আজকের শিরোনাম :

ফ্যাশন পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১১:১৫ | আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১১:১৭

পশ্চিমা বিশ্বে শীত, গ্রীষ্ম, শরৎ সব মৌসুমে নতুন সব ডিজাইনের পোশাক বের হয়।

গত মৌসুমে যে পোশাকটি হাঁটু পর্যন্ত চল ছিল, ঠিক তার কয়েক মাস পরেই পায়ের গোড়ালি ছুঁই অথবা বেশি ঘের, কম ঘেরের কোনো গাউন বাজার মাতিয়ে দিল।

প্রতি মৌসুমে আপনিও ছুটছেন জমকালো শপিং মলে সেটি কিনবেন বলে। হঠাৎ বাজারে নির্দিষ্ট কোনো রঙের পোশাকের খুব কাটতি বাড়ল।

যেমন বাংলাদেশে উৎসবের মৌসুমে নির্দিষ্ট কিছু রঙের পোশাক কিনতে মানুষজন বাজারে ছুটতে থাকেন। কিন্তু বাকি সারা বছর পোশাকটি পরে থাকে। কয়েক মাস পরে তা হয়ে যায় গত মৌসুমের পোশাক।

ডিজাইনার ও পোশাক বিক্রেতারা আনকোরা কিছু দিতে সবসময় একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামেন। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি আমরা সবাই। নিত্য নতুন পোশাক পরে বাহবা পেতে চাই আমরা অনেকে। কিন্তু এর একটা চরম খেসারত দিতে হচ্ছে পরিবেশকে।

ফ্যাশন কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে?
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি প্রচুর পরিমাণে গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন করে। ব্রিটেনে পোশাক বিক্রেতা এবং হাল ফ্যাশন নিয়ে মাতামাতি করেন এমন ব্যক্তিরা পরিবেশের ক্ষতিতে তাদের ভূমিকার জন্য সমালোচিত হচ্ছেন।

ব্রিটেনে হাউস অব কমন্সের পরিবেশবিষয়ক একটি কমিটি বলছে প্রতি মৌসুমে না লাগলেও শুধু কেতাদুরস্ত থাকার জন্য নতুন কাপড় কেনা মানেই এক বছর বা মাত্র কয়েক মাসেই প্রচুর কাপড় বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

বাতিল কাপড় গিয়ে জমছে ময়লার ভাগাড়ে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেনেই সবচাইতে বেশি নতুন কাপড় কেনার প্রবণতা।

গত এক দশক আগে মানুষজন সেখানে যে পরিমাণ কাপড় ক্রয় করতো এখন তার দ্বিগুণ কিনছে।

এ কমিটির তথ্য অনুযায়ী ব্রিটেনে গত বছর প্রায় ২৫ কোটি জামা কাপড় ময়লার ভাগাড়ে পাঠানো হয়েছে।

এক বছরের মধ্যে সেখানে প্রতি ৫টি কাপড়ের ৩টি বাতিল হচ্ছে এবং ল্যান্ডফিল থেকে সেগুলো সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

তাতে খরচ হচ্ছে জ্বালানি। ব্রিটেনে ২০১৫ সালে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কারণে ১২০ কোটি টন কার্বন উৎপন্ন হয়েছে।

কাপড় প্রস্তুত করতে বা ধুতে পানি ও বিদ্যুৎ লাগে, জ্বালানি লাগে সেটি বিবেচনা করতে হবে।

একটি জিনসের প্যান্ট যতদিন টেকে ততদিন সেটি পরিষ্কার করতে প্রায় ৪ হাজার লিটার পানি দরকার হয়।

মাত্র একটি জিনস পরিষ্কার করতে যদি এত পানি লাগে তাহলে আপনি বছরজুড়ে জিনসসহ যত কাপড় পড়ছেন তা পরিষ্কার করতে কত পানি লাগে চিন্তা করুন তো।

বা একটা পুরো শহরের কাপড় ধুতে কত পানি লাগে? কাপড় উৎপন্ন করতে বিদ্যুৎ লাগে। মেশিনে কাপড় পরিষ্কার করতে বা তা আয়রন করতেও বিদ্যুৎ লাগে।

হাউস অব কমন্সের পরিবেশবিষয়ক কমিটি আরও বলছে, শুধু একটি পরিবার মেশিনে একবার কাপড় পরিষ্কার করার পর ৭০ হাজার কাপড়ের তন্তু পানির সাথে পরিবেশে মিশে যাচ্ছে।

যেসব কাপড় আপনি বাতিল করছেন তা এক পর্যায়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। সমুদ্রের মাছ কৃত্রিম কাপড় খাচ্ছে।

এই কমিটির হিসাবে ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রিটেনে জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব পড়বে তার তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি দায় হবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির।

এর সমাধান কী?
কাপড় ফেলে দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আনার পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেনের পরিবেশবিষয়ক কমিটি।

তারা বলছে, পরিবেশের ওপর যে প্রভাব পড়ছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে সরাসরি তার দায়ভার নিতে হবে। দূষণ রোধে তাদের সরাসরি কাজ করতে হবে।

ব্রিটেনে যেসব পোশাক বিক্রি হয়না সেগুলো পুড়িয়ে ফেলছেন অনেক বিক্রেতা। সেটি বন্ধ করার কথা বলছে কমিটি।

ব্যক্তি হিসেবে আপনারও করনিয় আছে। যেমন ফেলে না দিয়ে কাপড় দান করে পারেন।

এতে কাপড় রিসাইক্লিং হবে এবং কিছুটা লাভ হবে। শুধু দরিদ্র নয় আপনি নিজেও রিসাইক্লিং করা কাপড় কিনতে পারেন।

বেশিদিন টেকে এমন কাপড় তৈরি করা যেতে পারে। ইচ্ছেমত কাপড় বাতিল করার বদলে বেশিদিন পড়তে পারেন।

পোশাক বিক্রেতারা কী বলছেন?
ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের কর্মকর্তা পিটার অ্যান্ড্রুজ বিবিসিকে বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের কাপড়ের চাহিদার কারণে কাপড়ের পরিমাণ এবং পরিবেশের ওপর তার প্রভাব বাড়ছে।

তিনি বলেন, তাদের সদস্যরা এখন বেশি টেকে এমন পোশাক ডিজাইন করছেন।

তারা ক্রেতাদেরও কাপড় দান করার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন। ক্রেতাদের বলা হচ্ছে অব্যবহৃত কাপড় দোকানে দিয়ে যেতে।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ