পিরিয়ড নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কথা...
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ১৬:৪৩
ঢাকা, ২৭ মে, এবিনিউজ : প্রতিবেশী ভাবির সাথে আমাদের (প্রতিবেশী অন্য মেয়েদের) অনেক সখ্যতা থাকে। ভাবি আধুনিকা, স্মার্ট এবং হাসিখুশি, খুবই আপন জন। একদিন ভাবি চোখমুখ অন্ধকার করে বাসায় আসলেন। ‘কেন আমার মেয়ের সাথেই এমন হলো’– বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভাবির দুটো মেয়ে– বড়টা ক্লাস ফোরে পড়ে আর ছোটটা ওয়ানে। কথা বলে জানা গেল, ফোর পড়ুয়া মেয়েটির পিরিয়ড শুরু হয়েছে। এত ছোট মেয়ে কিভাবে এসব ঝামেলা সামলাবে তা নিয়ে তার ভয়।
বাড়িতে ঈদ করতে গেলে আমার মেয়ের হঠাৎ পিরিয়ড হয়। আমার শাশুড়ি মায়ের সে কি খবরদারি। এটা করো না, ওটা করো না। এখানে যেও না, ওখানে যেও না। এটা, ওটা ধরো না। তখন মনে পড়ল, আমারর তখন নতুন বিয়ে হয়েছে। ননদের জন্য বাবার বাড়ি থেকে একটা জামা দেয়া হয়। ও সেটা পরে খুব খুশি। সেদিনই ওর পিরিয়ড হয়। আমার শাশুড়ির নিষেধাজ্ঞা ওই জামা পরিহিত অবস্থায় যেহেতু পিরিয়ড হয়েছে, সেহেতু ওটা আর পরা যাবে না। কাউকে দিয়ে দিতে হবে। ওর সে কি কান্না!! শত কান্নাতেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন একজন আবেগি মায়ের মন গলেনি সন্তানের মঙ্গল কামনায়। এরপরের অংশ আরো মজার। যেহেতু তার পিরিয়ড হয়েছে, সেহেতু সে ‘সাবালিকা’ এবং সেটার একটা উদযাপন হতে হবে। জামা কাপড় গিফট প্রদান এবং আশেপাশের মহিলাদের দাওয়াত দিয়ে তা করা হয়। নতুন একটা উৎসবের সাথে সেদিন পরিচিত হলাম।
আমাদের সমাজে এই পিরিয়ড নিয়ে নানা কথা আছে, আছে নানান কুসংস্কার। আছে অপরিচ্ছন্ন জীবন যাপন। আছে লজ্জা, টিটকারী, অপমানের নানাক্ষেত্র। সঠিক শিক্ষা, উন্নত প্রচারণার অভাব পিরিয়ডের মত নারীর এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবহেলার সম্মুখীন হয়ে নারীরা জরায়ু ক্যানসারসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত।
আমাদের আসলে বিসমিল্লায় গলদ!! পরিবার থেকে পিরিয়ড শুরুর আগে প্রাথমিক কোন ধারণা দেয়া হয় না। যার ফলে হঠাৎ এমন একটা ঘটনায় মেয়েরা ভীষণ মুষড়ে পড়ে, ভয় পায়। এর পর যখন নানা রকম নিয়মকানুনে শেকল পরানো হয়, বন্দী করে দেয়া হয় তার স্বাভাবিক চালচলনে তখন সে আরো ঘাবড়ে যায়। এ সময়টাতে এমনিতেই নানা রকম শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। মেজাজ খিটমিটে, বমি ভাব, পেট ব্যথা, বিষণ্নতা, অরুচি, ঘন ঘন বাথরুম যাওয়া ইত্যাদি। তখন আসলে পরিবার, বন্ধু, ও সমাজের সাপোর্ট ভীষণ প্রয়োজন।
কেন পরিবারের বাইরে বন্ধু ও সমাজের কথা বললাম?
আমাদের সমাজে ছেলেদের এই পিরিয়ড নিয়ে আছে দারুণ আগ্রহ এবং অবশ্যই তা পজেটিভ নয়। নানা রকম টিটকারী, অঙ্গভঙ্গি, অশালীন উক্তির মধ্য দিয়ে একটা মেয়েকে পথ চলতে হয় আর সেখানে যদি জামার পিছনে সামান্য লাল রঙের ছোঁয়াও দেখা যায় তবে তা তাদের জন্য হয়ে উঠে আরো মুখরোচক, উপভোগ্য!! অথচ পিরিয়ডের মত এমন একটি বিষয় যদি সহজ করে ছেলেদেরও বোঝানো হতো, তবে তারা সঠিক ব্যাপারটা জানতো। এটা একটা প্রাকৃতিক অনবদ্য ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যার কারণে আমরা ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে এই পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখতে পারি। তাকে যদি ধারণা দেয়া হতো কতটুকু কষ্ট, ব্যথার মধ্য দিয়ে একটা মেয়েকে এই দিনগুলো পার করতে হয় তবে সে উৎপীড়কের ভূমিকায় না থেকে শ্রদ্ধায় মাথা নত করতো। তার দেখাদেখি তার বন্ধুমহলও আরো সচেতন হতো। সমাজে নারীর সম্মান বৃদ্ধি পেত। স্কুলগুলোতে টিচাররা দুঃখজনক ভাবে কোন ভূমিকা পালন করেন না; অথচ তারা এখানে এক চমৎকার ভূমিকা রাখতে পারতেন। বরং তারা সেই দায় এড়িয়ে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত এই সম্পর্কিত অধ্যায় বাদ দিয়ে, গঠনমূলক আলোচনা না করে বাড়িতে বসে পড়ার সবক দেন যা অত্যন্ত হতাশাজনক চিত্র। আমাদের মসজিদ, মন্দিরের মত ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে ঋতুবতী নারীর প্রবেশ, স্পর্শ নিষেধ নোটিশ আকারে দিয়ে তা আরো একধাপ পিছিয়ে দিয়েছে। আমাদের এসব কুসংস্কার হতে বের হতে হবে। পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখার শারীরবৃত্তিক চলমান এই প্রক্রিয়াকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সম্মান জানাতে হবে। নারী যাতে এই সময়কালীন অধ্যায় পার হতে গিয়ে নিরাপদ থাকে তা নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত। পিরিয়ড চলাকালীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর অধিকতর গুরুত্ব দেয়া উচিত। সুলভ মূল্য ও সচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে বাংলাদেশে এখনও ৭০%মেয়ে স্যানেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। যারা ব্যবহার করে তারাও এর সঠিক ব্যবহার জানেন না। তাই পথে ঘাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কুকুরের দলের কামড়াকামড়িতে অস্বস্তিসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা যায়। যেহেতু এসব সিনথেটিক ন্যাপকিন অপচনশীল, সেহেতু আমাদের নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। প্রয়োজন সহজলভ্য, পচনশীল ও সাশ্রয়ী দামের স্যানেটারী ন্যাপকিন। গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ নারী পুরাতন কাপড় ব্যবহার করেন। তাতে খারাপ কিছু নেই কিন্তু ভালো ভাবে ধুয়ে প্রখর রোদে শুকিয়ে কাপড়কে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা উচিত। অধিক সংকোচের কারণে বেশির ভাগই অন্ধকার, আলোহীন, আড়াল জায়গায় রেখে তা শুকায় যা জীবাণু মুক্ত তো হয়ই না ববরং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, জরায়ু ক্যানসার সহ নানাবিধ মেয়েলি সমস্যা এতে বৃদ্ধি পায়। পাতলা, নরম কাপড়ের ব্যবহারকে আধুনিকায়নের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা নিতান্তই অল্প। সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সমাজের কর্ণধার ও ধনবান ও সমাজ সেবকদের আন্তরিক পদক্ষেপ খুব দ্রুত প্রয়োজন। প্রয়োজন সহজ লভ্যতার জন্য সামাজিক ট্যাবু ভাঙা। মেয়েরা যাতে নিজের প্রয়োজনে দ্বিধামুক্ত ভাবে নিতে পারে, তার জন্য স্কুলগুলোতে ব্যবস্থা রাখতে পারে। পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রীর মত বিনা খরচে ন্যাপকিন দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিতে পারে। ন্যাপকিন বানানোর পদ্ধতি ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে যাতে নিজের ন্যাপকিন নিজেই করে নিতে পারে। সবার আগে প্রয়োজন পুরাতন ধ্যান ধারণা থেকে বের হওয়া। ঋতুবতী নারী মানেই অচ্ছ্যুত–এ বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসলে বাকি কাজটুকুও এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি। আলোকিত নারীই সোনার বাংলাদেশ গড়তে অনেক বড় ভূমিকা নিতে পারে। এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি
আমাদের সমাজে ছেলেদের এই পিরিয়ড নিয়ে আছে দারুণ আগ্রহ এবং অবশ্যই তা পজেটিভ নয়। নানা রকম টিটকারী, অঙ্গভঙ্গি, অশালীন উক্তির মধ্য দিয়ে একটা মেয়েকে পথ চলতে হয় আর সেখানে যদি জামার পিছনে সামান্য লাল রঙের ছোঁয়াও দেখা যায় তবে তা তাদের জন্য হয়ে উঠে আরো মুখরোচক, উপভোগ্য!! অথচ পিরিয়ডের মত এমন একটি বিষয় যদি সহজ করে ছেলেদেরও বোঝানো হতো, তবে তারা সঠিক ব্যাপারটা জানতো। এটা একটা প্রাকৃতিক অনবদ্য ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যার কারণে আমরা ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে এই পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখতে পারি। তাকে যদি ধারণা দেয়া হতো কতটুকু কষ্ট, ব্যথার মধ্য দিয়ে একটা মেয়েকে এই দিনগুলো পার করতে হয় তবে সে উৎপীড়কের ভূমিকায় না থেকে শ্রদ্ধায় মাথা নত করতো। তার দেখাদেখি তার বন্ধুমহলও আরো সচেতন হতো। সমাজে নারীর সম্মান বৃদ্ধি পেত। স্কুলগুলোতে টিচাররা দুঃখজনক ভাবে কোন ভূমিকা পালন করেন না; অথচ তারা এখানে এক চমৎকার ভূমিকা রাখতে পারতেন। বরং তারা সেই দায় এড়িয়ে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত এই সম্পর্কিত অধ্যায় বাদ দিয়ে, গঠনমূলক আলোচনা না করে বাড়িতে বসে পড়ার সবক দেন যা অত্যন্ত হতাশাজনক চিত্র। আমাদের মসজিদ, মন্দিরের মত ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে ঋতুবতী নারীর প্রবেশ, স্পর্শ নিষেধ নোটিশ আকারে দিয়ে তা আরো একধাপ পিছিয়ে দিয়েছে। আমাদের এসব কুসংস্কার হতে বের হতে হবে। পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখার শারীরবৃত্তিক চলমান এই প্রক্রিয়াকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সম্মান জানাতে হবে। নারী যাতে এই সময়কালীন অধ্যায় পার হতে গিয়ে নিরাপদ থাকে তা নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত। পিরিয়ড চলাকালীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর অধিকতর গুরুত্ব দেয়া উচিত। সুলভ মূল্য ও সচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে বাংলাদেশে এখনও ৭০%মেয়ে স্যানেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। যারা ব্যবহার করে তারাও এর সঠিক ব্যবহার জানেন না। তাই পথে ঘাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কুকুরের দলের কামড়াকামড়িতে অস্বস্তিসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা যায়। যেহেতু এসব সিনথেটিক ন্যাপকিন অপচনশীল, সেহেতু আমাদের নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। প্রয়োজন সহজলভ্য, পচনশীল ও সাশ্রয়ী দামের স্যানেটারী ন্যাপকিন। গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ নারী পুরাতন কাপড় ব্যবহার করেন। তাতে খারাপ কিছু নেই কিন্তু ভালো ভাবে ধুয়ে প্রখর রোদে শুকিয়ে কাপড়কে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা উচিত। অধিক সংকোচের কারণে বেশির ভাগই অন্ধকার, আলোহীন, আড়াল জায়গায় রেখে তা শুকায় যা জীবাণু মুক্ত তো হয়ই না ববরং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, জরায়ু ক্যানসার সহ নানাবিধ মেয়েলি সমস্যা এতে বৃদ্ধি পায়। পাতলা, নরম কাপড়ের ব্যবহারকে আধুনিকায়নের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা নিতান্তই অল্প। সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সমাজের কর্ণধার ও ধনবান ও সমাজ সেবকদের আন্তরিক পদক্ষেপ খুব দ্রুত প্রয়োজন। প্রয়োজন সহজ লভ্যতার জন্য সামাজিক ট্যাবু ভাঙা। মেয়েরা যাতে নিজের প্রয়োজনে দ্বিধামুক্ত ভাবে নিতে পারে, তার জন্য স্কুলগুলোতে ব্যবস্থা রাখতে পারে। পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রীর মত বিনা খরচে ন্যাপকিন দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিতে পারে। ন্যাপকিন বানানোর পদ্ধতি ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে যাতে নিজের ন্যাপকিন নিজেই করে নিতে পারে। সবার আগে প্রয়োজন পুরাতন ধ্যান ধারণা থেকে বের হওয়া। ঋতুবতী নারী মানেই অচ্ছ্যুত–এ বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসলে বাকি কাজটুকুও এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি। আলোকিত নারীই সোনার বাংলাদেশ গড়তে অনেক বড় ভূমিকা নিতে পারে। এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ