আজকের শিরোনাম :

ছয় জেলায় বন্দুকযুদ্ধে ৭ ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০১৮, ১০:৪৯ | আপডেট : ২৩ মে ২০১৮, ১২:৪৫

ঢাকা, ২৩ মে, এবিনিউজ : ছয় জেলায় পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৭ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত এসব বন্দুকযুদ্ধে কুষ্টিয়ায় ২ জন, কুমিল্লা, ফেনী, রংপুর, জামালপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফটিক ওরফে গাফফার (৩৮) ও লিটন হোসেন (৪০) নামের দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকা ও ভেড়ামারা উপজেলার হাওখালি মাঠের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। 

ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক জানান, মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে একদল মাদক ব্যবসায়ী লাহিনী পাড়ার গড়াই নদীর পাড়সংলগ্ন ব্রিজের নিচে অবস্থান করছে খবর পেয়ে কুমারখালী থানার পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধের এক পর্যায়ে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় অন্য সব মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরে পুলিশ জানতে পারে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী ফটিক ওরফে গাফফার। তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় পুলিশের ৫ সদস্য আহত হয়। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 
ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১ রাউন্ড গুলি ও ৭শ পিস ইয়াবা ও ৫০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। 

ভেড়ামারা মডেল থানার ওসি আমিুনুর রহমান জানান, ভেড়ামারা হাওয়াখালী ইট ভাটার কাছে একদল মাদক ব্যবসায়ী মাদক বেচাকেনা করছে এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে পুলিশের টহল দল সেখানে অভিযান চালায়। তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় সবাই পালিয়ে গেলেও মাদক ব্যবসায়ী লিটন শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। 

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, ৩ রাউন্ড গুলি, ৫০০ পিস ইয়াবা ও ২শ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে। 

নিহত লিটন শেখ উপজেলার নওদাপাড়া এলাকার মৃত গোলবার শেখের ছেলে। এ সময় পুলিশের ৩ সদস্য আহত হয়। সে ভেড়ামারার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।

নিহত দুজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নুরুল ইসলাম ইছা নামের এক তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। 

মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কার চর ব্রিজসংলগ্ন গোমতী বাঁধ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ইছা একই উপজেলার গাজীপুর গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৭টি মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, পুলিশের বিশেষ অভিযানে মঙ্গলবার বিকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্য অনুসারে সহযোগীদের আটক এবং মাদক উদ্ধারে পুলিশ অভিযান শুরু করে। তাকে নিয়ে রাতে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমনের নেতৃত্বে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের একটি টিম শহরতলীর টিক্কারচর ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নুরুল ইসলাম ইছার সহযোগী অপর মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় আত্মরক্ষায় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী ইছা গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধারের পর কুমেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

ফেনী : ফেনীর শহরের দাদফুল এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফারুক হোসেন (৩৯) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। 

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। র‌্যাব-৭ এর ফেনী ক্যাম্প ইনচার্জ স্কাডন লিডার ফাহিম আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে দাদফুল এলাকায় একটি মাইক্রোবাস তল্লাশি করা হয়। ওই সময় র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়। ফেনী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক। 

র‌্যাব জানায়, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, ৫ রাউন্ড কার্তুজ, ৫ রাউন্ড গুলির খোসা ও ২২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। 

রংপুর : রংপুর নগরীর হাজিরহাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

বুধবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোক্তারুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মোক্তারুল আলম জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলভার ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত না হলেও ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার হওয়ায় সে বড় মাদক ব্যবসায়ী বলে ধারণা করছি। ওই সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হন।

নিহত ব্যক্তিকে ভোরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে পুলিশ।পরে তাকে হাসপাতালের ডেথ হাউজে (হিমঘর) রাখা হয়।

জামালপুর : জামালপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। 

বুধবার ভোরে জামালপুর শহরতলীর ছনকান্দা মাদ্রাসা বালুঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জামালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, আজ বুধবার ভোরে জামালপুর শহরতলীর ছনকান্দা মাদ্রাসা বালুঘাট এলাকায় একদল মাদক ব্যবসায়ী মাদক কেনাবেচা করছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে এক মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। এ সময় অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাসিমুল ইসলামসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবা, ১০০ গ্রাম হেরোইন, একটি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। নিহত মাদক ব্যবসায়ীর পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।

ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ের ভাতারমাড়ী ফার্ম এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আফতাফুল ইসলাম (৩৮) নামের একজন নিহত হয়েছেন। 

পুলিশ দাবি করেছে, তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। 

বুধবার ভোর ৪টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী ও পীরগঞ্জ থানা পুলিশ যৌথভাবে এই অভিযান চালায়। এ সময় বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি সাজেদুর রহমানসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

আফতাফুল ইসলাম (৩৮) জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের পাড়ুয়া গ্রামের ভেলসা মোহাম্মদের ছেলে।

পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ জানান, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে আফতাবুল ইসলামকে তার বাড়ি থেকে ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর আফতাবুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার সহযোগীদের ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ। তাকে নিয়ে পীরগঞ্জের দিকে যাওয়ার সময় ভাতারমাড়ী ফার্ম সংলগ্ন বনবাড়ি এলাকায় গেলে একদল দুর্বৃত্ত পুলিশের ওপর গুলি চালায়। তারা আফতাবুলকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান ও একই থানার সাব ইন্সপেক্টর খায়রুজ্জামান তাদের গুলিতে আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে আফতাবুল ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত পুলিশ কর্মকর্তাদের ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আফতাফুল একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় মোট ১৯টি মামলা আছে, যার মধ্যে ১২টিই মাদকবিরোধী আইনে দায়ের করা।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ