিছু চিন্তা করতে গেলে স্থির এবং শান্ত হতে হয়, তবুও অনেকেই সেটা পারেন না। অনেকের ক্ষেত্রে এটা হয়তো চিন্তা করা মানেই নড়াচড়া করা। তাাদের এমন ধরনের নড়াচড়া করতে হয় মস্তিষ্ককে সজাগ এবং সচল করার জন্য। মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রোনাল্ড রৎজ অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার-এডিএইচডি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তিনি ‘ফিজেট টু ফোকাস’ নামে একটি বইও লিখেছেন। তিনি বলেন, ফিজেটিং বা অস্থির স্বভাবের কারণে পুনরাবৃত্তিমূলক অর্থাৎ ঘুরে ঘুরে করতে থাকা একই কাজ আমাদের মনোযোগী হতে সাহায্য করার জন্য শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মাত্র। যখন আমরা মনোযোগী হতে পারি না, বা মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই তখন মনোযোগ ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের দেহ এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে। এ ধরনের আচরণ সাধারণত এডিএইচডি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, কিন্তু এমন আচরণ অবচেতন মনে সবাই করে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায়
অস্থিরতার কারণে যে অস্বাভাবিক নড়াচড়া করতে হয় এবং তার জন্য যে শক্তি খরচ হয় তা উপকারীও হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব লিডসের নিউট্রিশনাল এপিডেমিওলজির অধ্যাপক জ্যানেট কেইড নারীদের উপর ১২ বছর ধরে একটি গবেষণা চালিয়েছেন, যেখানে তিনি দেখার চেষ্টা করেছেন যে তারা কতটা সময় স্থিরভাবে বসে থেকে কাটায় এবং কতটা সময় অন্য কাজ করে কাটায়। তাদের অস্থিরতার কারণে নড়াচড়ার করার অভ্যাস সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওই ১২ বছরে, যেসব নারীরা স্থির ভাবে বসে সময় বেশি কাটিয়েছেন এবং যাদের অস্থিরতার কারণে নড়াচড়ার স্বভাব নেই তাদের মধ্যে ওই সময়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি ছিল। আর যেসব নারীর অস্থিরতার কারণে নড়াচড়ার স্বভাব ছিল তাদের মৃত্যু ঝুঁকি কম ছিল: গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা স্থিরভাবে এক সাথে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় বসে থাকতেন তাদের তুলনায় ফিজেটার বা যারা এ ধরণের নড়াচড়া করতেন তাদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কম ছিল। কেন?
কারণ অস্থিরতার কারণে নড়াচড়া করলে তা ক্যালরি খরচ করে দেহের ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করে, দেহকে কর্মক্ষম রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়, বলেন জ্যানেট। তা হলে অস্থিরতার কারণে নড়াচড়া করা কি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের অংশ? সংক্ষেপে বলতে গেলে, হ্যাঁ। আপনি যদি খুব বেশি সক্রিয় না হয়ে থাকেন তাহলে ফিজেটিং বা অস্থিরতার কারণে নড়াচড়ার অভ্যাস তৈরি করে দেখতে পারেন। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা দূর করতে এবং শান্ত হতে সাহায্য করে
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মধ্যে ফিজেটিংয়ের ছোঁয়া আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বুনন এর মতো কাজ, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চমৎকার হতে পারে। স্টিচলিংকস নামে একটি সংস্থার পরিচালক বেটসান কোরখিল কারুশিল্প বিশেষ করে বুননের চিকিৎসাগত উপাদান সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। তিনি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগছেন এমন মানুষদের সমন্বয়ে একটি বুনন গ্রুপ পরিচালনা করেন। এটি দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তি দূর করতে সহায়তা করে বলে জানা যায়। ২০১৩ সালে ৩১টি দেশের ৩ হাজার ৫০০ জন বুননকারীর ওপর একটি জরিপ চালানো হয় যারা এর যাদুকরী গুণাবলির পক্ষেই মত দিয়েছেন। বেটসান বলেন, ‘আমাদের তথ্য বলছে, তারা যত বেশি বুনন করে তত বেশি সুখী এবং শান্ত হয়।’ স্মৃতিভ্রম বা ডিমেন্সিয়া রোগীদের সহায়তা করে
যুক্তরাজ্যে ডিমেন্সিয়া নিয়ে কাজ করেন ডেভ বেল, যিনি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নার্স। তার অনেক রোগীর জন্য ফিজেটিং বা অস্থিরতার কারণে অস্বাভাবিক নড়াচড়া করাটা একটা সাধারণ কাজ, তা সেটি হাঁটা কিংবা পোশাকের মুড়ি সেলাই করে সময় কাটানোই হোক না কেন। কারণ স্মৃতিভ্রমের শিকার কোন ব্যক্তি শারীরিকভাবে অস্বস্তি কিংবা ব্যথায় ভোগেন। অনেকের ক্ষেত্রে পরিবেশগত উপাদান তাদেরকে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ফেলে, অন্যদিকে অনেকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধনের কারণে তারা পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে থাকে। যদিও এটা দেখতে পীড়াদায়ক মনে হয়, তার পরও ফিজেটিং হচ্ছে নিজে নিজে শান্ত হওয়ার একটা প্রক্রিয়া। ডেভ বলেন, ‘আমার মনে হয় যেসব ব্যক্তি এ ধরণের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, হাত দিয়ে কিছু করা বা হাঁটাহাঁটি করা নিশ্চিতভাবেই তাদের মানসিক চাপ কমায়।’ স্টিচলিংকস ফিজেটিংয়ের উপাদান হিসেবে পুঁতি, বোতাম, বেল এবং ফিতা দিয়ে হাতে বোনা মাফ বা বিশেষ ধরনের হাত গরম করার পোশাক তৈরি করছে। আর আলঝেইমার সোসাইটি স্মৃতিভ্রমের রোগীদের মধ্যে উদ্বেগ কমাতে ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের সাথে মিলে ফিজেটের অংশ হিসেবে কাঠের ছোট যন্ত্র তৈরি করছে। ডেভ বলেন, ‘এর খুব ভালো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসবের কারণে তাদের আচরণে যে পরিবর্তন এসেছে সেটি আমি দেখেছি। ফিজেট করা উচিত নাকি উচিত নয়?
তা হলে কি শ্রেণীকক্ষে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য আমাদের সবারই নড়াচড়া করা, এমনি এমনি ঘুরতে থাকা, ঝাঁকানো কিংবা দোল খাওয়া উচিত? হয়তো, কিন্তু সেটা সঠিক উপায়ে করতে হবে। ‘এটা ভারসাম্য বজায় রাখার একটি ভাল উপায়,’ বলেন রোনাল্ড রৎজ। কখনো কখনো ক্লাসের লেকচারের তুলনায় কাগজে হিজিবিজি কাটা-টাও বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে, বিষেশ করে তখন, যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে, ফিজেট বা অস্থির আচরণ আসলে আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে না। ‘ভালো ডুডল বা হিজিবিজি কাটা হচ্ছে শুধু এক ধরণের শেড তৈরি করা,’ বলেন সাইকোলজিস্ট। তাই আমরা কোন ধরনের ফিজেট বা অস্থির আচরণ করছি তা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া কারো জন্য উপকারী ফিজেট বা অস্থির নড়াচড়া হয়তো অন্যদের জন্য মনোযোগ নষ্টের কারণ হতে পারে। তাই এগিয়ে যান- হাতের আঙুল দিয়ে মৃদু আঘাত করুন, খট খট শব্দ করুন কিংবা খেয়াল খুশিমত মোচড়ান- কোন বাধা নেই, তবে যাই করুন না কেন, একটু দায়িত্ববোধ বজায় রাখুন।
তথ্যসূত্র : বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ