আজকের শিরোনাম :

ধর্ষণ মামলার নমুনা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ১৯:৫৮

ঢাকা, ২৭ মে, এবিনিউজ : ধর্ষণ মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক এবং মামলা দায়েরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাতে হবে। এ সংক্রান্ত এক মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

আজ রবিবার রায় প্রকাশের বিষয়টি রিটের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শারমিন আক্তার শিউলী রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।

সেই রায়ে রায়ে ধর্ষণ মামলা দায়ের ও তদন্ত বিষয়ে হাইকোর্ট ১৮ দফা নির্দেশনা সম্বলিত একটি নীতিমালা করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন না হওয়া পর্যন্ত এই নীতিমালা অনুসরণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে-ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন বা এ সংক্রান্ত ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ রেকর্ড করবেন। এক্ষেত্রে ওই থানার আওতার মধ্যে ঘটনা সংঘটিত হোক বা না হোক সেটা মূখ্য নয়। একইসঙ্গে অবিলম্বে এমন একটি সার্ভার তৈরি করতে হবে।   যাতে এ ধরনের অভিযোগ সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে করা যায়।

সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো পুলিশ অফিসার যদি অভিযোগ গ্রহণে বিলম্ব করে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুনির্দিষ্ট বিধান থাকতে হবে। প্রত্যেক থানায় কনস্টেবলের নিচে নয় এমন একজন নারী পুলিশ রাখতে হবে। অভিযোগ পাওয়ার পর ডিউটি অফিসার একজন নারী কর্মকর্তার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাধ্যমে ও ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী, সমাজকর্মী বা আইনজীবীর উপস্থিতিতে অভিযোগ রেকর্ড করবেন।

সবক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর সমস্ত তথ্য সংরক্ষণে গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। প্রত্যেক থানা নারী সমাজকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করবে।

অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রের দেওয়া অধিকার সম্পর্কে ভুক্তভোগীকে সচেতন করতে হবে এবং সে চাইলে যে কোনো তথ্য প্রদান করতে হবে।

অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ডিউটি অফিসার ‘ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার’কে অবহিত করতে হবে।

ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার কোনো নারী বা মেয়ে করণীয় সম্পর্কে বুঝতে অক্ষম হলে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে।

লিখিত তথ্য গ্রহণের পর কোনো প্রকার বিলম্ব না করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ভুক্তভোগীকে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করবেন। ভুক্তভোগীর দ্রুত সেরে উঠতে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সুবিধা থাকতে হবে।

রায়ে বলা হয়েছে, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নমূলক সকল ঘটনায় বাধ্যতামূলকভাবে ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে। অভিযোগ প্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিএনএসহ অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে তা ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবে পাঠাতে হবে।

যে কোনো রিপোর্ট সংগ্রহ বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থার যে কোনো ব্যর্থ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।

নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও ওয়েব সংবাদমাধ্যমে প্রচারণা চালাতে হবে।  ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পরামর্শ দানের জন্য প্রত্যেক মহানগরে একটি করে সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

এসব নির্দেশনা দিয়ে আদালত এ বিষয়ে পূর্বে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই নীতিমালা মেনে চলতে হবে।

আদালতের রায়ের সুপারিশ, পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনার আলোকে নীতিমালা তৈরি করতে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ মহাপরিদর্শককে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

২০১৫ সালের ২১ মে রাতে গণধর্ষণের শিকার হন এক গারো তরুণী।

এ ঘটনায় পৃথক পাঁচটি মানবাধিকার সংগঠন নারীপক্ষ, মহিলা পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্লাস্ট রিট আবেদন করেন। রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ একই বছরের ২৫ মে রুল জারি করেন।

রুলে ধর্ষণের ঘটনায় এজাহার, সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো এবং পরীক্ষা করতে বিলম্ব কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, ধর্ষিতাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবহেলার জন্য কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না-তা জানতে চাওয়া হয়।

রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন আদালত।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ