‘ইস্টিশনের রেলগাড়িটা’ আর কলকাতার আবেগ চিরন্তন
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৩০
দিন-রাতের টেস্ট। গোলাপি বল। আর ভরা ইডেনে আবেগের হিল্লোল। ক্রিকেটের মহামঞ্চে সুরের মূর্ছনা বইয়ে দিতে শহরে পৌঁছে গেলেন রুনা লায়লা। ভারতের মাটিতে প্রথম গোলাপি বলের টেস্টে বিরাট কোহলিদের মুখোমুখি হবে তাঁর দেশ। এমন এক ঐতিহাসিক ম্যাচের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত ৬৭ বছরের সুরসাম্রাজ্ঞী। প্রিয় সৌরভ গাঙ্গুলির কাছ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি তিনি।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। তিন দেশই তাঁর কাছে ভীষণ আপন। বাবা সৈয়দ মহম্মদ ইমদাদ আলি বাংলাদেশি হলেও, মা অনিতা সেন ছিলেন এপার বাংলার মেয়ে। আবার রুনার শৈশবেই কর্মসূত্রে তাঁর বাবাকে রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে যেতে হয়েছিল পাকিস্তানের মুলতানে। সেই সূত্রে পাকিস্তানেও কেটেছে তাঁর জীবনের অনেকটা সময়। তবে বাংলার সঙ্গে রুনার আবেগ অনেক গভীর। বর্তমান পত্রিকাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ঘুরেফিরেই বেজে উঠল এপার বাংলা সম্পর্কে তাঁর ভালোবাসার রাগ, যে সুরের ভেলায় ভেসে যাওয়ার অপেক্ষায় ক্রিকেটের নন্দন কানন। তিনি নিজেও দারুণ রোমাঞ্চিত। জানালেন, ‘ইডেনে ঐতিহাসিক দিন-রাতের টেস্টে উপস্থিত থাকতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। কলকাতায় আমি কত যে অনুষ্ঠান করেছি, তার ইয়ত্তা নেই। গত সপ্তাহেও এখানে একটা টেলিভিশন প্রোগ্রাম করে গিয়েছি। কিন্তু এই অনুষ্ঠানটা আমার চোখে ভীষণই স্পেশাল।’ কিংবদন্তি শিল্পী একটু থেমে যোগ করলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল যে, গোলাপি বলের টেস্টে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। কয়েক দিন পরেই পেলাম সৌরভ গাঙ্গুলির ফোন। দারুণ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম ওর সঙ্গে কথা বলে। সৌরভ শুধু ভারতের নয়, বাংলার নয়, গোটা বিশ্বের কাছে সম্মানীয় এক নাম। খেলার মাঠে যেমন ছিল, এখন মাঠের বাইরেও সেই দক্ষতায় কাজ করে চলেছে। ওর পরিচালিত একটি টিভি শোয়ে একবার অংশ নিয়েছিলাম। তখনই বুঝেছিলাম, মানুষ হিসেবে সৌরভ কত ভদ্র, কত অমায়িক। তাই ওর আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে উপায় ছিল না! তাছাড়া কলকাতায় আমার মামার বাড়ি। কত যে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এখানে। তাই আসাটা আমার কাছে সবসময়ই আনন্দের ব্যাপার।’
আট বছর আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন তিনি। আর এবার ইডেনে গোলাপি টেস্টের রাজসূয় আসরে সুরের আমেজ ছড়াতে তৈরি রুনা লায়লা। সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, দুটি বাংলা এবং একটি হিন্দি গান গাইবেন তিনি। সেই তালিকায় কি থাকবে আটের দশকে বাঙালির হৃদয়ে তোলপাড় তোলা ‘ইস্টিশনের রেল গাড়িটা...?’ শিল্পী এবার কিছুটা ফ্রন্টফুটে ডিফেন্স করলেন। ‘ওটা তো সিক্রেট। তবে ওই গানটা আমার জীবনের এক মাইলস্টোন বলতে পারেন। দেখা যাক কাল আরও একবার গাওয়া যায় কিনা!’ ক্রিকেট মাঠের অনুষ্ঠানে বারবার ফিরে এলেও খেলাটা নিয়মিত দেখার সুযোগ হয়ে ওঠে না বলেই জানালেন তিনি। তবে সময় পেলে খোঁজখবর রাখেন অবশ্যই। ‘বিশ্বকাপে লর্ডসে গিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ দেখেছি। এই ইডেন টেস্ট আমার কাছে খেলার চেয়েও অনেক বেশি কিছু। দুই বাংলা আরও একবার একাত্ম হয়ে উঠবে আবেগ ও উন্মাদনায়’, এক নিঃশ্বাসে বললেন রুনা।
বাংলাদেশের এই কিংবদন্তি গায়িকার সঙ্গেই ইডেনে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রসঙ্গে রুনা বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে দেখা হলে ভালো লাগবে। সেই সঙ্গে মমতাদির সঙ্গেও সাক্ষাতের অপেক্ষায় রয়েছি আমি। কয়েক বছর আগে উনি আমাকে বিশেষ সম্মান জানিয়েছিলেন। ওঁর ভালোবাসা ও আদরে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। আশা করি, এবারও অনেক ভালোবাসা তাঁর কাছ থেকে পাব।’ সূত্র: বর্তমান
এবিএন/মমিন/জসিম