আজকের শিরোনাম :

ছয় জেলায় বন্দুকযুদ্ধে ৮ ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ মে ২০১৮, ১০:৪১ | আপডেট : ২১ মে ২০১৮, ১০:৪৩

ঢাকা, ২১ মে, এবিনিউজ : যশোর, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নরসিংদী ও রাজশাহীতে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৮ জন নিহত হয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী। কারো কারো বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে মামলাও রয়েছে।

গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ও আজ সোমবার ভোরে মৃতদেহগুলো পাওয়া যায়।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধ এবং সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ বন্দুকযুদ্ধের এসব ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

যশোর : জেলায় পৃথক দুটি স্থান থেকে মাথায় গুলিবিদ্ধ ৩ যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা উদ্ধার হওয়ায় নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশ ধারণা করছে।

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা জানান, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে শহরতলির শেখহাটি ও খোলাডাঙ্গা এলাকায় দুদল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা শুনে পুলিশের দুটি দল ওই স্থান দুটিতে যায়। এ সময় শেখহাটির নওয়াব আলীর খেজুর বাগান নামক স্থান থেকে দুটি মৃতদেহ ও ৪০০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একই সময়ে শহরতলির খোলাডাঙ্গা মাঠের মধ্যে থেকে আরেকটি মৃতদেহ ও ১০০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাস্থল দুটি থেকে দুটি পিস্তল ও গুলির খোসা পাওয়া গেছে বলেও জানান ওসি।

টাঙ্গাইল : জেলার ঘাটাইলে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম আজাদ (৪২) নামের এক মাদক বিক্রেতা নিহত হন। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে র‌্যাব-১২-এর অভিযানের সময় দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আবুল কালাম আজাদ খান ঘাটাইল থানার পূর্ব পাকুটিয়ার বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে অবৈধ মাদকসংক্রান্ত প্রায় ছয়টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-১২ সিপিসি-৩-এর কোম্পানি কমান্ডার রবিউল ইসলাম জানান, ঘাটাইল এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানকালে চার থেকে ৫জন মাদক বিক্রেতা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে র‌্যাব সদস্যরাও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এতে মাদক বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ গুলিবিদ্ধ হন। পরে সেখান থেকে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, এক হাজার ৫০০টি ইয়াবাসহ মাদকসেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

ঝিনাইদহ : কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। তিনি হলেন মো. সবদুল ইসলাম। গতকাল দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পরই র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের তেমাথা নামক স্থানে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি চালায়। সেখানে উপস্থিত কর্তব্যরত র‌্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন সবদুল ইসলাম। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা দেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ একটি পিস্তল, গুলি ও দেশি অস্ত্র।

নরসিংদী : জেলার ঘোড়াশালে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ঈমান আলী নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে। 

ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি ও এক হাজার ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় দিকে ঘোড়াশাল টোল প্লাজার কাছে এ ঘটনা ঘটে।

র‌্যার-১১-এর কর্মকর্তা মো. আলেপ উদ্দিন জানান, মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে মাদকের একটি বড় চালান উদ্ধার করতে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলি হয়। এতে দুই মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ এবং র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হন।

চুয়াডাঙ্গা : জেলার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের সন্ন্যাসীতলা মাঠে গতকাল দিবাগত রাত ১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জোনাব আলী নামের একজন নিহত হন। তিনি মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, একটি বন্দুকের কার্তুজ ও এক বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয় বলে জানানো হয়েছে। নিহত জোনাব আলী (৩২) উথলী গ্রামের আমতলা পাড়ার বাসিন্দা।

পুলিশের দাবি, বন্দুকযুদ্ধে জীবননগর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিলন হোসেন, কনস্টেবল ওয়ালিদ রহমান এবং কনস্টেবল জুয়েল হোসেন আহত হয়েছেন। তাদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সহকারী পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) আহসান হাবীব জানান, রাতে ফেনসিডিলের একটি চালান আসার খবরে উথলী সন্ন্যাসীতলা মাঠে পুলিশের একটি বিশেষ দল অবস্থান করে। রাত ১টার দিকে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি দলকে আসতে দেখে পুলিশ তাদের চ্যালেঞ্জ করে। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় বন্দুকযুদ্ধে জোনাব আলী ও পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। আহতদের তাৎক্ষণিক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জোনাব আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।

জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান জানান, নিহত জোনাব আলীর বিরুদ্ধে জীবননগর, দামুড়হুদা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অন্তত ১১টি মাদকের মামলা রয়েছে।

রাজশাহী : পুঠিয়া উপজেলায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে লিয়াকত শিকদার নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে পুঠিয়ার বেলপুকুরের ক্ষুদ্র জামিরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

র‌্যাবের দাবি, নিহত লিয়াকত এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।

নিহত লিয়াকত শিকদার পুঠিয়ার বানেশ্বর ইউনিয়নের নামাজগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে থানায় ৮টি মামলা ছিল।

র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে পুঠিয়ার বেলপুকুরে মাদকবিরোধী অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে লিয়াকত শিকদারকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবাসহ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করার কথা জানায় র‌্যাব।

প্রসঙ্গত গত শনিবার দিনগত রাতেও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দেশের ৬ জেলায় ৬ জন নিহত হন। ময়মনসিংহ, ফেনী, বরিশাল, যশোর, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এ ঘটনা ঘটে। এসব ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৪ জন মাদক ব্যবসায়ী, একজন ডাকাত ও অপর একজনকে ছিনতাইকারী বলে দাবি করে পুলিশ।

দেশ থেকে মাদক নির্মূলের প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, জঙ্গি দমনের মতো মাদক ব্যবসায়ী দমনে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। আর এ দায়িত্ব মূলত দেওয়া হয়েছে র‌্যাবকে।

গত ১৪ মে র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর তারা মাঠে নেমেছেন। মাদকের বিরদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনের আগে ৩০ এপ্রিল কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, মাদকের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ