আজকের শিরোনাম :

করোনার ‘পজিটিভ-নেগেটিভ’ রিপোর্ট দিতেন স্বামী-স্ত্রী!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২০, ০০:৫৮

গুলশানের কনফিডেন্স টাওয়ারের অফিসে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা কম্পিউটারে জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই মনগড়া রিপোর্ট সরবরাহের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন এক দম্পতি।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি এক প্রতিবেদনে বুধবার (২৪ জুন) জানিয়েছে, এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

অপরদিকে, একই অভিযোগে গ্রেফতার সাঈদ চৌধুরী (৪৭), বিপ্লব দাস (২৫), মামুনুর রশীদ (১৯) এবং আরিফুল চৌধুরীর (৪০) দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এদিন এই ছয় আসামিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।

এ সময় আসামি হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনার জবানবন্দি রেকর্ড করারও আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিমানবন্দর, আশকোনা বাড়ি ও গুলশান-২ এর কনফিডেন্স টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছিল তেজগাঁও থানা পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, হুমায়ুন কবির এই চক্রের মূলহোতা। স্ত্রী তানজীনার সহায়তায় তারা রাজধানীর বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দিতেন।

চক্রটি জনপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের ভাষ্যমতে, অভিযুক্তরা করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীদের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দিতো। তবে নমুনা সংগ্রহ করার পর সেগুলো পরীক্ষা করতো না তারা। তাদের নেই কোনো ল্যাব। কম্পিউটারে ফলাফল লিখে ই-মেইলে তা রোগীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এভাবে ইতোমধ্যে ৩৭ জনের ভুয়া কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট জানিয়েছে তারা।

নমুনা সংগ্রহের সময় রোগীর বাহ্যিক উপসর্গ দেখে একটা ধারণা থেকে ফলাফল তৈরি করতো তারা। করোনাভাইরাসের বাহ্যিক উপসর্গ দেখা দিলে তার পরীক্ষার রিপোর্ট “পজিটিভ” উল্লেখ করা হয়। কোনো উপসর্গ না দেখা দিলে তার রিপোর্টে “নেগেটিভ” উল্লেখ করা হয়।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বলেন, গুলশানের কনফিডেন্স টাওয়ারের অফিসে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা কম্পিউটারে জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছেন তারা। বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে জনপ্রতি পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন উর রশিদ বলেন, এই চক্রটি আগে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নামের প্রতিষ্ঠানে বুথের মাধ্যমে করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন লোকের নমুনা সংগ্রহের চাকরি করতো। প্রতিষ্ঠানটি আইইডিসিআর থেকে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুমোদিত।

গত ১২ এপ্রিল তারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে তারা অনলাইনে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়। তাদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।

তেঁজগাও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল উদ্দীন বলেন, বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত কোনো অনুমোদন নেই। তারপরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে আসছিল। তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ