ঢাকার ২ সিটির গাফিলতির কারণে ডেঙ্গুতে এত মানুষের মৃত্যু : হাইকোর্ট
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৩০
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দুই মেয়র ডেঙ্গু নিয়ে শুরুতে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। ডেঙ্গু নিয়ে দুই মেয়রের আচরণ দায়িত্বজ্ঞানহীন। এত মানুষ মারা গেল এসব দায় দুই মেয়র কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ডেঙ্গু নিয়ে দুই সিটি কপোরেশনের প্রতিবেদন পেশের ওপর শুনানিকালে এ মন্তব্য করেন। পরে আদালত এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানির জন্য অপর বেঞ্চে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যেখানে ডেঙ্গু নিয়ে আগেই রুল জারি করা হয়েছে।
আজ আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে সাঈদ আহমেদ রাজা ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন তৌফিক এনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানিতে দুই সিটি করপোরেশনের কারা জড়িত এবং গাফিলতির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদালত এর আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মোতাবেক দুই সিটি কপোরেশন প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে হাজির হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আদালতকে জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন ওষুধ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে গত ১১ আগস্ট থেকে নতুন ওষুধ ছিটানো শুরু হয়েছে। ২০ আগস্ট থেকে ভারত থেকে আনা নতুন ওষুধ ‘ডেল্টামেথরিন’ ছিটানো শুরু করে। এতে গত কয়েক দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কমে এসেছে। আদালতের নির্দেশে প্রতিটি ওয়ার্ডে কতজন কাজ করছে, তার তালিকা দিয়েছি। দক্ষিণ সিটিতে মশক নিধনে ৪৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে।
আইনজীবী আরো বলেন, দক্ষিণ সিটির পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও আদালতে প্রতিবেদন পেশ করেছে।
এ সময় আদালত বলেন, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আদেশ দেওয়ার পরও সিটি করপোরেশন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। প্রতি বছর জনগণের করের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। মশা নিয়ন্ত্রণে এর আগে প্লেন থেকে ওষুধ ছিটানো হলেও এখন সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
‘সরকার দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বৃদ্ধি করেছে। সেই বাজেটের টাকা কোথায় যায়? ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করতে আর দেরি নেই। তারপরও দুই সিটির মেয়র কীভাবে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, এটা বিস্ময়কর!’
আদালত বলেন, ‘এর আগে এ মামলার শুনানিতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলেছিলাম যে সামনে বর্ষা মৌসুম। মশা নিধনে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করুন, যাতে এটা মহামারির আকার ধারণ না করতে পারে। কিন্তু এখন প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে দেখছি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে কিন্তু সেটার যথাযথ বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার? অবশ্যই সিটি করপোরেশনের।’
হাইকোর্ট বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দুই মেয়র ডেঙ্গু নিয়ে শুরুতে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। ডেঙ্গু নিয়ে দুই মেয়রের আচরণ দায়িত্বজ্ঞানহীন। এত মানুষ মারা গেল! এসব দায় কোনোভাবে দুই মেয়র এড়াতে পারেন না।
পরে আদালত এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানির জন্য অপর বেঞ্চে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যেখানে ডেঙ্গু নিয়ে আগেই রুল জারি করা হয়েছে।
এর আগে মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
আদেশের পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটা অকার্যকর। মিডিয়ায় রিপোর্ট এসেছে এই যে ওষুধগুলো দেওয়া হচ্ছে, সে ওষুধগুলোর মধ্যে কার্যকারিতা নেই। তারপরও ওই ওষুধগুলো তারা দিচ্ছে। এখানে ২০ থেকে ২২ কোটি টাকার অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে। এগুলো চলেই যাচ্ছে। এগুলো দুর্নীতির মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পরে আদালত বলেছেন, যেহেতু ডেঙ্গু নিয়ে হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ রুল জারি করেছেন। ওই বেঞ্চে এ আবেদনের ওপরও শুনানির আবেদন করেন।
এর আগে গত ২ জুলাই এ সংক্রান্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মশা নিধনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট আকারে অবহিত করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এরপর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আজ বুধবার দুটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
গত এপ্রিলে বায়ু দূষণ রোধে সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে হাইকোর্টে রিট করেন মনজিল মোরসেদ। ওই রিট আবেদনের রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় আদালতে সম্পূরক আবেদন দেন তিনি। ওই আবেদনে বলা হয়, ঢাকা মহানগরে মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিত, তাহলে মশার উপদ্রব কমানো সম্ভব হতো।
এবিএন/মমিন/জসিম