আজকের শিরোনাম :

নদ-নদী উদ্ধারে কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত: হাইকোর্ট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫৫

তুরাগ নদ রক্ষার রায় ঘোষণাকালে হাইকোর্ট বলেছেন, দেশে শত শত নদ-নদী রয়েছে। এসব নদী দখলকে কেন্দ্র করে পৃথক পৃথক মামলা হয়, পৃথক পৃথক আদেশ হয়। দখলদাররা ফের গিয়ে দখল করে, এমনটি চলতে দেয়া যায় না। আমরা সবগুলো একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসতে চাই। নদ-নদী নিয়ে এসব কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত।

আদালত রায়ে বলেন, আমাদের দেশের নদীগুলো জীবন্ত সত্ত্বা। মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। ঢাকার আশপাশে বহমান চার নদী রক্ষায় এরই মধ্যে আদালত নানা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু সেসব রায়ের নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়নে বিবাদীরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তা নেয়া হলে তুরাগ নদ রক্ষায় হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করার প্রয়োজন হতো না। শুধু যে তুরাগ নদ আক্রান্ত তা নয়; পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদী অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত।

আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন রায় ঘোষণা শুরু হওয়ার পর আবার আগামী রোববার রায়ের বাকি অংশ ঘোষণার জন্য বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ দিন ধার্য করেন।
আজ রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, এ নদীর বিষয়ে রিটে অনেক নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে আগামী রোববার পুনরায় রায় ঘোষণা করব। 

আদালত আরো বলেন, এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের একটি রায় ও গাইডলাইনের আলোকে নদী কমিশন গঠিত হয়েছে। আইনও তৈরি হয়েছে। আমরা সেটি দেখে আরো কিছু গাইডলাইন দিয়ে রায় দেব।
এ সময় আদালত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, সাংবাদিকদের তথ্যবহুল প্রতিবেদনের আলোকেই আমরা সমাজের অনিয়মের কথা জানতে পারি। সাংবাদিকরা বংশীবাদকের মতো। নদী দখলসহ সব ধরনের অনিয়মের কথা সাংবাদিকরাই তুলে ধরেন। আমাদের দেশের সাংবাদিকতার অনেক উন্নয়ন দরকার।

আদালত যুক্তরাষ্ট্রের রেফারেন্স দিয়ে বলেন, দুই সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আলোকে সে দেশের সরকার পতন হয়েছিল। আমাদের দেশেও সেই ধরনের এফেক্টিভ জার্নালিজম হওয়া দরকার। এতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। 
বুধবার দেয়া রায়ে তুরাগ নদকে ‘লিগ্যাল পারসন’ বলে ঘোষণা করেন আদালত, যা দেশের সব নদ-নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। 

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, অবৈধ দখলদারদের দ্বারা প্রতিনিয়তই দেশের কমবেশি নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সংকুচিত হয়ে পড়ছে নদী। নাব্যতা ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সংকটে পড়তে বাধ্য। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদকে লিগ্যাল/জুরিসটিক পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হলো।

রায়ের বিষয়ে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত রায়ে আমাদের দেশের নদীগুলোকে জীবন্ত সত্ত্বা, জুরিসটিক পারসন বা লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মতো দেশের নদ-নদীর কিছু আইনি অধিকার স্বীকৃত হবে।
এর আগে আইনজীবী আরো বলেন, আমাদের দেশের নদ-নদীগুলো যাতে জীবন্ত ও প্রবহমান থাকতে পারে, তা নিশ্চিতে এ রায়ের মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে যাচ্ছে। যাতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন নদী দখল কিংবা দূষণের সাহস না করে।

এর আগে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা এক রিটে তুরাগ নদের অবৈধ দখলদারদের নাম ও স্থাপনার তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছিল বিচার বিভাগীয় একটি তদন্ত কমিটি। ওই তদন্ত কমিটির দেয়া তালিকায় আসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পরে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হন। পরে উভয় পক্ষের দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বুধবার রায় ঘোষণা শুরু করেন।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ