আজকের শিরোনাম :

‘প্রধান বিচারপতি সব করেন এটা ভুল ধারণা’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ মে ২০১৮, ১৭:২১ | আপডেট : ১০ মে ২০১৮, ১৭:৩২

ঢাকা, ১০ মে, এবিনিউজ : প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে, মেজরিটির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। ভুল ধারণা আছে, প্রধান বিচারপতি সব কাজ করেন। কিন্তু তা নয়। মেজরিটির ভিত্তিতেই সব হয়। সকল বিচারপতির ক্ষমতা সমান।’

আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আপিল শুনানির শেষ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপিল বিভাগে আমাদের সব বিচারপতির জুডিশিয়াল পাওয়ার সমান। এখানে প্রধান বিচারপতির আলাদা কোনো ক্ষমতা নেই। প্রধান বিচারপতি একা সব করেন এটা ভুল ধারণা । এখানে আমার ব্রাদার জাজদের যে ক্ষমতা প্রধান বিচারপতিরও সমান ক্ষমতা। এরপর বিচারপতিরা এজলাস থেকে নেমে আলোচনার জন্য খাসকামরায় যান।

এর প্রায় ২০ মিনিট পর বিচারকরা এজলাসে ফিরে আদেশ দেন। হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ তুলে দিয়ে আইন অনুযায়ী আগামী ২৮ জুনের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতেই হবে বলে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর আগে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শুরু হয় কার্যক্রম। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, এবং তিন বিচারপতি ইমান আলী, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসাইন হায়দারের আপিল বেঞ্চে বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত চলে এই শুনানি। এরপর চার বিচারপতি মিনিট তিরিশেক চার বিচারপতি পরামর্শ করে আদেশ দেন।

শুনানির শুরুতে হাসান উদ্দিন সরকারের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘দুটি রিট করা হয়েছিল, এখানে একটির কথা বলা হয়েছে। তথ্য গোপন করা হয়েছে। নট প্রেস হয়েছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা কাগজ দেখে এসেছি, নট প্রেস হয়েছে।’

জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘২০১৩ সালে সিটি নির্বাচন হয়েছিল, এই ছয়টি মৌজা সেখানে ছিল।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নির্বাচন আর কত দিন বাকি আছে?

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘পাঁচ দিন আছে।’

আদালত বলেন, ‘পাঁচ দিনে কত খরচ হবে? খরচ তো কমে যাবে।’

এ সময় হাসানের আরেক আইনজীবী মাহবুব উদ্দীন খোকন দাঁড়িয়ে বলেন, ‘রিট আবেদনকারী ওই এলাকার ভোটার না।’

বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কেন বলছেন? জয়নুল আবেদিন বলবেন।’

জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘তারা সিডিউলটা চ্যালেঞ্জ করেছে।’

বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে গ্রাউন্ড কী? কেন তিনি আসলেন?’

জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘২০১২ সালে আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়েছে।’

এ সময় সুরুজের আইনজীবী রোকন উদ্দীন মাহমুদ দাঁড়ান। তখন তাকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বলেন, ‘চার বছর পর গেজেট হলো কেন?’

রোকন উদ্দীন মাহমুদ বলেন, ‘২০১৩ সালে ১৬ জানুয়ারি ছয়টি মৌজা নিয়ে নেয় সিটি করপোরেশন। বেআইনিভাবে রিট আবেদনকারীর এলাকা নেয়া হয়েছে গাজীপুরে।’

বিচারপতি বলেন, ‘আপনার নির্বাচন (ইউনিয়ন পরিষদ) কবে হয়েছে?’

রোকন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ গাজীপুর সিটিতে নিলে আরবার এরিয়া ঘোষণা করতে হবে। গাজীপুর সিটিতে নেয়া হয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে (ঢাকার) অবহিত করা হয়নি।’

বিচারপতি বলেন, ‘১৬-১-২০১৩ সালে আপনার অভিযোগ ছিল। এরপর নির্বাচন হয়েছে। আগে চ্যালেঞ্জ করেননি কেন? ২০১৬ সালে ছয় মৌজাসহ নির্বাচন হয়েছে কি না?’

রোকন উদ্দীন মাহমুদ বলেন, ‘হ্যাঁ’।

বিচারপতি বলেন, ‘তখন প্রতিবাদ করেননি কেন? গত চার মাস তফসিল হল, মনোনয়পত্র প্রত্যাহার হলো, নির্বাচনের ১০ দিন আগে রিট করলেন কেন?’

রোকন বলেন, ‘পরে এসেছি বলে কি রিট বাদ হয়ে যাবে?’

বিচারপতি বলেন, ‘আরও ১০ দিন পরে আসতে পারতেন।’

রোকন বলেন, ‘বিগত ১৮ বছর  ধরে দেখেছি, সিটি নির্বাচন আর স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হোক,  তিন-চার-পাঁচ দিন আগে রিট করে।’

বিচারপতি বলেন, ‘সংক্ষুব্ধ হলে আগে আসেন না কেন?’

রোকন বলেন, ‘ছয়টি মৌজা গাজীপুরে নিয়ে গেছে।’

বিচারপতি বলেন, ‘ওনারা বলছেন এর আগেও এখানে নির্বাচন হয়েছে। এখন কেন আসলেন ? ১৩ সালে আসলেন না, আবার ১৮ সালে আসলেন। এখন কেন মনে হলো?’

রোকন বলেন, ‘এক এলাকাকে অন্য এলাকায় নিতে হলে জেলা প্রশাসককে অবহিত করতে হয়। খাজনাসহ সবকিছু তাদের সাভারে (ছয় মৌজার নাগরিকদের) দিতে হয়।’

 এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থী আমিন উদ্দীন শুনানি শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে গেজেট হয়েছে, ঢাকা জেলা থেকে ছয়টি মৌজা গাজীপুরে নিয়ে গেছেন। রিটকারী বলছেন এটি ঢাকা জেলা এটি এখন আদালতের বিচার্য বিষয়।’

নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ওবায়দুর রহমান মোস্তফা বলেন, ‘সংবিধানের ১২৫ এর (গ) অনুযায়ী শুনানির আগে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। কিন্তু জানানো হয়নি।’

বিচারপতি বলেন, ‘এটা তো সংসদ নির্বাচন না, আসন বণ্টন করতে হবে কেন? স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইনটি পড়েন।’

মোস্তফা বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের নোটিশ বিধিবদ্ধ আছে বলে জানা নেই।’

বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে সংবিধানে যাচ্ছেন কেন? স্থানীয় সরকারে আসেন। আইন বই তো নিয়ে আসিনি।’

নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘ঢাকা জেলা প্রশাসককে জানানো (ছয় মৌজা গাজীপুরে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে) হয়েছে।’

বিচারপতি বলেন, ‘আদালত জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন সেটা দেখান। এখানে বসে বসে সবকিছু দেখতে হবে এটা অপ্রত্যাশিত।’

শুনানির শেষ দিকে গাজীপুরের ভোটের বিষয়টি আবার উঠে। তখন সুরুজের আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে গেছে।’

বিচারপতি বলেন, ‘নির্বাচন কত তারিখ?’

রোকন বলেন, ‘১৫ তারিখ।’

শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মেজরিটির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। ভুল ধারণা আছে, প্রধান বিচারপতি সব কাজ করেন। কিন্তু তা নয়। মেজরিটির ভিত্তিতেই সব হয়। সকল বিচারপতির ক্ষমতা সমান ‘

এ সময় বিচারপতিরা পরামর্শের জন্য এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় যান। প্রায় ৩০ মিনিট পর তারা আবার এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। এরপর আদালত আদেশ দেয়ে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন নিতে নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দেয়া হয়।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ