আজকের শিরোনাম :

বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যে সতর্কবাণী ব্যবহারের আইনটি মানা হচ্ছে না

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০১৮, ২০:১০

ঢাকা, ৩১ মে, এবিনিউজ : বাংলাদেশে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের মোড়কে এর ব্যবহারের ক্ষতিকারক নমুনা সম্বলিত ছবি থাকা বাধ্যতামূলক হলেও ৮০% পণ্যে তা সঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে না। এমন তথ্য জানাচ্ছে ধুমপানবিরোধী সংস্থা প্রজ্ঞা।

সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য সেবনে যেসব ভয়ানক অসুখ হয় তার বিকৃত ছবি ও বর্ণনা মানুষজনকে নিরুৎসাহিত করবে, এমন ধারণা থেকে দু'বছর আগে বাংলাদেশে এমন পণ্যের প্যাকেটের গায়ে ছবি সম্বলিত সতর্কবাণী দেয়া আইন করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ধূমপানের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে ক্যাম্পেইন করেন ডা. অরূপ রতন চৌধুরী।

তিনি বলছেন, উন্নত বিশ্বে প্রমাণিত হয়েছে যে এটি কার্যকর। এর একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। মুখের ঘায়ের ছবি, পায়ে পচন ধরা অথবা মৃত ভ্রূণের ছবি দেখে মানুষজন আঁতকে ওঠে। প্রতিদিন দেখতে দেখতে সে একদিন নিজেও বলে উঠবে যে এটা তার জন্য কতটা ক্ষতিকর।

বিশ্বের অনেক দেশে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের উঁচু হারে করারোপ করা হয়েছে। দাম অনেক বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথবা এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন ও মোড়ক আকর্ষণীয় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রেও নিরস কোন রং বা লেখার ধরন ব্যবহার করতে হবে।


কারণ সেখানে রেস্টুরেন্ট, অফিস-আদালতের মতো জনবহুল জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে তেমন আইন থাকলেও মানছেন না কেউই।

বছর দুয়েক আগে করা আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটের দু'পাশেই নিচের দিকের ৫০ শতাংশে ধূমপানের ক্ষতিকারক নমুনা সম্বলিত ছবি থাকতে হবে।

কিন্তু এক জরিপের পর তামাকবিরোধী সংস্থা প্রজ্ঞা বলছে, বাজারে ৮০% তামাকজাত পণ্যে সচিত্র সতর্কবাণী দেয়া হচ্ছে না।

টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির মোটে ২০% এই নিয়ম মেনে চললেও অনেক কোম্পানির পণ্যের প্যাকেটে দু'পাশেই ছবি নেই। কারোর ক্ষেত্রে প্যাকেটের মোটে ১০% জায়গা জুড়ে হয়ত অস্পষ্ট ছবি দেয়া হচ্ছে," ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, "অনেকক্ষেত্রে ছবি যথেষ্ট বিকৃত নয় যা তেমন প্রভাব ফেলে না। অথবা কয়েক মাস পরপর ছবি পরিবর্তন করার নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না। বিড়ি ও জর্দার কৌটার ক্ষেত্রে এই নিয়ম এক অর্থে মানাই হচ্ছে না বললেই চলে।

আইনটি কতটা মানা হচ্ছে তা জানতে ঢাকার বাজারে গিয়ে দেখা গেলো রোজা রমজানের মাসে বাজারে সিগারেট বা তামাকজাত পণ্য বিক্রি ও সেবন হচ্ছে কিছুটা রাখঢাক রেখে।

পর্দা দিয়ে ঢাকা একটি চায়ের দোকানে গিয়ে দু'একজন ধূমপায়ীর সাথে কথা বলতে গেলে তারা কিছুটা যেন বিব্রতই হলেন।

একজন ধূমপায়ী বললেন, অভ্যাসবশত: খাই। না খেলে যে কোন সমস্যা হয়, তা না।" আরেকজনের উত্তর, "আসলে যাদের কাজে টেনশন বেশি তারা এটা খায়। আমি অনেকবার ছাড়তে চেয়েছি। কিন্তু হয়নি।

মোড়কের গায়ে যেসব ভয়ঙ্কর ছবি রয়েছে তা কি কোন ভাবে প্রভাবিত করে? এই প্রশ্নের জবাবে সবাই হ্যাঁ-বাচক জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, এসব ছবি দেখলে ভয় লাগে। কিন্তু তবুও তারা কেন ধূমপান করেন? সে প্রশ্নের ঠিক জবাব পাওয়া গেলো না। এমন কথাবার্তা হল আরো বেশ কজনের সাথে।

বিক্রেতাদের জিজ্ঞেস করছিলাম, মোড়কে সচিত্র সতর্কবার্তা চালু হওয়ার পর থেকে তারা বিক্রিতে কোন পরিবর্তন দেখছেন কি?

দোকানে সাজিয়ে রাখা নানা ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেটের দাম উল্লেখ করে একজন বিক্রেতা বললেন, সবচেয়ে বেশি দামের যে সিগারেট সেটিই লোকে সবচেয়ে বেশি কিনছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে বলা হয়েছিলো, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ১৫ বছর বয়সের ওপরের পুরুষ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহারকারী ৪৩ শতাংশের কিছু বেশি। দু'হাজার ষোল সালের শেষের দিকে এসে দেখা যাচ্ছে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪%।

নারীদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার বেশি। নারীদের ৩৩% শতাংশ এমন তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করেন।

কোনও কোনও দেশ উচ্চ হারে কর আরোপ, সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তা এবং প্রচার কাজের মাধ্যমে সিগারেটে আসক্তি কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরেছে।

তবে বাংলাদেশে এক্ষেত্রে কোনও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি বলে ক্যাম্পেইনাররা বলছেন।

ওদিকে চিবিয়ে খাওয়া যায় এমন তামাকজাত পণ্য সেবন বাংলাদেশে সামাজিকভাবে এতটাই স্বাভাবিক যে সে নিয়ে ধারণার কোন পরিবর্তন চোখে পড়ছে না বলে ক্যাম্পেইনাররা উল্লেখ করছেন। সরকারের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক মো. খায়রুল আলম সেখ।

তার কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, তামাকজাত পণ্য কোম্পানিগুলোকে কেন এসব আইন মানতে বাধ্য করা যাচ্ছে না?

তিনি দ্বিমত প্রকাশ করে বললেন, না, আমরা বলবো আইন পুরোপুরি মানা হচ্ছে। সিগারেট এবং বিড়ির ক্ষেত্রে শতভাগই অনুসরণ করা হচ্ছে। নন স্মোকিং টোব্যাকো আছে সেক্ষেত্রেও কার্যকর হচ্ছে।

কিন্তু বাজারে গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে কেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, শতভাগ হয়ত সব ক্ষেত্রে হচ্ছে না। সবকিছুই অর্জন করা সম্ভব কিনা আমি জানি না। যে ক্ষেত্রে হচ্ছে না সেখানে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে তার কোন নমুনা মি. সেখ দেখাতে পারেন নি। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 


এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ