কাঠগড়ায় আসামির রক্তমাখা পোশাকের ছবি ভাইরাল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৫৪

আদালতের কাঠগড়ায় ‘রক্তমাখা পোশাক’ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক আসামির ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ওই আসামির পাশে ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকেও দেখা যায়। ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্টে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো দুজনকেই ‘ছাত্রনেতা’ দাবি করে ‘রক্তমাখা পোশাক’কে তাদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে দাবি করা হয়েছে।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ওই দুই জনের বিষয়ে পুলিশসহ আদালত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে এই প্রতিবেদক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার মামলায় আখতার হোসেনকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানিয়ে গত বুধবার আদালতে তোলে পুলিশ।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের বিচারক মামুনুর রশীদ এ আবেদনের শুনানি শেষে আখতারকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।

ওই আবেদনের শুনানির সময় কাঠগড়ায় আখতারের পাশে দাঁড়ানো আরেক তরুণ অন্য একটি মামলার আসামি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, আখতারের পাশে দাঁড়ানো তরুণের নাম শারুম আলম সিফাত। ফুলবাড়িয়া এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় তিনি গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন। এ কারণে তার আঙুলে ব্যান্ডেজ ও ট্রাউজার্সে রক্ত লেগে ছিল।

ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন বলেন, শাহবাগ থানার ছিনতাই মামলার আসামি শারুম আলম সিফাত রাস্তায় গণপিটুনির সময় নিজের কাছে থাকা ছুরি দিয়ে নিজের আঙুল কেটে ফেলেন। তবে আঘাত গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর পুলিশ তাকে বুধবার আদালতে তোলে। শারুম পুলিশের হেফাজতে নিজেই হেঁটে সেদিন কাঠগড়ায় ওঠেন বলেও দাবি করেন জাফর হোসেন।

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো আসামির রিমান্ড আবেদনকালে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। কোনো আসামিকে কাঠগড়ায় তোলা বা না তোলার নির্দেশের বিষয়টি পুরোপুরি ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ার।

‘সাধারণত পুলিশের হেফাজত থেকে কোনো অসুস্থ আসামিকে কোর্টে তোলার নিয়ম নেই। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হলেই আসামিকে কোর্টে তোলা হয়। কাউকে কোর্টে তোলার অর্থই হচ্ছে তিনি মেডিক্যালি ফিট।’

শারুমের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলার বাদি শাহবাগ থানার আওতাধীন বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের সামনে ঘোরাঘুরির সময় পুলিশকে দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন শারুম। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাকে ধরে ফেলে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় রিফাত নিজের কাছে থাকা ছুরিতে হাতের আঙুল কাটে। ছুরি দেখে ব্যবসায়ীরা আরও উত্তেজিত হয়ে তাকে পিটুনি দেয়।’

শারুমের সঙ্গে রাতুল নামে আরেক তরুণ ছিলেন, তবে তিনি পালিয়ে যান বলে জানান মিজানুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সহায়তায় আমরা রিফাতকে ছুরিসহ আটক করে থানায় নিয়ে আসি। রাতেই তার বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতুলকে ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হলেও তাকে ধরতে পারিনি।’

শারুমের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। তিনি ঢাকায় বংশাল এলাকার আনন্দবাজারের সেক্রেটারিয়েট রোডের একটি বাড়িতে থাকেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক ফারুক মণ্ডল বলেন, ‘১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করে ১৪ এপ্রিল রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে কোর্টে পাঠানো হয় রিফাতকে। তবে করোনার কারণে সেদিন শেষপর্যন্ত রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই শুনানি হবে। তাকে আপাতত কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।’

আসামির আঙুল কাটা থেকে শুরু করে তার চিকিৎসার সব বিষয় লিখিতভাবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

রক্তাক্ত পোশাকে শারুমকে কেন আদালতে পাঠানো হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামিকে যে অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেই অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। এখানে তার কোনো কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন তো দেখি না। যেভাবে পেয়েছি, সেভাবেই পাঠিয়েছি।’

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন বলেন, ‘রাস্তায় চোর, ছিনতাইকারী বা যে কোনো ধরনের অপরাধী গণপিটুনির শিকার হলে পুলিশ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্ধার করে। পরে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতে হাজির করা হয়।

‘অনেক সময় ছেঁড়াফাটা পোশাক বা রক্তমাখা পোশাক পরা অবস্থাতেই আসামিদের কাঠগড়ায় নিয়ে যেতে হয়। আসামিদের পোশাক বদলের সময় ও সুযোগ থাকে না। এ বিষয়ে আইনি কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।’

তিনি বলেন, ‘তবে অনেক সময় থানা বা পুলিশের হেফাজত থেকে কোনো আসামিকে কোর্ট হাজতে আনার পর শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা দৃশ্যমান জখম অথবা যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা গোচরীভূত হলে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পরামর্শে কোর্টের হাজতেই আসামির পোশাক বদল করা হয়ে থাকে। তারপর এজলাসের কাঠগড়ায় হাজির করানো হয়।’

কোর্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তার আগাম কোনো নির্দেশনা থাকে না, সেসব মামলার আসামিদের বাহ্যিক, শারীরিক কিংবা মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে তারা যত্নশীল থাকেন না। কাজেই কার পোশাকে কী লেগে আছে সেটা অনেক সময় লক্ষ্য করা হয়ে ওঠে না।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ