আজকের শিরোনাম :

খেজুর: সর্বোত্তম ইফতারি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০১৮, ১৩:০৮

অধ্যাপক নঈম কাদের, ০২ জুন, এবিনিউজ : সারাদিন রোজা রাখার পর প্রথম খাদ্য হিসেবে একজন রোজাদার কী গ্রহণ করবেন, এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ প্রথম খাবার তিনি যা গ্রহণ করবেন, তা ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর ক্লান্ত শরীরের জন্য কতটা উপযোগী এবং শরীরের বিভিন্ন অভাব পূরণে কতটা সহায়ক তা বিবিচেনায় আনতে হবে। দীর্ঘ সময় উপোস থাকার পর ভাজাপোড়া জাতীয় খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। একইভাবে এ অবস্থায় ঢকঢক করে গ্লাসর্ভতি পানি পানও ক্ষতিকর। মনে রাখতে পিপাসা এবং ক্ষুধা এক বিষয় নয়। প্রচণ্ড পিপাসায় মানুষ এক দু’গ্লাস পানি পান করতে পারেন। এমনিতেও শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পানি দরকার। কিন্তু রোযাদার যখন ইফতার করতে বসেন, তখন তিনি শুধু পিপাসার্ত নন, একই সাথে তিনি ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত। তাই এ সময় রোজাদারের জন্য দরকার এমন খাদ্য যা কোন রকম ক্ষতি ছাড়াই একসাথে দেহের সব চাহিদা পূরণে সক্ষম। এ সব বিবেচনায় খেজুর হচ্ছে সর্বোত্তম ইফতারি।

খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নাত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পছন্দ ছিল বলেই কি তিনি খেজুর দিয়ে ইফতারের কথা বলেছেন, না এখানে অন্য আরো কারণ আছে? আসুন জেনে নিই ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত ও ক্লান্ত একজন মানুষের জন্য খেজুরে কী আছে, কেন তিনি খেজুরের কথা বললেন।

দীর্ঘ সময় ধরে পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যায়, দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, ক্লান্তি চলে আসে।

খেজুরকে বলা হয় প্রাকৃতিক সুগার সমৃদ্ধ আদর্শ ফল। পাকা খেজুরে প্রায় ৮০শতাংশ চিনিজাতীয় উপাদান। গবেষণায় দেখা দেখা গেছে, খেজুরে থাকা উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক সুগার শরীরকে যত দ্রুত কর্মক্ষম করে তুলতে সক্ষম, অন্য কোথাও তা নেই। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে পাওয়া যায় ২৩০ ক্যালরী শক্তি, ৭৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২.৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ০.৪ গ্রাম ফ্যাট এবং গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে অত্যাবশ্যক বিভিন্ন ভিটামিন উপাদান। যেমন ভিটামিন– বি৬, রিবোফ্লোবিন, ভিটামিন– এ, ভিটামিন– কে, বিটাক্যারোটিন ইত্যাদি। এছাড়া খেজুরে আছে মিনারেল, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম আয়রন, কপার, জিঙ্কসহ শরীর গঠনের বিভিন্ন উপাদান।

তাই রোজার পর দেহে যে ক্লান্তি চলে আসে, প্রাকৃতিকভাবে তা দ্রুত দূর করতে ইফতারিতে খেজুরের কোন বিকল্প নেই। খেজুর ক্লান্ত শরীরকে কর্মক্ষম করতে দ্রুত শক্তি যোগান দেয়া।

রমযানে স্বাভাবিকভাবেই রোযাদাদের ওজন কিছুটা কমে যায়। খেজুর হচ্ছে উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ ফল যা শরীরের ভাঙন রোধ করে, ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুতরাং একজন রোজাদার সারা দিন কিছু না খেয়ে থাকায় শরীরে যে ক্যালরি ঘাটতি হয়েছে কয়েকটি খেজুরই তা পুরণে সক্ষম। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, খেজুর এমন এক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে দু তিনটি খেজুরই যথেষ্ট।

রমযানে দীর্ঘ সময় ধরে পানাহার থেকে বিরত থাকার পর মাথা ঘোরা, কাজে–কর্মে অমনোযোগী হওয়াসহ বিভিন্ন স্নায়বিক উপসর্গ দেখা দেয়। এই অবস্থায় দ্রুত গ্লোকোজ সরবরাহের মাধ্যমে নার্ভ পুরোপুরি সচল ও কর্মক্ষম করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে খেজুর। খেজুর দ্রুত হজমকারক একটি আদর্শ খাদ্য। তাই ইফতারের শুরু করা দরকার খেজুর দিয়ে।

যে সমস্ত মহিলা শিশুকে দুধ পান করান, দুগ্ধ পোষ্য শিশুর মায়ের জন্য রমযানে খেজুর একটি অপরিহার্য ফল। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর দেহ গঠনের যাবতীয় উপাদান খেজুরে বিদ্যমান।

তিরমিযি শরিফে হযরত সালমান ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিস : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করবে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করে। কারণ খেজুর বরকতময়। যদি খেজুর না পায়, তাহলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি পবিত্র।

খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। ভাবতে অবাক লাগে, দেড় হাজার বছর আগে যখন আধুনিক বিজ্ঞানের এত সব আবিষ্কার ছিল না। খাদ্য ও পুষ্টি নামক কোন সাবজেস্ট ছিল না। ছিলনা বস্তুর খাদ্যমান নির্ণয়ের কোন যন্ত্র। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান হাজার হাজার গবেষণার মাধ্যমে যে বিষয়টি আবিষ্কার করেছে, মরু অঞ্চলে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা একজন মানুষ, যিনি কখনো কারো সাথে ‘বিজ্ঞান’ বিষয় আলোচনা করেন নি, এমনকি হেজাজের বাইরে যিনি কখনো যান নি, তিনি কীভাবে নিশ্চিত জানতে পারলেন দীর্ঘ সময় ধরে উপোস থাকার পর মানব শরীরে কি কি অভাব দেখা দিতে পারে, দ্রুত কীভাবে এ অভাব পূরণ করা যেতে পারে। খেজুরের মত একটি ফলের খাদ্যমানও কীভাবে তিনি জানতে পারলেন।

উত্তর একটাই, তিনি আল্লাহর রাসুল। তাঁর জ্ঞানের উৎস ওহী। ওহী মানে নির্ভুল জ্ঞান। জ্ঞান–বিজ্ঞানের যত উন্নতি ঘটবে, ততই প্রমাণিত হবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি শিক্ষা নির্ভুল ও শ্বাশত। রাসূলের সুন্নাত কেবল একটি ‘আমল’ নয়। বরং সুন্নাত হল মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য নির্দেশনা। আর একটি সুন্নাতের মর্যাদা আসমান ও জমিনের মাঝখানে যা কিছু আছে, সবকিছুর চাইতেও বেশি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত বড় চিকিৎসা বিজ্ঞানি তা বুঝার জন্য খেজুর বিষয়ক এই একটি হাদিসই যথেষ্ট। (সংগৃহীত)

এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ