জেনেভা ক্যাম্পে মাদকবিরোধী অভিযানে র‍্যাব: আটক শতাধিক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৮, ১৩:০১ | আপডেট : ২৬ মে ২০১৮, ২৩:৫২

ঢাকা, ২৬ মে, এবিনিউজ : রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা বিহারী ক্যাম্পে আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অভিযান চলে। এসময় বিহারি ক্যাম্প এবং আশেপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের শতাধিক নারী-পুরুষ ও তরুণকে আটক করা হয়েছে। অভিযানের পর জেনেভা ক্যাম্প প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে।

সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শনিবার বিহারি ক্যাম্পে এ অভিযান চালালো র‍্যাব। ক্যাম্পে প্রবেশের প্রধান ৬টি পথ রয়েছে। এছাড়া আরও ছোট ছোট অনেক পথ আছে। এগুলো সব বন্ধ করে র‍্যাবের ৩৬টি টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে অভিযান চালানো হয়। আটককৃতদের র‌্যাব-২ এর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

অভিযান শেষে র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান বলেন,  ‘যাচাই-বাছাই করার পর যাদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের আটক রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা আজকের নয়, অনেক পুরনো। ঘনবসতির কারণে এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা কঠিন। আমরা সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একাধিক টিম নিয়ে অভিযান চালিয়েছে।’

কি পরিমাণ মাদক আটক করা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মুফতি মাহমুদ বলেন, আমাদের বেশ কয়েকটি টিম যৌথভাবে কাজ করছে। তাই কি পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়েছে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। অভিযান শেষে পরিমাণ জানা যাবে।

মুফতি মাহমুদ আরো জানান, এই এলাকায় প্রচুর মাদকসেবী রয়েছে। আমাদের কাছে কিছু তালিকা রয়েছে যারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। পাশাপাশি জনসচেতনা বৃদ্ধিতে আমরা লিফলেটও বিতরণ করছি। অভিযানে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। তাদেরকে যাচাইবাছাই করা হবে। যাদের সনাক্ত করা হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে কখনও ক্যাম্পে এমন অভিযান চালানো হয়নি। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো না। এজন্য সর্বোচ্চ প্রিপারেশন ছিল আজকের অভিযানে। তবে কোথাও কোনও বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।’

তবে আটককৃতদের অনেকের পরিবার ও স্বজনরা জানেন না কেন তাদের আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আটককৃত কয়েকজনের স্বজনের সঙ্গে। আটককৃতদের একজন ধানমন্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুল হাওলাদার নয়ন (২৩)। তার ভাবি সুলতানা টগর বলেন, ‘ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিল নয়ন। সেখান থেকে সকাল ১১টার দিকে তাকে ধরে নিয়ে গেছে।’

সেলুন কর্মী রাজার (২৮) মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘বিহারি ক্যাম্পে বাসা থেকে বেলা ১১টার দিকে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।’

কারচুপির ব্যবসায়ী পারভেজের (৩৫) স্ত্রী শবনম বলেন, ‘বিহারি ক্যাম্পের বাসা থেকে সকালে বাইরে বের হয়েছিল আমার স্বামী। এসময় তাকে ধরে নিয়ে গেছে।’

বাসা থেকে র‍্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে আরেক সেলুন কর্মী নওশাদ (২০) কে।

সেলুন কর্মী আলী হোসেনের মা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘সকালে ঘুমে ছিল। র‍্যাব অভিযান চালিয়ে আটক করে নিয়ে গেছে।’

র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘ভোররাত থেকে বিহারি ক্যাম্পে ৩৬টি টিম কাজ করেছে। বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ, তরুণকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  বিকাল নাগাদ যাচাই-বাছাই শেষ হলে বলতে পারবো কতজনকে আটক করা হয়েছে।’ 

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় মাদকবিরোধী অভিযান ঘোষণা করেন। তবে এর আগ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ী বন্ধুকযুদ্ধে মারা গেছেন।

মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেমন জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, তেমনই মাদকের বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গোপনে একটি তালিকা তৈরি করেছি। সেই অনুযায়ী দেশে অভিযান চলছে। এই তালিকা অনুযায়ী মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না।

এবিএন/জনি/জসিম/এসই

এই বিভাগের আরো সংবাদ