আজকের শিরোনাম :

কারাবন্দির মৃত্যুর জবাব চায় মানবাধিকার কমিশন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০১৯, ২০:৩৪

বাংলাদেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলছে, সে দেশের কারাগারগুলোতে সম্প্রতি দু'জন বন্দির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তারা সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে।

এ সপ্তাহেই চট্টগ্রামের কারাগারে একজন আসামীর মৃত্যুর পর অভিযোগ উঠেছে যে আরেকজন বন্দি মাথায় ইঁট দিয়ে আঘাত করে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ দাগী আসামী হলেও কারাগারের মতো সুরক্ষিত জায়গায় হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক।

কয়েকদিন আগে পঞ্চগড় কারাগারেও একজন আইনজীবীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, দু'টি ঘটনাই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পঞ্চগড়ের জেলা কারাগারে পলাশ কুমার রায় নামের একজন আইনজীবীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এপ্রিল মাসের শেষে। ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।

হাইকোর্টের নির্দেশে এখন ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে।

অল্প সময়ের ব্যবধানে গত বুধবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সেখানকার কেন্দ্রীয় কারাগারে খুনের মামলার আসামী অমিত মুহুরীর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে বলেছে, চট্টগ্রাম কারাগারের একটি সেলের ভিতরে একটি কক্ষে আরেকজন বন্দির ইটের টুকরোর আঘাতে অমিত মুহুরী আহত হন।

কারাগারের মতো একটি সুরক্ষিত এলাকায় এ ধরণের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নজরুল ইসলাম।

তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চগড় এবং চট্টগ্রামের দু'টি ঘটনার ব্যাপারে কমিশন সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে।

"এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, কারাগার যেখানে নিরাপদ একটা অবস্থান হওয়ার কথা, সেখানে এমনটা হওয়া বেশ উদ্বেগের। মানে এরকম হওয়ার কথা নয়," তিনি বলেন, "যেহেতু এটা ঘটেছে, ফলে কোথাও ত্রুটি আছে। সেটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।"

"আমরা এটা বিবেচনায় নেবো যে, এরকম একটা গুরুতর বিষয় কিভাবে ঘটেছে, কিভাবে ঘটলো, কেন ঘটলো - এসব প্রশ্নে সরকারের কাছে একটা প্রতিবেদন চাওয়ার বিষয় আছে। আমরা সরকারের কাছে জানতে চাইবো।"

চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়, কারাগারের সেলের কক্ষে যে বন্দি গত বুধবার রাতে ইটের টুকরো দিয়ে অমিত মুহুরীর মাথায় আঘাত করেন, সেই বন্দিকে ঐদিনই বিকেলে ঐ কক্ষে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

সেলের কক্ষে একজন বন্দি ইটের টুকরো কোথায় পেলেন, কক্ষটিতে বিকেলে স্থানান্তর হয়ে এসে ঐ বন্দি কেন আরেকজন বন্দিকে আঘাত করবেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কিনা, এসব অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজছে স্থানীয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। এই কমিটির একজন সদস্য এমনটা জানিয়েছেন।

মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কারাগারের বেসরকারি পরিদর্শক দলের সদস্য ছিলেন এলিনা খান। তিনি বলছিলেন, কারাগারে এমন ঘটনার নজির তেমন নেই। ফলে এখন দ্রুত কারণ চিহ্নিত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

"আমি যেটা বলতে চাচ্ছি যে এ ধরণের ঘটনা অ্যালার্মিং। কারণ ইদানিং আমরা মারাত্মক অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। কারাগারে যে সব বন্দি আছে, তাদের দ্বারা কারারক্ষীরা অনেক সময় বায়াস হয়ে যাচ্ছে কিনা, বাইরে থেকে কেউ কারারক্ষীর ওপর প্রভাব খাটিয়ে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা, এসব বিষয়ও তদন্ত করে দেখা উচিত।"

কারা কর্তৃপক্ষ থেকে ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কোন বক্তব্য বা ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, দু'টি ঘটনারই তদন্ত হচ্ছে। কারও গাফিলতি থাকলে বা কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটনা ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

"একটা পঞ্চগড়ে ঘটে গেছে, সেটার জন্য তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আর এই চট্টগ্রামে ঘটনা যেটি ঘটেছে, দুই জনই অপরাধী ছিলেন। হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের মামলা ছিল নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আর যিনি আঘাত করেছেন তার নামেও এরকম মামলা আছে। এই ঘটনাগুলো কেন ঘটেছে, এর কারণ না জেনে বা তদন্তের আগে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না।"

"তবে এটুকু বলতে পারবো, যদি কারও গাফিলতি থাকে, কেউ এর সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে জড়িত থাকে বা কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে যদি এটা ঘটিয়ে থাকে, তাহলে তার শাস্তি আইন অনুযায়ী হবে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়।"

মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, তদন্তে ত্রুটি বা সমস্যা চিহ্নিত হলে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিবিসি


এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ