আজকের শিরোনাম :

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু: ৪ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চার্জশিট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০১৮, ১৮:৩৩

ঢাকা, ৩০ মে, এবিনিউজ : রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল  কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শারমিন সরকার নামের এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।

আসামিরা হলেন, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফিরোজ আহম্মেদ খান, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবুল হোসেন ও ডা. এম এ করিম ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফায়জুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে ফ্রোবেল। আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান গত ১১ এপ্রিল আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করেন। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী চার্জশিটটি আমলে গ্রহণ করেন। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় নথিটি ঢাকা সিএমএম বরাবর প্রেরণের আদেশ দেন আদালত। সিএমএম নথিটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দিবেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, শারমিন সরকার (১৮) গলায় সিস্ট নিয়ে ২০১৫ সালের ৩০ মে হাসপাতালে গেলে ডা. ফিরোজ আহমেদ রোগটি খুব খারাপ জানিয়ে দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দেন। তিনি নিজেই অপারেশন করবেন বলে শারমিনের স্বজনদের জানান। ডা. ফিরোজের পরামর্শে ৩ জুন শারমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তিনি অপারেশন করেননি। ৪ জুন ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবুল হোসেনকে ওই অপারেশনের দায়িত্ব দেন তিনি। সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের ডা. ফায়জুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে ফ্রোবেল রোগীকে অজ্ঞান করেন এবং ডা. আবুল হোসেন অপারেশন শুরু করেন। অপারেশনের মাঝপথে ডা. ফ্রোবেল অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান ডা. এম এ করিমের মৌখিক সম্মতি নিয়ে ওটি বয় জামালের হাতে অ্যানেসথেশিয়ার দায়িত্ব দিয়ে মিটিংয়ে চলে যান।

এরপর তিনি আর অপারেশন থিয়েটারে ফেরেননি। কোনো অ্যানেসথেশিস্ট ছাড়াই ওটি বয় জামালের সহায়তা নিয়ে ডা. আবুল হোসেন অপারেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। অপারেশনের পর রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে ওটি বয় জামাল ডা. এম এ করিমকে ফোন করেন। ডা. করিম তার পরও ওটিতে না এসে ফোনে জামালকে একটি ইনজেকশন পুশ করতে বলেন। জামাল রোগীর শিরায় ইনজেকশন পুশ করেন। অপারেশন শেষ হওয়ার পর ডা. করিম ওটিতে ফিরে রোগীর লাইফসাপোর্ট খুলে নিয়ে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নার্স কাজল ও আয়া শেবুতুনেচ্ছার কাছে রোগীকে হস্তান্তর করেন। ওই সময় পোস্ট অপারেটিভ কক্ষেও কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।

মৃত শারমিনের মা সুফিয়া সরকার অভিযোগ করেন, মাইনর অপারেশনে দুই ঘণ্টা লাগার কারণে তার সন্দেহ হয়। তিনি জোর করে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পান, শারমিন যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এ সময় চিকিৎসক ও নার্সরা তাকে বের করে দেন। দুপুর ২টার দিকে শারমিনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ১৩ জুন রাত ১০টার দিকে শারমিনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় শারমিনের মা মোছা. সুফিয়া সরকার ২ আগস্ট উত্তরা থানায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালে ডিবি পুলিশ ও ২০১৭ সালে পিবিআই অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। দুই দফায় বাদী চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দাখিল করেন। সর্বশেষ সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে চার চিকিৎসককে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিদের ভুল চিকিৎসার কারণে শারমিনের মৃত্যু হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ