মানুষ মিথ্যা না বলে থাকতে পারে না কেন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:৪০
সামাজিক কোনো বিষয়ের কথা এলে দেখা যায় মিথ্যার অস্তিত্ব থাকতে পারে কিংবা অন্তত সাদাসিধে কিছু নির্দোষ মিথ্যা-যা হয়তো সমাজে আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। এবং যদিও আমরা মিথ্যা ধরে ফেলতে খুব দক্ষ নই, কিন্তু তারপরও কিছু সহজ উপায় আছে যা হয়তো আপনাকে কোনটি মিথ্যা তা সহজে বুঝতে সাহায্য করবে...
মানুষের এবং প্রাণী জগতের মধ্যে বিদ্যমান অসদাচরণের পেছনে কি কারণ তা অনুসন্ধানের জন্য গবেষণা শুরু করেন জীববিজ্ঞানী এবং লেখক লুসি কুক।
শান্তির জন্য সত্যকে কলুষিত করছি
প্রায়ই লোকজন যখন তাদের কথা বা কাজ দিয়ে আমাদের প্রতারিত করার চেষ্টা করে তখন আমরা তাকে বলি মিথ্যাচার।। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সাধারণ কথাবার্তায় সেটা ঘটতে পারে কারণ যেটা আমরা সত্যিকারে ভাবি সেটা কিন্তু আমরা বলি না। কল্পনা করুন তো, প্রতিটি আড্ডায়, আপনার সাথে যাদের আলাপ হয়েছে তাদের যদি আপনি বলেন, আপনার সম্পর্কে এবং আপনার জীবনের সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে তাদের সত্যিকার ভাবনা কি- সেটা জানাতে? সেটা হবে প্রচণ্ড অসহনীয়। এমনকি যদি কারো অনেক টাকা দিয়ে করা নতুন হেয়ার স্টাইল দেখে তা আমাদের পছন্দ নাও হয় তবুও আমাদের বেশিরভাগই তা প্রকাশ করার দুঃস্বপ্ন দেখবে না। আমাদের বিবেচনা বলে যে, ১০০ ভাগ সত্যবাদী হওয়ার ফলে ভালোর চেয়ে তা ক্ষতিই করতে পারে এবং এইরকম পারস্পরিক সহযোগিতার আদান-প্রদানই মানুষের সামাজিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু । হ্যাঁ এভাবে প্রবঞ্চনা বা মিথ্যাচার হলো এক ধরনের আঠা যা আমাদের একে অপরের সাথে যুক্ত রাখে, সহযোগিতার চাকায় তেল দেয় এবং বিশ্বকে রাখে বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্তিময়। এক-তৃতীয়াংশ রোজ মিথ্যা বলে
মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেছেন, প্রতিদিনই জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গুরুতর মিথ্যা বলে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে যে, পাঁচ শতাংশ মানুষ দাবি করেছে যে তারা কখনই মিথ্যা বলেনি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে আমাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করে চালানো জরিপেও সত্যি বলতে অপারগ... মিথ্যা শনাক্তকরণে বিচারকদের চেয়ে কয়েদিরা এগিয়ে
মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেন, ‘আমরা মিথ্যা বলায় বেশ ভালো, মিথ্যা শনাক্ত করণে বেশ বাজে।’ আমরা মনে করি যে প্রতারণা ধরে ফেলতে আমরা বেশ দক্ষ, কিন্তু যখন দুজন মানুষকে আপনি গবেষণাগারে নিয়ে যাবেন এবং একটি ভিডিও দেখাবেন যেখানে একজন মানুষ মিথ্যা বলছেন এবং আরেকটিতে তারা সত্যি কথা বলছে- এরপর যখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন কোনটা কি-তখন তাদের মধ্যে কেবল ৫০ শতাংশ মানুষ সঠিকভাবে বলতে পারবে। এবং পুলিশ, আইনজীবী এবং এমনকি বিচারকদের ক্ষেত্রেও তা সত্য। সেখানে কেবল একটি গ্রুপ আছে যারা ভিন্ন এবং হলো কারাবন্দি কয়েদিরা। কারও মিথ্যা ধরতে হলে চোখ নয় নিজের কান-দুটো ব্যবহার করুন
মিথ্যা ধরে ফেলতে আমরা খুব একটা দক্ষ নই কারণ আমরা সব চাক্ষুষ করে বা চোখ দিয়ে দেখে তারপর বিচার-বিবেচনা করি। আমাদের ব্রেইনের বিশাল অংশ নিয়োজিত রয়েছে দৃষ্টিগোচর করার কাজে এবং সেকারণে কেউ মিথ্যা বলছে কিনা তা সনাক্ত করার জন্য আমরা এভাবেই বোঝার চেষ্টা করি। তারা কি তাদের বসার আসনের চারদিকে ঘোরাঘুরি করছে? তারা কি ইঙ্গিত করছে? তাদের মুখের ভঙ্গি কেমন? এর অধিকাংশ বিষয় মোটামুটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সুদক্ষ মিথ্যাবাদীরা জানে অন্য লোকেরা কিভাবে চেষ্টা করে এবং মিথ্যা ধরে ফেলতে চায়। এর বাইরের সংকেতগুলি হচ্ছে মৌখিক: আমরা যা বলি এবং যেভাবে বলি। এটা নিয়ন্ত্রণ করা মিথ্যাবাদীদের জন্য বেশ কঠিন -সুতরাং সেদিকে যদি আপনি নিজের মনোযোগ দেন তাহলে আপনি হবেন আরও ভালো মিথ্যা শনাক্তকারী। যারা মিথ্যাবাদী তারা সাধারণভাবে কম কথা বলে; তারা একটি প্রশ্নের পর উত্তর দিতে দীর্ঘ সময় নেয়; এবং তারা মিথ্যা থেকে নিজেদের দূরত্ব দেখাতে চায়: তাই ‘আমি’, ‘আমার’ এবং ‘আমি’ শব্দগুলো প্রায়শই বাদ পড়ে যায়। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ একে অপরের চেয়ে বেশি মিথ্যা বলতে ওস্তাদ, এবং রিচার্ড ওয়াইজম্যান দুটি গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য একটি পরীক্ষা চালান। এটাকে বলে ‘কিউ’ টেস্ট এবং এটা সম্পন্ন করার জন্য মাত্র ৫ সেকেন্ড সময় লাগে। আপনার তর্জনি আঙ্গুল হাতের ওপর রাখুন এবং কপালের ওপর বড় হাতের ‘কিউ’ আঁকুন। প্রশ্ন হলো, কিউ’র লেজের অংশটি কি আপনার ডান চোখের ওপরে পড়েছে? নাকি বা চোখের ওপরে? অন্য কথায়,আপনি কি ‘কিউ’ এমনভাবে লিখেছেন যাতে করে কেউ আপনার দিকে তাকালে সেটি পড়তে পারে? নাকি যাতে আপনি নিজেই সেটি পড়তে পারেন? এই তত্ত্বের মানে হল যে, যদি ‘কিউর লেজ বাম চোখের ওপরে থাকে - তাহলে আপনার দিকে তাকালে লোকজন সেটা পড়তে পারে- সর্বদা আপনি ভাবছেন যে অন্যান্য লোকেরা আপনাকে কিভাবে দেখছে এবং সুতরাং আপনি একজন দক্ষ মিথ্যাবাদী হবেন। কিন্তু যদি সেটি আপনি ডান চোখের বরাবর রাখেন তাহলে বুঝতে হবে যে আপনি বিশ্বকে দেখছেন আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে -আপনার মধ্যে সততার প্রতি একটু বেশি ঝোঁক আছে। পৃথিবী জালিয়াত শিল্পীদের দ্বারা পরিপূর্ণ
সব জায়গাতেই প্রতারণা। প্রাকৃতিক পৃথিবীতে প্রাণীকুল ছদ্মবেশ এবং ব্যবহার দ্বারা প্রতিনিয়ত একজন আরেকজনকে প্রতারণা করে যাচ্ছে । ধরা যাক সামুদ্রিক মাছ স্কুইডের কথাই, যেটি শিকারীর থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে, কেবল নিজের দেহের একপাশে যৌন সংকেত পাঠিয়ে যা তার প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে নিজেকে গোপন রাখে। এবং কখনো একটি মুরগিকে বিশ্বাস করবার নয়...পুরুষ মোরগগুলো এমনভাবে আওয়াজ করে খাবারের মিথ্যে প্রলোভন তুলে ধরবে যে নারী মোরগগুলো ছুটে আসবে। এরপর তাদের রাতের খাবারের পরিবর্তে যৌনকার্যে বাধ্য করবে। সামুদ্রিক পাখিরা বেশিরভাগই আজীবনের জুটি বেঁধে থাকে এবং আমরা ভাবি যে, তারা হয়তো সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এমনকি আজীবনের জন্য জুটি-বদ্ধ পাখিরাও-যেমন গিলিমট (উত্তর মেরু অঞ্চলের সামুদ্রিক পাখি) যদি মনে করে যে তাদের আরও এবং উন্নতমানের বংশ বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে তারা গোপন ‘বিবাহবহির্ভূত’ সম্পর্কে যুক্ত থাকবে। গবেষক রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেছেন, বাচ্চারা কখন থেকে মিথ্যা বলতে শুরু করে সে বিষয়ে কিছু মজার বিষয় উঠে এসেছে। আপনি শিশুদের একটি কক্ষে নিয়ে যাবেন, এবং তাদের বলবেন, আমরা তোমার প্রিয় খেলনা তোমার পেছনে রেখে দেবো, কিন্তু প্লিজ তাকাবে না- এবং এরপর আপনি কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাবেন এবং তাদের আবারো মনে করিয়ে দিন খেলনার দিকে না তাকাতে। যেহেতু কোনও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড আপনি প্রত্যক্ষ করবেন, আপনি বুঝতে পারবেন যে, কয়েক মিনিট পরেই তারা খেলনার দিকে তাকাবে। এরপর কক্ষে ফিরে গিয়ে তাদের কাছে জানতে চান, ‘তোমরা কি খেলনার দিকে তাকিয়েছিলে?’ ‘যখন তিন বছর বয়সী বাচ্চাদের সাথে আপনি এই টেস্ট করবেন এবং যে বয়সে তারা কথাবার্তায় পাকা হতে শুরু করেছে- দেখবেন ইতোমধ্যে তাদের ৫০শতাংশই মিথ্যে বলছে’ -বলেন গবেষক রিচার্ড। ‘আর যখন তাদের বয়স পাঁচ বছরে পৌঁছাবে তখন তাদের একজনও সত্যি কথা বলবে না!’ আমাদের আছে কৌশলপূর্ণ ছলচাতুরীর দীর্ঘ ইতিহাস
জটিলতাপূর্ণ সামাজিক বিশ্বে দিক-নির্দেশনার জন্য অনেকক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে মিথ্যা। শিম্পাঞ্জির মতো প্রাণীদের একটি বড় গ্রুপে থাকার বিশাল সুবিধা রয়েছে: আপনি খাদ্য শিকারের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে পারেন, এবং শিকারিদের খুঁজে বের করার জন্য আরও অনেক চোখ সক্রিয় থাকে। কিন্তু যদি আপনি খাবারের জন্য অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকেন , সেটা লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে যা আপনাকে এবং অন্যকে আহত করার ঝুঁকি তৈরি করে এবং সেটা একটি দলের জন্য নিশ্চয়ই বেহিসাবি ফলাফল আনবে। ফলে কৌশলপূর্ণ হওয়াটা আসলেই আপনার এবং অন্য সবার জন্য ভালো। সামাজিক প্রজাতির বিবর্তনে কৌশলগত প্রতারণার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। একটি অগ্রগামী সমাজ একতার সুরের সাথে এগিয়ে চলে যা একে অপরের সাথে একসূতোয় আবদ্ধ থাকার কথা বলে: গবেষণা বলছে যত বেশি কেতাদুরস্ত প্রাণী, তত বেশি ছল-চাতুরীর খেলা। সুতরাং, মিথ্যাবাদী হওয়াটা সবসময়ই যে খুব খারাপ বিষয় তেমনটি নাও হতে পারে। সর্বোপরি, মিথ্যে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না: এটা আসলে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুব গুরুতর রূপ নিয়েছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
প্রায়ই লোকজন যখন তাদের কথা বা কাজ দিয়ে আমাদের প্রতারিত করার চেষ্টা করে তখন আমরা তাকে বলি মিথ্যাচার।। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সাধারণ কথাবার্তায় সেটা ঘটতে পারে কারণ যেটা আমরা সত্যিকারে ভাবি সেটা কিন্তু আমরা বলি না। কল্পনা করুন তো, প্রতিটি আড্ডায়, আপনার সাথে যাদের আলাপ হয়েছে তাদের যদি আপনি বলেন, আপনার সম্পর্কে এবং আপনার জীবনের সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে তাদের সত্যিকার ভাবনা কি- সেটা জানাতে? সেটা হবে প্রচণ্ড অসহনীয়। এমনকি যদি কারো অনেক টাকা দিয়ে করা নতুন হেয়ার স্টাইল দেখে তা আমাদের পছন্দ নাও হয় তবুও আমাদের বেশিরভাগই তা প্রকাশ করার দুঃস্বপ্ন দেখবে না। আমাদের বিবেচনা বলে যে, ১০০ ভাগ সত্যবাদী হওয়ার ফলে ভালোর চেয়ে তা ক্ষতিই করতে পারে এবং এইরকম পারস্পরিক সহযোগিতার আদান-প্রদানই মানুষের সামাজিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু । হ্যাঁ এভাবে প্রবঞ্চনা বা মিথ্যাচার হলো এক ধরনের আঠা যা আমাদের একে অপরের সাথে যুক্ত রাখে, সহযোগিতার চাকায় তেল দেয় এবং বিশ্বকে রাখে বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্তিময়। এক-তৃতীয়াংশ রোজ মিথ্যা বলে
মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেছেন, প্রতিদিনই জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গুরুতর মিথ্যা বলে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে যে, পাঁচ শতাংশ মানুষ দাবি করেছে যে তারা কখনই মিথ্যা বলেনি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে আমাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করে চালানো জরিপেও সত্যি বলতে অপারগ... মিথ্যা শনাক্তকরণে বিচারকদের চেয়ে কয়েদিরা এগিয়ে
মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেন, ‘আমরা মিথ্যা বলায় বেশ ভালো, মিথ্যা শনাক্ত করণে বেশ বাজে।’ আমরা মনে করি যে প্রতারণা ধরে ফেলতে আমরা বেশ দক্ষ, কিন্তু যখন দুজন মানুষকে আপনি গবেষণাগারে নিয়ে যাবেন এবং একটি ভিডিও দেখাবেন যেখানে একজন মানুষ মিথ্যা বলছেন এবং আরেকটিতে তারা সত্যি কথা বলছে- এরপর যখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন কোনটা কি-তখন তাদের মধ্যে কেবল ৫০ শতাংশ মানুষ সঠিকভাবে বলতে পারবে। এবং পুলিশ, আইনজীবী এবং এমনকি বিচারকদের ক্ষেত্রেও তা সত্য। সেখানে কেবল একটি গ্রুপ আছে যারা ভিন্ন এবং হলো কারাবন্দি কয়েদিরা। কারও মিথ্যা ধরতে হলে চোখ নয় নিজের কান-দুটো ব্যবহার করুন
মিথ্যা ধরে ফেলতে আমরা খুব একটা দক্ষ নই কারণ আমরা সব চাক্ষুষ করে বা চোখ দিয়ে দেখে তারপর বিচার-বিবেচনা করি। আমাদের ব্রেইনের বিশাল অংশ নিয়োজিত রয়েছে দৃষ্টিগোচর করার কাজে এবং সেকারণে কেউ মিথ্যা বলছে কিনা তা সনাক্ত করার জন্য আমরা এভাবেই বোঝার চেষ্টা করি। তারা কি তাদের বসার আসনের চারদিকে ঘোরাঘুরি করছে? তারা কি ইঙ্গিত করছে? তাদের মুখের ভঙ্গি কেমন? এর অধিকাংশ বিষয় মোটামুটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সুদক্ষ মিথ্যাবাদীরা জানে অন্য লোকেরা কিভাবে চেষ্টা করে এবং মিথ্যা ধরে ফেলতে চায়। এর বাইরের সংকেতগুলি হচ্ছে মৌখিক: আমরা যা বলি এবং যেভাবে বলি। এটা নিয়ন্ত্রণ করা মিথ্যাবাদীদের জন্য বেশ কঠিন -সুতরাং সেদিকে যদি আপনি নিজের মনোযোগ দেন তাহলে আপনি হবেন আরও ভালো মিথ্যা শনাক্তকারী। যারা মিথ্যাবাদী তারা সাধারণভাবে কম কথা বলে; তারা একটি প্রশ্নের পর উত্তর দিতে দীর্ঘ সময় নেয়; এবং তারা মিথ্যা থেকে নিজেদের দূরত্ব দেখাতে চায়: তাই ‘আমি’, ‘আমার’ এবং ‘আমি’ শব্দগুলো প্রায়শই বাদ পড়ে যায়। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ একে অপরের চেয়ে বেশি মিথ্যা বলতে ওস্তাদ, এবং রিচার্ড ওয়াইজম্যান দুটি গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য একটি পরীক্ষা চালান। এটাকে বলে ‘কিউ’ টেস্ট এবং এটা সম্পন্ন করার জন্য মাত্র ৫ সেকেন্ড সময় লাগে। আপনার তর্জনি আঙ্গুল হাতের ওপর রাখুন এবং কপালের ওপর বড় হাতের ‘কিউ’ আঁকুন। প্রশ্ন হলো, কিউ’র লেজের অংশটি কি আপনার ডান চোখের ওপরে পড়েছে? নাকি বা চোখের ওপরে? অন্য কথায়,আপনি কি ‘কিউ’ এমনভাবে লিখেছেন যাতে করে কেউ আপনার দিকে তাকালে সেটি পড়তে পারে? নাকি যাতে আপনি নিজেই সেটি পড়তে পারেন? এই তত্ত্বের মানে হল যে, যদি ‘কিউর লেজ বাম চোখের ওপরে থাকে - তাহলে আপনার দিকে তাকালে লোকজন সেটা পড়তে পারে- সর্বদা আপনি ভাবছেন যে অন্যান্য লোকেরা আপনাকে কিভাবে দেখছে এবং সুতরাং আপনি একজন দক্ষ মিথ্যাবাদী হবেন। কিন্তু যদি সেটি আপনি ডান চোখের বরাবর রাখেন তাহলে বুঝতে হবে যে আপনি বিশ্বকে দেখছেন আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে -আপনার মধ্যে সততার প্রতি একটু বেশি ঝোঁক আছে। পৃথিবী জালিয়াত শিল্পীদের দ্বারা পরিপূর্ণ
সব জায়গাতেই প্রতারণা। প্রাকৃতিক পৃথিবীতে প্রাণীকুল ছদ্মবেশ এবং ব্যবহার দ্বারা প্রতিনিয়ত একজন আরেকজনকে প্রতারণা করে যাচ্ছে । ধরা যাক সামুদ্রিক মাছ স্কুইডের কথাই, যেটি শিকারীর থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে, কেবল নিজের দেহের একপাশে যৌন সংকেত পাঠিয়ে যা তার প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে নিজেকে গোপন রাখে। এবং কখনো একটি মুরগিকে বিশ্বাস করবার নয়...পুরুষ মোরগগুলো এমনভাবে আওয়াজ করে খাবারের মিথ্যে প্রলোভন তুলে ধরবে যে নারী মোরগগুলো ছুটে আসবে। এরপর তাদের রাতের খাবারের পরিবর্তে যৌনকার্যে বাধ্য করবে। সামুদ্রিক পাখিরা বেশিরভাগই আজীবনের জুটি বেঁধে থাকে এবং আমরা ভাবি যে, তারা হয়তো সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এমনকি আজীবনের জন্য জুটি-বদ্ধ পাখিরাও-যেমন গিলিমট (উত্তর মেরু অঞ্চলের সামুদ্রিক পাখি) যদি মনে করে যে তাদের আরও এবং উন্নতমানের বংশ বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে তারা গোপন ‘বিবাহবহির্ভূত’ সম্পর্কে যুক্ত থাকবে। গবেষক রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেছেন, বাচ্চারা কখন থেকে মিথ্যা বলতে শুরু করে সে বিষয়ে কিছু মজার বিষয় উঠে এসেছে। আপনি শিশুদের একটি কক্ষে নিয়ে যাবেন, এবং তাদের বলবেন, আমরা তোমার প্রিয় খেলনা তোমার পেছনে রেখে দেবো, কিন্তু প্লিজ তাকাবে না- এবং এরপর আপনি কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাবেন এবং তাদের আবারো মনে করিয়ে দিন খেলনার দিকে না তাকাতে। যেহেতু কোনও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড আপনি প্রত্যক্ষ করবেন, আপনি বুঝতে পারবেন যে, কয়েক মিনিট পরেই তারা খেলনার দিকে তাকাবে। এরপর কক্ষে ফিরে গিয়ে তাদের কাছে জানতে চান, ‘তোমরা কি খেলনার দিকে তাকিয়েছিলে?’ ‘যখন তিন বছর বয়সী বাচ্চাদের সাথে আপনি এই টেস্ট করবেন এবং যে বয়সে তারা কথাবার্তায় পাকা হতে শুরু করেছে- দেখবেন ইতোমধ্যে তাদের ৫০শতাংশই মিথ্যে বলছে’ -বলেন গবেষক রিচার্ড। ‘আর যখন তাদের বয়স পাঁচ বছরে পৌঁছাবে তখন তাদের একজনও সত্যি কথা বলবে না!’ আমাদের আছে কৌশলপূর্ণ ছলচাতুরীর দীর্ঘ ইতিহাস
জটিলতাপূর্ণ সামাজিক বিশ্বে দিক-নির্দেশনার জন্য অনেকক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে মিথ্যা। শিম্পাঞ্জির মতো প্রাণীদের একটি বড় গ্রুপে থাকার বিশাল সুবিধা রয়েছে: আপনি খাদ্য শিকারের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে পারেন, এবং শিকারিদের খুঁজে বের করার জন্য আরও অনেক চোখ সক্রিয় থাকে। কিন্তু যদি আপনি খাবারের জন্য অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকেন , সেটা লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে যা আপনাকে এবং অন্যকে আহত করার ঝুঁকি তৈরি করে এবং সেটা একটি দলের জন্য নিশ্চয়ই বেহিসাবি ফলাফল আনবে। ফলে কৌশলপূর্ণ হওয়াটা আসলেই আপনার এবং অন্য সবার জন্য ভালো। সামাজিক প্রজাতির বিবর্তনে কৌশলগত প্রতারণার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। একটি অগ্রগামী সমাজ একতার সুরের সাথে এগিয়ে চলে যা একে অপরের সাথে একসূতোয় আবদ্ধ থাকার কথা বলে: গবেষণা বলছে যত বেশি কেতাদুরস্ত প্রাণী, তত বেশি ছল-চাতুরীর খেলা। সুতরাং, মিথ্যাবাদী হওয়াটা সবসময়ই যে খুব খারাপ বিষয় তেমনটি নাও হতে পারে। সর্বোপরি, মিথ্যে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না: এটা আসলে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুব গুরুতর রূপ নিয়েছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ