আজকের শিরোনাম :

রুম্পার মৃত্যু : জুতার ছাপে ‘রহস্য’ উদ্ঘাটনের চেষ্টা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:১১ | আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:১৮

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের এক কানা গলির শেষ প্রান্তে পড়ে ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার লাশ। সামনে যাওয়ার কোনো পথ নেই, কারণ এটি মৌচাকের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ১১ তলা ভবনের পেছনের অংশ। গলির বাঁ দিকে পাঁচতলা ভবনের পাশের অংশ এবং ডান দিকে ৬৪/৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের চারতলা ভবনের সামনের অংশ। আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স ভবনের পেছনের অংশে গলির শেষ মাথা বরাবর ১১ তলার ছাদের কিনারায় এক জোড়া জুতার ছাপ পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা, ওই ছাপ রুম্পার জুতার । নিচে পড়ার আগে হয়তো তিনি সর্বশেষ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই ছাপ ও রুম্পার জুতা পাঠানো হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে। বাসা থেকে বের হওয়ার পর চার ঘণ্টা রুম্পা কোথায় ছিলেন- সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছেন তদন্ত সংশ্নিষ্টরা। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কি-না, সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

এদিকে রুম্পাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে জড়িত বা জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল শুক্রবার সিদ্ধেশ্বরীতে মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। রুম্পা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

গত বুধবার রাত ১১টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ৬৪/৪ নম্বর ভবনের সামনে থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। ৬৪/৪ নম্বর ভবনের নিচতলার মেসের বাসিন্দা পলাশ দেবনাথ জানান, বুধবার রাতে তিনিসহ রুমমেটরা ঘরে ছিলেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে বিকট শব্দ শুনে তিনিসহ রুমমেটরা বাইরে বেরিয়ে তরুণীকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন।

রাত ১১টার দিকে পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। পরিচয় না পাওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। আসামি করা হয় অজ্ঞাত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুম্পার পরিচয় মেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের বিজয়নগরে। তার বাবা রোকন উদ্দিন হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে রুম্পা বড়। মা ও ভাইয়ের সঙ্গে রাজধানীর শান্তিবাগে বসবাস করতেন। গতকাল শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে রুম্পার লাশ দাফন করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, শাজাহানপুরের শান্তিবাগের একটি বাড়ির দোতলায় মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন রুম্পা। তিনি দুটি প্রাইভেট পড়াতেন শান্তিবাগে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটের দিকে তিনি প্রাইভেট পড়িয়ে বাসার সামনে যান। তাদের বাসায় তার এক চাচাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম সমুনও (১০) থাকে। বাসার সামনে থেকে রুম্পা তার মাকে ফোনে সুমনকে দিয়ে বাসার নিচে তার এক জোড়া স্যান্ডেল পাঠাতে বলেন। সুমন এক জোড়া স্যান্ডেল নিয়ে নিচে নামে। স্যান্ডেল পাল্টিয়ে রুম্পা তার ব্যবহূত মোবাইল ফোন, আংটি, হাতঘড়ি ও ব্যাগ সুমনের কাছে বাসায় পাঠিয়ে দেন। এরপর তিনি সেখান থেকে চলে যান। এর প্রায় চার ঘণ্টা পর তার লাশ পাওয়া যায় সিদ্ধেশ্বরীর রাস্তায়। এই চার ঘণ্টা তিনি কোথায় ছিলেন? কেন তিনি মোবাইল ফোন, আংটি, হাতঘড়ি ও ব্যাগ বাসায় রেখে আসেন- এসব প্রশ্নেরও উত্তর মিলছে না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, যেখানে লাশ পাওয়া গেছে তার পাশেই আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ভবনের ছাদের কিনারায় এক জোড়া স্যান্ডেলের ছাপ পাওয়া গেছে। সিআইডি আলামত সংগ্রহ করেছে। ওই ছাপের সঙ্গে ঘটনাস্থলে পাওয়া রুম্পার পায়ের স্যান্ডেলের নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে। মৃত্যুর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। খুব শিগগিরই মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি।

গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স ভবনের ১১ তলার ছাদে গিয়ে দেখা যায়, গেট না থাকায় সেখানে প্রবেশে কারও বাধা নেই। লিফটের ১০-এ নেমে সিঁড়ি বেয়ে একতলা উঠলেই ছাদ। কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে খানিকটা অংশে। বিশেষ ব্যবস্থায় সবজির মাচা আছে একাংশে। বিভিন্ন অংশে আগাছা। একাংশে কবুতরের বড় খামার। টিন ও লোহার রড দিয়ে খাঁচার মধ্যে অসংখ্য কবুতর রাখা আছে। খামারের পেছনের দিকে বেশ নিরিবিলি। ভবনের পাশের যে গলিতে রুম্পার লাশ পাওয়া যায়- সেটি এই ভবনের পেছনের অংশে। গলি বরাবর ভবনের ছাদের কিনারায় সামান্য ঢালু রয়েছে। ওই ঢালুতে স্যান্ডেলের ছাপ স্পষ্ট। এটি রুম্পার পায়ের ছাপ কি-না, তা নিশ্চিত হতে সিআইডি ফরেনসিক বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।

মার্কেট ভবনের ১১ তলার ওপরে এই ছাদের যা অবস্থা তাতে বাইরের লোকের সেখানে যাতায়াত করার কথা নয়। কীভাবে সেখানে গেলেন রুম্পা? একদিনে ওই ছাদ চেনাজানা হতে পারে না। তাহলে কি এই ছাদ আগে থেকেই রুম্পার চেনাজানা? ভবনের কোনো বাসিন্দা কি তার পরিচিত? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত সংশ্নিষ্টদের মধ্যে।

কবুতরের খামারটি ভবন মালিকের ছেলে ফেরদৌস আলীর। তিনি বলেন, খামারে সবসময় কেউ থাকেন না। তিনি নিজেই সেটি দেখাশোনা করেন। সন্ধ্যার পর ছাদে ওঠেন না। কখন কে যায় না যায়, সে খবরও রাখেন না। সাধারণত বাইরের লোকের ছাদটি চেনাজানার কথা নয়। ঘটনার দিন ওই ছাদে কেউ গিয়েছিলেন কি-না, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

আমাদের ময়মনসিংহ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গতকাল সকালে ময়মনসিংহ সদরের বিজয়নগর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে রুম্পার লাশ দাফন করা হয়েছে। রুম্পার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। মেয়ের শোকে মা নাহিদা আক্তার পারুল আর্তনাদ করছেন। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। দ্রুত তদন্ত করে রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ