আজকের শিরোনাম :

সোনাগাজীর ওসি প্রত্যাহার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৪৯

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রীকে আগুন দিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)- কে প্রত্যাহার করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

এই ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষর শ্যালিকার মেয়েকে গত মঙ্গলবার রাতে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এই ঘটনায় মোট নয়জনকে গ্রেফতার করা হলো।

আজ বুধবার দুপুরে সোনাগাজী থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

তাঁর বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে রক্ষা চেষ্টার অভিযোগ এসেছিলো মাদ্রাসা ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে।

যদিও বিবিসি বাংলাকে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, অপরাধীদের ধরতে তিনি তার "সর্বোচ্চ চেষ্টা" করেছেন এবং "দায়িত্বে কোনো অবহেলাও" করেননি।

"এ ঘটনায় মোট নয় জনকে আটক করেছি আমরা। এর মধ্যে তিনজন এজাহারভুক্ত আসামী। আমরা কোনো অবহেলা করিনি।"

তিনি বলেন, "২৭ তারিখে ছাত্রীকে হেনস্থার খবর শুনে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে অধ্যক্ষকে আটক করেছিলাম। রক্ষা করতে চাইলে তাকে ধরলাম কেনো? মামলা দিলাম কেনো?"

তিনি জানান, ওই [গায়ে আগুন দেওয়ার] ঘটনায় আক্রান্ত ছাত্রীর ভাই দুটি এজাহার দায়ের করেছেন। এর মধ্যে দ্বিতীয়টিতে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে আক্রান্ত ছাত্রী 'শম্পা বা চম্পা' নামে একজনের কথা বলেছেন।

"শম্পা নামে কাউকে আমরা খুঁজে পাইনি। তবে অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপিকে আটক করা হয়েছে। সেও একই ক্লাসের ছাত্রী ও ওইদিন সেও পরীক্ষার্থী ছিলো। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ও করছি।"

অধ্যক্ষ রিমান্ডে

মাদ্রাসা ছাত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া মাদ্রাসার প্রভাষককেও পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।

সোনাগাজী থানা জানিয়েছে, তারা অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়েকেও রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করছে।

'ক্ষুব্ধ' স্থানীয়রা

সোনাগাজীর যে মাদ্রাসায় ছাত্রীকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে সেটি এলাকার প্রাচীন মাদ্রাসাগুলোর একটি এবং সরকারি মাদ্রাসা হওয়াতে শিক্ষার্থী সংখ্যাও অনেক বেশি।

মাদ্রাসার দু'শো গজের মধ্যেই বসবাস করেন ব্যবসায়ী আরিফ ভুঞা।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "পুরো এলাকা থমথমে হয়ে আছে। এমন ঘটনা তো আগে কখনো দেখিনি আমরা। এতো বড় ঘটনা কারা ঘটালো-এটাই এখন বড় প্রশ্ন।"

স্থানীয় সাংবাদিক আবু হোসেন রিপন বলছেন, হঠাৎ করে মাদ্রাসার মধ্যে এ ঘটনায় মানুষ খুবই বিস্মিত হয়েছে।

"নানা দলাদলি, রাজনীতি আছে। কিন্তু তাই বলে একজনকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে- এটা কারও চিন্তাতেও আসেনা। সে কারণেই মানুষ বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে।"

স্থানীয় একজন কাউন্সিল মর্জিনা আক্তার বলছেন, সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে জানতে যে কারা আগুনটা লাগালো এবং কার নির্দেশে এটা করলো।

"এ তো ভয়াবহ ঘটনা। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত যে কোনো মূল্যে।"

আলোচনায় মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের বিরোধ

স্থানীয়রা বলছেন, মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিনটি গ্রুপ।

মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট এলাকার একজন অধিবাসী বলছেন, "আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির বিভিন্ন অংশের নেতারা মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।"

এরই একটি অংশ অধ্যক্ষকে আটকের পর তার মুক্তি চেয়ে এলাকায় মিছিল সমাবেশ করিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে কয়েক মাস আগে মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদে নেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, "ম্যানেজিং কমিটিতে ১১ জন আছেন। আমি মাত্র ছয় মাস আছি। কিন্তু তার আগে ২০ বছর এই অধ্যক্ষ এখানে আছে।"

কারা মিছিল করিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি চাইনা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হোক। আমি নিজে অধ্যক্ষকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। প্রশাসন দেখছে, নিশ্চয়ই জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।"

'অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিলো'

সোনাগাজীর সাবেক কাউন্সিলর ২০১৫ সালে মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়েছিলেন অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ পত্রেও শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির কথা বলা হয়েছিলো।

কাউন্সিলর মর্জিনা আক্তার বলছেন, তারা এ ধরণের অভিযোগ পেয়েছেন অধ্যক্ষের বাড়ির পাশের একটি মাদ্রাসা থেকেও।

এর আগে গতকাল [মঙ্গলবার] ফেনীর আদালত আরও চারজনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছিলো।

আক্রান্ত ছাত্রী আগেও 'আক্রান্ত হয়েছিলেন'

এবারে আগুনে আক্রান্ত ছাত্রী আগেও একবার হামলার শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার শরীরে চুন ছুড়ে দেওয়া হয়েছিলো। তখন পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেছিলো।

যদিও পরে আর ওই ঘটনায় মামলা হয়নি ছাত্রীর পরিবারের অনাগ্রহের কারণেই। এবারে আগুনের ঘটনার পর আগের ঘটনার সন্দেহভাজন ব্যক্তিকেও আসামী করা হয়েছে।

মাদ্রাসা ছাত্রীর সর্বশেষ অবস্থা?

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইন্সটিটিউটে লাইফ সাপোর্টেই আছেন ওই মাদ্রাসা ছাত্রী। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে সোমবার তার একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এছাড়া আগামী রোববার সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসকদের একটি দল ঢাকায় আসবেন আগের একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে। তখন তারা ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর চিকিৎসাও পর্যবেক্ষণ করবেন।

এর আগে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের পর ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন যে মাদ্রাসা ছাত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়াতে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া যাচ্ছেনা। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরাই এ অবস্থায় বিমান ভ্রমণ না করাতে বলেছেন, বলেন তিনি।


এবিএন/মমিন/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ