আজকের শিরোনাম :

ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্যের বিশাল বৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক: টিআইবি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:৫৬

পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের অজুহাতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে ঢাকা ওয়াসার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পানির মূল্য বৃদ্ধির  প্রস্তাব অযৌক্তিক,গ্রাহকদের ওপর নির্যাতনমূলক ও অগ্রহনযোগ্য মনে করে   ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞসহ গণশুনানির মাধ্যমে ওয়াসা আইন ও  সেবার মান, বিশেষ করে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ও গুণগত মান নিশ্চিত করা সাপেক্ষে  যৌক্তিক ও সহনীয় মাত্রায় মূল্য বৃদ্ধির আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,গণমাধ্যমে  প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা আবাসিক  গ্রাহক পর্যায়ে  প্রতি ইউনিট পানির দাম ১১.৫৭ টাকা  থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক  গ্রাহক পর্যায়ে ৩৭.০৪ টাকা  থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা (সার্বিকভাবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি) নির্ধারণের  প্রস্তাব করেছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও  অগ্রহণযোগ্য। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধির বিধানের সাথে এই  প্রস্তাব সাংঘর্ষিক।  প্রস্তাব অনুযায়ী মূল্য বৃদ্ধি করলে তা ইতোমধ্যেই ওয়াসা কর্তৃক ন্যায্য পরিমাণে পানি সরবরাহ বিশেষ করে পানির গুণগত মান নিশ্চিতে ব্যর্থতার কারণে হতাশ নগরবাসীর জন্য অধিকতর নির্যাতন ও বিড়ম্বনার কারণ হবে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর অন্যায্য চাপ আরো বৃদ্ধি করবে। উন্নয়ন ব্যয় বহনের নামে সেবার মান উন্নত ও পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিত না করে মূল্য বৃদ্ধির এই অন্যায্য  প্রস্তাব  ঢাকা ওয়াসার একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ। যে পানি ওয়াসার শীর্ষ কর্মকর্তাগণ নিজেরাই পান করতে নিরাপদ বোধ করেন না, তার মূল্য বৃদ্ধির এই  প্রস্তাব  সম্পূর্নরূপে অগ্রাহ্য করে ওয়াসার সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।  

ঢাকা ওয়াসা নিয়ে ২০১৯ সালের  এপ্রিলে   প্রকাশিত টিআইবির গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, “গবেষণায়  দেখা গেছে, ঢাকা ওয়াসার অধীনে জরিপে অন্তর্ভুক্ত ৪৪.৮ শতাংশ সেবাগ্রহীতা চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না, ৫১.৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতার কাছে সরবরাহকৃত পানি অপরিষ্কার এবং ৪১.৪ শতাংশের কাছে সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধযুক্ত।

ওয়াসার সেবার মান ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সার্বিকভাবে ৩৭.৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতাই অসন্তুষ্ট। তাই সেবা গ্রহীতাদের মতামত না নিয়ে এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও সিস্টেম লস নিরসনে সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা ছাড়াই একতরফাভাবে পানির মূল্যবৃদ্ধির এই  প্রস্তাব   গ্রাহকদের ওপর অন্যায্য বোঝা চাপিয়ে দিবে, যা অগ্রহণযোগ্য।”

সেবার মান বাড়াতে উন্নয়ন  প্রকল্পের জন্য গৃহীত ঋণ পরিশোধ ও ভর্তুকি মেটাতে অতিরিক্ত অর্থের  প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে ড. জামান আরো বলেন, উন্নয়ন  প্রকল্পের জন্য অর্থ  প্রবাহ বাড়ানোর নামে অযৌক্তিকভাবে পানির মূল্য বৃদ্ধির আগে ঢাকা ওয়াসার ক্রয়  প্রক্রিয়া  প্রকল্প  বাস্তবায়ন এবং  গ্রাহক পর্যায়ের মিটার রিডিংসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে অভ্যন্তীণ সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। একটি বড়  প্রকল্প  বাস্তবায়নে অবহেলা ও ধীরগতির কারণে অনুমোদিত মেয়াদ অতিক্রম করলেই কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়, যা জনগণের  অর্থের অপচয়। আবার  গ্রাহক পর্যায়ে বিল আদায়ে অবহেলা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণসহ ওয়াসার চলমান কর্তৃত্ববাদী ও জবাবদিহিহীন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারলে ওয়াসার অর্থের যোগান অনেক বাড়বে। বিবৃতিতে ওয়াসা আইনে পানির মূল্য নির্ধারণের পূর্বে বিশেষজ্ঞসহ সেবাগ্রহিতাদের মতামত গ্রহণের জন্য গণশুনানির বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করে পানি ও পয়নিষ্কাশন সেবার মূল্য নির্ধারণে স্বতন্ত্র রেগুলেটরি কাঠামো গঠন এবং ওয়াসা বোর্ডের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ ও  প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠনের আহ্বান জানায় টিআইবি। 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ