আজকের শিরোনাম :

হাঁটু ব্যথায় চেয়ারে বসে থাকবেন কেন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০১৮, ১৮:১১

মো. মুজিবুল হক শ্যামল, ০৭ মে, এবিনিউজ : কিছুদিন আগে আমি একটি নামকরা আবাসিক এলাকার মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল, না একেবারে তেমন কোন অঘটন নয়। মসজিদের দু’পাশের সারিতে প্রায়ই মাঝ ও বৃদ্ধা বয়সী অনেকে চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি বলব না চেয়ারে বসে নামাজ পড়া যাবে না, অনেকের হাঁটু/শরীরের কোন অঙ্গতে অসুস্থ বা সমস্যা থাকতে পারে, তাঁরা চেয়ারে বসে নামাজ পড়বেন কিন্তু অনেকে আরামের জন্য হোক বা ব্যরামের জন্য হোক অনেকে এভাবে নামাজ পড়তে গিয়ে নিজেই নিজের বার্ধক্য ডেকে আনছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। এই দৃশ্য দেখার পর আমি আমার মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না। একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, গত কয়েক বছর আগেও এমন করে চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে দেখা যায়নি। চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার দৃশ্য এখন প্রায় মসজিদে দিন দিন বাড়ছে। অনেকে আছেন শুধু নামাজ কেন সামান্য কাজটুকুও পায়ে হেঁটে করতে চান না। কিন্তু ঐ চেয়ারে বসা বা নিজের পায়ে না হাঁটা মানুষগুলোর মধ্যে অনেক মাঝবয়সী লোকদেরও দেখা যায়। তাঁরা চেষ্টা করলে (নিজের শরীরের স্বার্থে) স্বাভাবিকভাবে নামাজ ও দিনের সকল কাজ করতে পারেন, সঠিক নিয়মে নামাজ পড়া বা নিজের কাজও করতে পারবেন। নিজেকে ফিট রাখা, নিজেকে বার্ধক্য (অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগ) থেকে দূরে রাখা। আমি আমার বাবাকে ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত কখনও চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে দেখেনি। তাহলে বর্তমানে এমন অবস্থা হবার কারণ আমি খুঁজে পাই না। ডাক্তার সাহেব আপনাকে কিছুদিনের জন্য চেয়ারে বসে নামাজ ও চেয়ারে বসে কাজ করতে বললেন তাই বলে আপনি যতদিন বাঁচবেন ততদিন চেয়ারে বসে নামাজ ও কাজ করবেন এমনটি হতে পারে না। এভাবে করতে করতে আপনি পরে চেষ্টা করলেও আগের মতো দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারবেন না। একটা সময় আমরা হাতে লাঠি ভরকরে হাঁটা অনেক বয়সি মানুষকে দেখতাম, এখন এসব লোক তেমন চোখেই পড়ে না। এর প্রধান কারণ এখন সবাই আরাম–আয়েশে, শুয়ে–বসে থাকতে চান, সামান্য পরিশ্রম করতে নারাজ। ব্যথা, ব্যথা করে সারাজীবন কাটান। এভাবে হাঁটুতে ব্যথার কারণ ‘অস্টিওআথ্রাইটিস’ অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগ। আমাদের অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট এক ধরনের কাভার দিয়ে আবৃত থাকে যাকে মেডিক্যাল ভাষায় কারটিলেজ বা নরম হাড় বলে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাঁটুর ব্যবহারের ফলে কারটিলেজগুলো ক্ষয় হতে থাকে, জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি নাড়াচাড়া করতে ব্যথা অনুভূত হয়। হাঁটু আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ওজন বহনকারী জয়েন্ট বিধায় হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ বেশি হয়ে থাকে, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৪০–৫০ এর অধিক বয়সের বেশিরভাগ মানুষ হাঁটুর ব্যথায় ভুগে থাকেন, এর অন্যতম কারন ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’। বিভিন্ন কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে– বয়সজনিত অস্থিসন্ধির ক্ষয়, আঘাতজনিত কারন বা জয়েন্ট ইনজুরি, ওজন বৃদ্ধির কারণে, মাংসপেশির দুর্বলতা, বংশগত, পেশির অস্বাভাবিকতা বা ম্যালফরমড জয়েন্ট, দুই জয়েন্টের মাঝখানে সাইনভিয়াল ফ্লুইড শুকিয়ে গেলে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে যারা কাজ করেন, বেশি বেশি সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করেন বা অমসৃণ জায়গায় হাঁটাচলা করেন তারা সাধারণত এই রোগে বেশি ভুগে থাকেন। তবে এই রোগে পুরুষদের থেকে মহিলারা বেশি ভুগে থাকেন। তবে এক এক জনের ব্যথা এক এক সময় এক এক অবস্থায় হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর বয়স, রোগের ইতিহাস ও ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশনের মাধ্যমেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব, এরপরও কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। এগুলো হল এক্স–রে, এমআরআই, বিএমডি, বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা করানো, সেরাম ইউরিক এসিড, সিআরপি, ক্যালসিয়াম লেভেল, এন্টি সিসিপি ইত্যাদি।

কিভাবে চিকিৎসা নিবেন:
এটি যেহেতু অস্থিসধির ক্ষয়জনিত রোগ এতএব হাড়ের ক্ষয় সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয় কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় ও অস্থিসন্ধির মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। এতে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো কষ্ট থাকে না। চিকিৎসা দু’ধরনের হতে পারে একটি ঔষধের মাধ্যমে এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে। তবে ডাক্তারই বলবে আপনার জন্য কোনটি উপযোগী। কনজারভেটিভ বা মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা, ডায়াটরি সাপ্লিমেন্ট–গ্লুকোসামিন হাইড্রোক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, হায়ালুরনিক এসিড ইত্যাদি, সর্বোপরি উপযোগী হচ্ছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এটি একটি আধুনিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। বয়স্ক লোকদের যেহেতু এ রোগে বেশি হয় সেহেতু ঔষধের ব্যবহার যত কম করা যায় তত ভালো, তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কারণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। এক্সপার্ট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। অস্টিওআরর্থ্রাইটিস অবক্ষনি জয়েন্ট চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক বিভিন্ন মেথড ব্যবহার করে থাকেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –ম্যানুপুলেশন থেরাপি, আলট্রাসাউন্ড, শর্টওয়েভ ডায়ার্থামি, ইন্টার ফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, লেজার থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, স্ট্যাটিক সাইক্লিং ইত্যাদি। এক্ষেত্রে হাসপাতাল বা থেরাপি সেন্টারে ভর্তি হয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে ফিজিওথেরাপি নিলে আরোগ্য লাভ করে। যাদের হাঁটু বা অন্য কোন পেশিতে ব্যথা তাদের প্রথমে সাহস দিতে হবে, সচেতন হতে হবে। ব্যথা হলে ভাল হবে সেটা তাদের মধ্যে ধৈর্য ধরার মানসিকতা থাকতে হবে। সাহসিকতার সাথে ব্যথা মোকাবেলা করে থেরাপিউটিক ব্যায়াম বা হাঁটাচলা ও মুভমেন্ট করতে হবে। সহজভাবে সবাইকে একটি পরামর্শ দিব সেটা হল খুবই সহজ, সেটি হল যাদের হাঁটু ব্যথা আছে তাদেরকে কারও সাহায্যে হাতে ধরে প্রথমে উঠাবসা করান, সতর্কভাবে প্রথমে ৫–১০ টি করুন, এভাবে আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে। এরপর কারও সাহায্যে হাঁটতে সাহায্য করুন, আর গরম পানি বা প্যডের মাধ্যমে স্যক দিবেন। এভাবে করতে করতে নিজেই দেখবেন হাঁটতে পারবেন। এভাবেই থাকবে না আর হাঁটু ব্যথা। (সংগৃহীত)

এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ