আজকের শিরোনাম :

ভয়ে এসআই খায়রুলের নাম প্রকাশ করেননি সেই গৃহবধূ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:৪০

ভয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ এস আই খায়রুলর নাম প্রকাশ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। তিনি এখন এস আই খায়রুলসহ সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ও ফোরামের জেলা নেতারা ওই নারীর বাড়িতে যান। তারা ওই গৃহবধূর খোঁজ নেন এবং আইনগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

যশোরের শার্শার উপজেলার লক্ষ্মণপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগকারী ওই গৃহবধূ শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে তার বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি খায়রুলকে শুধু চিনি-ই নাই, ভালোভাবেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৮ ও ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছেন তিনি। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীরে ধরে নিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন খায়রুলকে আমার সামনে নিয়ে আসছিল এবং জিজ্ঞেস করছিল- ইনি ছিলেন কিনা। তখন আমি বিবেচনা করে দেখলাম, সে তো পুলিশের লোক। যখন সে বারেবারে আমার স্বামীরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে আমি পারবো না। তাছাড়া খায়রুল আমার দিকে এমনভাবে তাকাইছে, তার চোখের ভাষায় আমি বুঝতি পারছি।’
 
ধর্ষণের সময় এস আই খায়রুল উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিপোর্টে তো প্রমাণ আসবে। আর আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা সেসব বলবে। কারণ, তারা আরও ভালো জানে।’

এস আই খায়রুলসহ আরও যে তিন আসামি রয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এর আগে পুলিশ দাবি করেছিল, এস আই খায়রুল আলমকে ওই গৃহবধূর সামনে উপস্থিত করা হলে তিনি তাকে চিনতে পারেননি। সেজন্য তার নাম বাদ দিয়ে মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমান বলেন, ‘ওই গৃহবধূ সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনেই এস আই খায়রুল সম্পর্কে তার বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাকে কোনও ভয়ভীতি বা চাপ দেওয়া হয়নি।’

তবে আজ কেন ভয়ের কথা বলছেন এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘হয়তো কেউ তাকে দিয়ে এখন এসব বলাচ্ছে। হয়তো কেউ ব্যক্তিগত কোনও স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব করাচ্ছে।’

এদিকে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ও ফোরামের জেলা নেতারা ওই নারীর বাড়িতে যান। তারা ওই গৃহবধূর খোঁজ-খবর নেন এবং আইনগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

পরে নিপুণ রায় বলেন, ‘সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারি আকার ধারণ করেছে। ৯ মাসের শিশু থেকে বৃদ্ধা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। এই মহামারি থেকে দেশকে মুক্ত করতেই নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্যাতিত গৃহবধূর মুখ থেকেই আপনারা সবকিছু শুনেছেন। এস আই খায়রুলসহ চারজনের নাম এসেছে। তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, হাসপাতালে গিয়েছেন, মামলা করেছেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে এসআইকে মামলায় এজাহারভুক্ত করা হয়নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় ক্ষমতার যে অপব্যবহার চলছে, তা এখানে বিদ্যমান।’

বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে এস আই খায়রুলকে এক নম্বর আসামি করে তাকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’

প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার লক্ষ্মণপুর এলাকায় ওই গৃহবধূ বাড়িতে গভীর রাতে যায় এস আই খায়রুল, সোর্স কামরুলসহ চারজন। তারা ওই গৃহবধূর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এস আই খায়রুল ও কামরুল তাকে ধর্ষণ করেন বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন। ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওই গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ওইদিন রাতেই শার্শা থানায় মামলা করেন গৃহবধূ। মামলায় এস আই খায়রুলের নাম রাখা হয়নি।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানিয়েছিলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে, সেখানে কার কার সিমেন (বীর্য) রয়েছে তা জানতে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ