কারাগার থেকে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেছেন মিন্নি
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২০, ১৯:৩৫
বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জেলা কারাগারের কনডেম সেল থেকে বাবা-মাায়ের সাথে ফোনে কথা বলার সময় বলেছেন, তিনি নির্দোষ, একদিন সত্যের জয় হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কারাগারের টেলিফোন দিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন মিন্নি।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানান, ‘সকাল ১০টার দিকে মিন্নি আমার ও আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। সে খুব কান্নাকাটি করেছে। মিন্নি বলেছে, সে নির্দোষ, এ খুনের সাথে সে জড়িত নয়। একদিন সত্যের জয় হবে। ধৈর্য ধারণ করে মামলা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে বলেছে।’
মিন্নির বাবা আরও বলেন, ‘মিন্নি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। জেলাখানায় সে ভালো নেই। ষড়যন্ত্র করে আমার মেয়েকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’
বরগুনা জেলা কারাগারের কনডেম সেলের একমাত্র নারী আসামী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া অন্য পুরুষ আসামিদেরকে পুরুষ ওয়ার্ডের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।
বরগুনা জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী ছয় বন্দিকে কনডেম সেলে থালা, বাটি ও কম্বল দেওয়া হয়েছে। প্রতি আসামিকে কারাগারের পক্ষ থেকে দুই সেট পোশাক দেয়া হয়েছে।’
জেলা সুপার আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে বরগুনা জেলা কারাগারে নারী বন্দিদের মধ্যে একমাত্র মিন্নিই কনডেম সেলে আছেন। মিন্নি ব্যতীত বরগুনার কারাগারের কনডেম সেলে অন্য কোনো নারী বন্দি নেই। রিফাত হত্যা মামলার অপর পাঁচজন পুরুষ আসামিকেও কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এই পাঁচ পুরুষ বন্দি ব্যতীত বরগুনার কারাগারের কনডেম সেলে আর অন্য কোনো পুরুষ বন্দিও নেই।’
তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারের যে বিশেষ কক্ষে রাখা হয় সেটাকে কনডেম সেল বলা হয়। কনডেম সেলের বন্দিরা কখনো সেল থেকে বাইরে বের হতে পারেন না। এসব বন্দিরা মাসে একবার তার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এছাড়াও সপ্তাহে একবার তারা ফোনে তাদের স্বজনদের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কথা বলতে পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মিন্নিকে আজ সকালে খাবার হিসেবে রুটি ও চিনি দেওয়া হয়েছিল। দুপুরের খাবারে ভাত, সবজি ও ডাল দেওয়া হয়েছে। রাতে গরুর মাংস, ভাত ও ডাল দেওয়া হবে।’
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন আসামি।
প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর জন্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চার্জ গঠন করেন। গত ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষ হয়। বুধবার মিন্নিসহ ৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
এবিএন/মমিন/জসিম