আজকের শিরোনাম :

কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান মাদকাসক্ত কিনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৮, ১৯:১৮

ঢাকা, ২২ মে, এবিনিউজ : বাংলাদেশের গবেষকরা বলছেন, দেশে এখন প্রায় ৭০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ তরুণ। এদের মধ্যে ১০ বছর থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধও রয়েছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহের অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০জন নিহত হয়েছে আর আটক হয়েছে কয়েকশো ব্যক্তি।

কিন্তু পরিবারের কোন সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে উঠলে অন্যরা সেটি কীভাবে বুঝবেন? বাংলাদেশে এ ধরণের সমস্যায় চিকিৎসার কী ব্যবস্থা রয়েছে?

কী কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হওয়া উচিত?
বাংলাদেশের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র 'মুক্তি'র প্রধান আলি আসকার কোরেশী বলছেন, ''কেউ মাদকাসক্ত হয়ে উঠলে একদম শুরুর দিকে বুঝা আসলে একটু শক্ত। তারপরেও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা দেখা গেলে সন্তানের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।''

''যদি দেখা যায় যে, সন্তানের আচার আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যে শান্তশিষ্ট ছেলেটা হঠাৎ করে অপরিচিতের মতো আচরণ করছে। ঘুমের প্যাটার্ন পাল্টে যাচ্ছে। আগে যে সকালে স্কুলে যেতো, এখন সে নানা অজুহাতে স্কুলে যেতে চাইছে না। বিভিন্ন অজুহাতে টাকা চাইছে যে, আজকে এটা কিনতে হবে, কাল অন্য কাজে টাকা লাগবে। তখন সতর্ক হতে হবে।''

আরো কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে মন-মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তন, ঘুম থেকে উঠে মেজাজ খারাপ করা, খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর না থাকা বা অতিরিক্ত ঘুমানো, রাতে জেগে দিনে ঘুমানো, এ ধরণের প্রবণতা দেখা গেলে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। পরিবারের কোন সদস্য ঘন ঘন অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে, প্রাইভেট বা স্কুলের খরচের নাম করে বারবার টাকা চাইলেও সতর্ক হতে হবে।

তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, এসব ক্ষেত্রে সন্তান কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মিশছে, আসলেই স্কুলে বা প্রাইভেটে যাচ্ছে কিনা, এসব অভিভাবকদের নজরদারি করতে হবে। স্কুলের বেতন থেকে শুরু করে প্রাইভেট টিউটরের বেতনও অভিভাবকদের নিজেদের দেয়া উচিত, কারণ অনেক সময় প্রাইভেট বা স্কুলের নাম করে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে তারা নেশা করে।

মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মিথ্যা বলা বেড়ে যাওয়া, দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া বা অনেক সময় চুরির অভ্যাস তৈরি হওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। বন্ধুদের মধ্যে যদি মাদকাসক্ত কেউ থাকে, তাহলেও তার মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

মাদকাসক্ত বোঝা গেলে কী করণীয়?
ডা. আলী আসকর কোরেশী বলছেন, চিৎকার চেঁচামেচি বা মারধর না করে এক্ষেত্রে একটাই পদক্ষেপ, তাকে সরাসরি একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। মানসিক চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যাদের মাদকাসক্তি নিরাময়ে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তাদের কাছে যেতে পারলে আরো ভালো।

এক্ষেত্রে ওই চিকিৎসক রোগীকে বিশ্লেষণ করে তার চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করেন।

মি. কোরেশী বলছেন, ছোটখাটো ক্ষেত্রে বা প্রথম দিকে হয়তো ওষুধ আর নিয়মিত ফলোআপে মাদকাসক্তি দূর করা যায়। কিন্তু এই আসক্তি পুরনো বা গভীর হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।

তিনি জানান, বাংলাদেশে মূলত দুই পদ্ধতিতে মাদকাসক্তির চিকিৎসা হয়। একটি হচ্ছে রিহ্যাব পদ্ধতি। সাধারণত হেরোইন, প্যাথেড্রিন, ফেন্সিডিল বা মরফিন আসক্তদের এ ধরণের পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে দুই থেকে তিন মাস রিহ্যাব সেন্টারে আটকে রাখা হয়। নিয়মিত নেশা করতে না পেরে একসময় রোগীর নেশার প্রবণতা কেটে যায়। পাশাপাশি মানসিক পরামর্শে তিনি আসক্তি কাটিয়ে ওঠেন।

'চিকিৎসায় ভালো হয়ে আবারো মাদকে জড়িয়ে পড়ে'
কিন্তু রোগীর আসক্তির সঙ্গে মানসিক রোগ, যেমন হতাশা, বিষণ্ণতা ইত্যাদি থাকলে ডিটক্স পদ্ধতির ক্লিনিক বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যায়। সেখানেও তাকে কয়েক মাস থাকতে হবে। তবে রিহ্যাবের সঙ্গে এখানে পার্থক্য হলো যে, এখানে রোগীদের আসক্তি কাটাতে নানা ওষুধের ব্যবহার করা হয়।

আলী আসকর কোরেশী বলছেন, ''পুরোপুরি মাদকাসক্তি কাটাতে অন্তত ছয় মাস একজন রোগীর ক্লিনিকে থাকা উচিত। ক্লিনিক থেকে ছাড়া পেলেও আরো অন্তত এক বছর চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা দরকার।''

তিনি বলছেন, ''অনেক সময় আমরা দেখেছি, চিকিৎসায় ভালো হয়ে বাড়ি যাবার পর আবার তারা মাদকে জড়িয়ে পড়ে। তাদের পরিবেশ, আসক্ত বন্ধুদের কারণে আবার তারা সেই পথে পা বাড়ায়। ফলে নিয়মিত ফলোআপের পাশাপাশি তার পরিবেশের পরিবর্তনও জরুরি।''

পরিবারের সহায়তা
পরিবারের কোন স্বজন মাদকাসক্ত হয়ে উঠলে অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা তাকে এড়িয়ে চলেন বা খারাপ ব্যবহার করেন।

ড. কোরেশী বলছেন, আসলে এ সময়টাতেই পরিবারের সহমর্মিতা তার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার। চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা তার ভুল পথে যাওয়া ঠেকাতে পারে।

কোথায় কী চিকিৎসা?
বাংলাদেশে সরকারিভাবে সীমিত পরিসরে আর বেসরকারিভাবে অনেক মাদকাসক্তি নিরাময় ক্লিনিক তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন বিষয়ক পরিচালক মোঃ মফিদুল ইসলাম বলছেন, দেশের চারটি বিভাগীয় শহরে সরকারি চারটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে খুবই কম খরচে চিকিৎসা করা হয়।

এছাড়া সরকারি তালিকাভুক্ত ২৩২টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে।

তবে ডাঃ আলী আসকর কোরেশী বলছেন, বেসরকারিভাবে কয়েক হাজার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর সাবেক মাদকসেবীরা নিজেরাই নিরাময় কেন্দ্র খুলেছেন।

তবে এখনো এ ধরণের সেবাটি ঢাকা এবং বিভাগীয় শহরকেন্দ্রিক।

মোঃ মফিদুল ইসলাম বলেছেন, দেশে যে সংখ্যক মাদকসেবী রয়েছে, সে তুলনা এরকম চিকিৎসা কেন্দ্র সত্যিই অপ্রতুল। তাই আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধ করেছি যেন, প্রতিটি জেলা শহরে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে মাদকাসক্তদের নিরাময়ে কয়েকটি বেড বরাদ্ধ থাকে।

মাদকাসক্তি নিরাময়ে খরচ
বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতাল গুলোয় মাদকাসক্তি নিরাময় একহাজার টাকার মধ্যেই পনেরো দিনের জন্য চিকিৎসা সম্ভব। এর মধ্যে থাকা ও খাওয়া অন্তর্ভুক্ত।

তবে বেসরকারি চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিমাসের জন্য ২০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকে। এর মধ্যে চিকিৎসা, ওষুধ, থাকা ও খাওয়া অন্তর্ভুক্ত।  সূত্র: বিবিসি বাংলা

এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ